বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারে না

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

কুরআন কারীম যেভাবে বিনয়, নম্রতা, ক্ষমা, অনুকম্পা ও উপেক্ষণের শিক্ষা দান করে, তেমনিভাবে যথাস্থানে বীরত্ব, বাহাদুরি ও সাহসিকতা প্রদর্শনেরও দীক্ষা দেয়। উদাহরণত সত্য ও মিথ্যা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের সংগ্রামের ক্ষেত্রে কুরআন মাজিদ তার অনুসারী ও মান্যকারীদের লৌহপুরুষের মতো পরিপূর্ণ বীরত্ব ও দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দান করে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তার সে সমস্ত বান্দাকে ভালোবাসেন, যার তার পথে কাতারবন্দী হয়ে এমনভাবে যুদ্ধ করে, যেন তার একটি সীসাঢালা প্রাচীর।’ (সূরা সফ : আয়াত ৪)। অন্য আরেক জায়গায় রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবায়ে কেরামের সে ঈমানি শক্তি ও বীরত্বের আলোচনা বিশেষ প্রীতি ও প্রশংসার ভঙ্গিতে করা হয়েছে। যখন তাদেরকে প্রভাবিত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য এ সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, তোমাদের শত্রুপক্ষ তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার উদ্দেশে বিপুল আয়োজন করেছে এবং বিরাট সমরোপকরণ সংগ্রহ করেছে, তখন তারা আদৌ প্রভাবিত ও সন্ত্রস্ত হয়নি। বরং তারা তাতে করে তাদের ঈমানি শক্তি অধিকতর শাণিত হয়ে উঠে।
তারা বলে, আমাদের জন্য আমাদের আল্লাহই যথেষ্ট। এসব কিছু আমরা দেখে নেবো। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমার সে সমস্ত ঈমানদার বান্দা যাদেরকে লোকেরা বলল, (তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য) সমস্ত লোক সমবেত হয়েছে এবং তারা বিপুল উপকরণ সংগ্রহ করে নিয়েছে। তাদের প্রতি তোমাদের ভীত হওয়া প্রয়োজন। তখন এ বিষয়টি ঈমানি অবস্থা অধিকতর দৃঢ় করে দেয় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ও উত্তম কর্ম সম্পাদক।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭৩)।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় উপলক্ষণীয় যে, মৃত্যুর ভয় কিংবা কোনো কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা এমন বিষয়, যা সাহসিকতা ও সৌর্য বীরত্বের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষকে ভীরু বানিয়ে দেয়। কুরআন মাজিদ ভীরুতার এ মূলটিকেও উপড়ে ফেলেছে। বিভিন্ন স্থানে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যুর জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। সে সময় উপস্থিত হয়ে গেলে কেউ বাঁচাতে পারে না। আর যদি সে সময় তখনো না আসে, তা হলে কেউ মারতেও পারে না।
এমনিভাবে নানা জায়গায় বলা হয়েছে, কোনো কষ্ট বা ক্ষতিসাধন করা না করা একান্তভাবেই আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ পর্যন্ত তার ইচ্ছা ও হুকুম না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমাদেরকে কষ্ট দিতে ও ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর যখন তার পক্ষ থেকে হুকুম হবে, তখন কেউ আমাদেরকে কষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষাও করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গেও এখানে দু’চারটি আয়াত পাঠ করে নিন। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৪৫)। অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে (ঠিক নির্ধারিত সময়ে তুলে নেয়া হবে)। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৪৯)।
এমনিভাবে অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কোনো বিপদই আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত ১১)। সূরা তওবায় ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসূল বলে দিন, কখনো আমাদের কোনো বিপদ আসতে পারে না, তা ছাড়া যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের মালিক। আর যারা ঈমানদার তাদের সব কাজই আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা উচিত। (সূরা তওবাহ : আয়াত ৫১)।
লক্ষ করার বিষয় যে, যাদের অন্তরে এ শিক্ষা বদ্ধমূল হয়ে যাবে, তাদের ভীরুতার অবকাশ কোথায় থাকতে পারে এবং শৌর্য ও সাহসিকতার পথেই বা তাদের জন্য কি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Zulfiqar Ahmed ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪১ এএম says : 0
আল্লাহ জীবন এবং মৃত্যুর মালিক।তিনিই সকল ক্ষমতার উত্‍স। তিনি চাইলেই সব পারেন,কোন উছিলা লাগেনা।হযরত ইব্রাহীম (আ)কে ৪০দিন পর্যন্ত জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে লালন পালন করেছিলেন,আগুন তাঁর একটা পশমও পুড়ে নি।ইউনুস (আ)কে বিশাল সামুদ্রিক মাছের পেটের মধ্যেও জীবিতরেখেছিলেন।আল্লাহ অনাদি অনন্ত।তিনিতখনও ছিলেন এখনও আছেন।আল্লাহর এরকম ক্ষমতা যে বিশ্বাস করে না,সে নাস্তিকএবং কাফের।
Total Reply(0)
কাজিম উদ্দিন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
প্রাণী মাত্রই মরবে। জন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দু’টির কোনটির ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। আল্লাহর হুকুমেই জন্ম হয়। আল্লাহর হুকুমেই মৃত্যু হয়। কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেই। জীবনের সুইচ তাঁরই হাতে, যিনি জীবন দান করেছেন
Total Reply(0)
Amin Munshi ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৭ এএম says : 0
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)।
Total Reply(0)
Rubel khan ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৮ এএম says : 0
দুনিয়ার এ চাকচিক্যে আমরা পরকালকে ভুলে যাই। অথচ নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল শেষে আমাদের সেখানে যেতেই হবে। কেউ আমাকে জগত সংসারে ধরে রাখতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاًّ...- ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না। সেজন্য একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে...’ (আলে ইমরান ৩/১৪৫)।
Total Reply(0)
HM kaber Shek ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৯ এএম says : 0
আল্লাহ বলেন ,أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ ‘যেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর’ (নিসা ৪/৭৮)।
Total Reply(0)
Amdad ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫০ এএম says : 0
‘শোন হে সুউচ্চ প্রাসাদে বসবাসকারী! + সত্বর তুমি দাফন হবে মাটিতে’। ‘ইহকালে আমরা আমাদের জীবনের অল্প সময়ই কাটিয়ে থাকি + আর আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল হ’ল মাটির ঘরে (কবরে)’।
Total Reply(0)
Tarikul Islam ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫১ এএম says : 0
হযরত ওছমান গণী (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কাঁদতেন। যাতে দাড়ি ভিজে যেত। তাঁকে বলা হ’ল জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে আপনি কাঁদেন না, অথচ কবরে এসে কাঁদেন? জবাবে তিনি বলেন, কবর হ’ল আখেরাতের প্রথম মনযিল। যদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহ’লে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর এখানে মুক্তি না পেলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, কবরের চাইতে ভীতিকর দৃশ্য আমি আর দেখিনি।[
Total Reply(0)
Rashed Khan ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
বাড়ী-গাড়ী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরো কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবে। বিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবে। জীবনের সকল আশা ও আকাংখা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। সকল হাসি সেদিন কান্নায় পরিণত হবে। মানুষ তাই মরতে চায় না। সর্বদা সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়।
Total Reply(0)
Manir Ahmed ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 0
নেক আমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণ। অতএব সর্বদা নেক আমলের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করা উচিত। কেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারে। আর সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায়।
Total Reply(0)
Shaker Abdullah ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৪ এএম says : 0
আসুন! আমরা মৃত্যুর আগেই সাবধান হই। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর জান্নাতী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৩ এএম says : 0
সোবহানআল্লাহ।
Total Reply(0)
রিপন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:২৭ পিএম says : 0
জুলুম নিপীড়ন চুরি-চামারি রাজ্যের আকাম-কুকাম করে করে নিরীহ গণমানুষের জীবন যখন অতীষ্ঠ করে দেয়া হয়, বাসন্তীরা যখন মাছ ধরার জাল পরে লজ্জা নিবারণে বাধ্য হয়, বাংলার হতদরিদ্র নারী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে মরে, টাকার অভাবে ঠাঁই পায় না, তারপর রাস্তাতেই প্রসব করতে বাধ্য হয়, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হরির লুটের ভোগ খেয়ে খেয়ে পোয়াতীর মতো ভূঁডি বাগিয়ে, মাকুন্দা চেহারা করে করে বলে বেড়ায় দ্যাশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মচৎকার, ভালো, মানুষ যখন হররোজ হরপল বলতে থাকে, এই ইতর জানোয়ারের পাল কবে মরবে, তখন একসময় আল্লাহর হুকুম জারি হয়ে যায়, একদার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও কাজে আসে না। আজরাইল হাজির হয়ে যায়, জান কবজ করে নেয়। ক্ষেত্রবিশেষে গুষ্টিসুদ্ধ সাফ করে দেয়। কারণ গুষ্টির রক্তধারায়, জিনে রয়েছে ফ্যাসিজমের অজগর-কোড। সুযোগ পেলে দংশনই সর্পধর্ম। মউত আল্লার হুকুমেই হয়ে থাকে। আল্লাহ হুকুম দেবেন না কেন? একবার ভাবুন তো, মৃত্যু না থাকলে জালিম তার জুলুম চালিয়েই যেত, মজলুম খালি জুলুমের শিকার হতেই থাকতো। জীবন ধারণের প্রতিকূল অমন অসহনীয় পরিবেশ থেকে মুক্তি দিতেই মৃত্যু। আল্লাহ পরম দয়ালূ। অমন ব্যবস্থা জারি রেখে হালাল জীবিকা অন্বেষীদের পরিত্রাণের পথ খোলা রেখেছেন, যুগপৎ জান্নাত অভিমুখে অভিযাত্রার পথও খুলে দিচ্ছেন। ঈমানদার সৎকর্মশীলদের জন্যে মৃত্যু, - জান্নাতের পথপরিক্রমায় এক সেতুবন্ধন মঞ্জিল!
Total Reply(0)
এম.এ.মালেক ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:২১ পিএম says : 0
মৃত্যু আল্লাহর হাতে,তবে মানুষ তার কর্মের জন্য দায়ী।।
Total Reply(0)
habibur ১৮ মার্চ, ২০২০, ৪:৪২ পিএম says : 0
আল্লাহ যা চান তাই করেন এই বিশ্বাস রাখার নাম হলো ইমানের পরিচয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন