সুন্নতি লেবাস তথা পোশাক-আশাক বলতে কি বুঝায়, তা বিশ্লেষণযোগ্য। সাধারণত মহানবী (সা.), তাঁর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবয়ে তাবেঈন এবং পরবর্তীকালে যুগে যুগে তাদের অনুসারী উলামায়ে হাক্কানী তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমাম, ফকীহ ও মোহাদ্দেসগণ এবং মাশায়েখ-আউলিয়ায় কেরাম যে পোশাক পরিধান করতেন এবং বর্তমানে মসজিদের ইমাম, খতিব, দ্বীনি আরবী মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক ছাত্রবৃন্দ এবং উলামা-মাশায়েখ যে লেবাস পরিধান করে থাকেন, তাই সুন্নতি লেবাস নামে পরিচিত। আরও জানা থাকা দরকার যে, মাশায়েখ ও সুফিয়ায়ে কেরামের মধ্যে এক শ্রেণীর সাধকের বিশেষ পোশাক প্রচলিত তা সুন্নতি লেবাস নয়, যার বিষদ বিবরণ ‘কাশফুল মাহজুব’ ও অন্যান্য গ্রন্থে রয়েছে। তাদের এ পোশাকের স্বরূপ একজন বিখ্যাত সাধকের একটি ঘটনা হতে জানা যায়। খলিফার দরবারে সমকালীন ওলামায়ে-কেরামের সমাবেশে তাকে যোগদান করার আহ্বান জানানো হয়, যেখানে ‘আনাল হক’ এর দাবিদার ‘মনুসর হাল্লাজ’ সম্পর্কে উলামায়ে-কেরাম তাদের রায় ব্যক্ত করবেন।
সাধক সাহেব সে সম্মেলনে যোগদান করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং তার পরিধানে সুফিদের যে বিশেষ ‘গুডড়ি’ ছিল তা তিনি বদলে নিচ্ছিলেন। এ পোশাক পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে জবাবে তিনি বললেন: মনসুর হাল্লাজের মতবাদ সম্পর্কে শরিয়তের দৃষ্টিতে ফতোয়া প্রদান করা হবে, সে মজলিসে এ গুডড়ি পড়ে অংশগ্রহণ করা যাবে না, সেখানে শরীয়তী পোশাক পরিধান করে শরিক হতে হবে। যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পোশাক হিসেবে পরিচিত। এটি ইতিহাসের ঘটনা। সুফী-সাধকদের এই শ্রেণির বিশেষ পোশাক এখানে আমাদের আলোচনা বহির্ভূত।
কেউ যদি ঘরোয়া পরিবেশে উল্লেখিত পোশাক পরিধান করতে (লোক দেখানো বা অহঙ্কার প্রদর্শনের জন্য নয়) অভ্যস্ত হয়, তা ভিন্ন কথা। তবে সাধারণভাবে ঘরোয়া পোশাক সুন্নতি পোশাক হতে হবে এমনটি জরুরি নয়, তবে শরীর ঢাকা জরুরি। সাধারণ কাজকর্মে অর্থাৎ ব্যবহারিক জীবনে সুন্নতি পোশাক পরাও জরুরি নয়।
মসজিদে গমন, ধর্মীয় মাহফিল মজলিসে যোগদান এবং জুমা ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য সুন্নতি পোশাক পরিধান করা উত্তম, তবে মসজিদের ইমাম, খতিব, মুফতী এবং ওলামা-মাশায়েখের ক্ষেত্রে ইসলামের সৌন্দর্য ও গর্ব-গৌরব প্রদর্শনের জন্য সুন্নতি পোশাক পরিধান করার গুরুত্ব অপরিসীম।
তাত্তি¡ক আলোচনা করতে গেলে সাধারণত লেবাস তথা পোশাককে দুই প্রকারে ভাগ করা যায়, জাহেরী (প্রকাশ্য) ও বাতেনী (অপ্রকাশ্য) দুই প্রকারের। জাহেরী পোশাক দ্বারা শরীর ঢাকা হয়। এ পোশাক সম্পর্কে বলা হয় যে, পুরুষ রেশমী পোশাক পরিধান করবে না এবং আচল দীর্ঘ করবে না (যা নিষিদ্ধ) এবং নারী খুব পাতলা পোশাক পরিধান করবে না, যাতে লোকেরা দেহ দেখতে না পায় এবং নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। বাতেনী পোশাক সম্পর্কে সূফিয়ায়ে কেরামের নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
বিভিন্ন হাদীস হতে জানা যায় যে, রসূল (সা.) সাধারণত সাদা পোশাক পছন্দ করতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে সাদা কাফনে দাফন করার নির্দেশ দিতেন। তিনি কোর্তা বা কামিজ পছন্দ করতেন। হুজুর (সা.) সামর্থবানদের উত্তম পোশাক পরিধানের পরামর্শ দিতেন। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন।
তিনি অহঙ্কার ও লৌকিকতা প্রদর্শনের (লোক দেখানো) পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করতেন এবং পোশাক আশাকের অপচয় করতে নিষেধ করতেন। সাহাবায়ে কেরামও টুপি-পাগড়ি এবং জামা-কাপড় পরিধানে তাঁর অনুসরণ করতেন। বস্তুত তারাই ছিলেন সুন্নতি লেবাসের প্রবর্তক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন