বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দেবতার নামে উট জবাই প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ করেন হজরত আলী রা.

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য কারো নামে (গায়রুল্লাহর নামে) পশু জবাই করা হলে সে পশুর গোশত খাওয়া ইসলাম হারাম করেছে। মুসলমান তা খেতে পারবে না। আরবের জাহেলি যুগে প্রচলিত নানা ‘বদ রসম’ বা কুপ্রথা, কুসংস্কার এবং অন্ধ বিস্বাসগুলোর মধ্যে একটি প্রথা ছিল ‘মোআকারাত’। এ প্রথা অনুযায়ী এক ব্যক্তি তার কিছু উট জবাই করত। দ্বিতীয় ব্যক্তি তার চেয়ে বেশি উট জবাই করত।
এভাবে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত এবং উটের পর উট জবাই হতে থাকত, এমনকি কয়েকশ’ উট পর্যন্ত জবাই করা হতো। যে ব্যক্তি সর্বাধিক উট জবাই করার রেকর্ড সৃষ্টি করত, তাকে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সাব্যস্ত করা হতো। আরবিতে এ প্রথার নাম ছিল ‘মোআকারাত’। হজরত আলী রা. এর খেলাফত আমলে এরূপ ‘মোআকারাত’ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
একবার কুফায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। লোকেরা শহর ছেড়ে বনে-জঙ্গলে চলে যায়। বিখ্যাত কবি ফারাজদাকের বাবা গালিব ছিলেন নিজ সম্প্রদায়ের নেতা। তিনি তার সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে কুফা থেকে একদিনের দূরত্বে অবস্থিত ‘বনু কালবের’ এলাকায় চলে যান। গালিব তার ভ্রাতৃ সম্প্রদায়ের জন্য একটি উট জবাই করেন।
খাবার প্রস্তুত হয়ে যায় এবং ‘বনু তামীমের’ কিছু লোকের জন্য তা হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করা হয়। একটি পাত্রে কিছু গোশত ‘সোহাইম’ নামক এক ব্যক্তির কাছেও পাঠানো হয়। সোহাইম তার ঘরানার জন্য একটি উট জবাই করে। দ্বিতীয় দিন গালিব দুইটি উট জবাই করেন। সোহাইমও দুইট উট জবাই করেন। তৃতীয় দিন গালিব তিনটি উট জবাই করেন। সোহাইমও তিনটি উট জবাই করেন। চতুর্থ দিন গালিব একশত উট জবাই করেন। সোহাইমের কাছে ওই সংখ্যক পশু না থাকায় তিনি কিছুই জবাই করেননি।
দুর্ভিক্ষের দিনগুলো শেষ হয়ে যায়। লোকেরা কুফায় ফিরে যায়। ‘বনু রিয়াহ’ সোহাইমকে বলল, ‘তুমি নিজের সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করেছ। সারা জীবন এ কলঙ্ক বহন করে চলতে হবে। গালিব যত উট জবাই করুন না কেন, আমরা তোমাকে প্রতিটি উটের পরিবর্তে দুইটি করে উট দিতাম।’ সোহাইম ক্ষমা চেয়ে বলল, ‘আমার কাছে তখন আর পশু ছিল না।’ অতঃপর তিনি তিনশ’ উট জবাই করে। উট জবাই করার এ প্রতিযোগিতা জাহেলি যুগের এক বিরল ও অভিনব ঘটনা।
তখন হজরত আলী রা. খলিফাতুল মুসলিমিন। উট জবাই করার এ প্রতিযোগিতার খবর তার কাছে পৌঁছে। তিনি নির্দেশ দিলেন যে, জবাইকৃত ওই উটের গোশত খাওয়া যাবে না। কেননা ওইসব পশু আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, গর্ব-গৌরব ও আত্মমর্যাদা প্রদর্শনের জন্য জবাই করা হয়েছে এবং গায়রুল্লাহর নামে জবাইকৃত ওইসব পশু হারাম। সুতরাং জবাইকৃত সমস্ত পশু কুফার দুর্গন্ধময় আবর্জনার স্ত‚পে নিক্ষেপ করা হয় এবং ওইসব শকুন, শিয়াল, কুকুর ও মুর্দার খোর পশুপাখির আহার হয়।
আমাদের দেশে উটের আধিক্য নেই, জবাই এর প্রতিযোগিতার কুপ্রথার কথাও অনেকের জানা নেই। তবে প্রতিদিন মুসলমানদের মধ্যে হাঁস-মুরগি, ভেড়া, গরু, ছাগল লাখো-কোটি জবাই করা হয়। কোরবানির সময় কোটি কোটি হালাল পশু কোরবানি করা হয়। সবাই শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে এসব পশু জবাই করে থাকে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এমতাবস্থায় হালাল বস্তুও হারাম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সরলপ্রাণ মুসলমানদের অজান্তে যেসব অসাধু হোটেল মালিক, কসাই, মরা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির হারাম গোশত ভক্ষণ করায় তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Amin Munshi ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 0
ইসলামে হালাল পশুপাখির গোশত খাওয়ার হুকুম রয়েছে, তবে তা আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা তা ভক্ষণ কর না, যা আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করা হয়নি, অবশ্যই এটা গুরুতর পাপ।’
Total Reply(0)
Ahmad Ali ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যা দেবতার নামে (বা উদ্দেশ্যে) বলি দেওয়া হয়েছে তা খেও না।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে জবাইকৃত নয়, এমন সব প্রাণী খাওয়া অপরাধ অথবা ইসলামের বিধানবহির্ভূত কাজ।
Total Reply(0)
Halim molla ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
মুসলমান কর্তৃক ভুলবশত আল্লাহর নাম না নিয়ে জবাই করলে তা খাওয়া বৈধ হবে কি
Total Reply(0)
moudud ahmed ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে কোরআন হাদিসের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
Jaker shek ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম নিয়ে যবেহ করা। উভয় প্রকার যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। জাহেলী আরবে জিনের উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ-এর রেওয়ায ছিল, যা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোন কোন মুসলিম দেশে চালু আছে। সে সময়ে কেউ বাড়ী ক্রয় করলে কিংবা তৈরী করলে অথবা কূপ খনন করলে তাদের উপরে জিনের উপদ্রব হতে পারে ভেবে পূর্বাহ্নেই তারা সেখানে বা দরজার চৌকাঠের উপরে প্রাণী যবেহ করত। এরূপ যবেহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।
Total Reply(0)
Rubel khan ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
কোন মুসলমানও যদি ইচ্ছেকৃত আল্লাহর নাম ছাড়া কোন পশু জবাই করেন, তাহলে তার জবাইকৃত গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়। ভুলে হলে ভিন্ন কথা।
Total Reply(0)
A. Kader ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। {সূরা মায়িদা-৩}
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন