বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলাম ধর্মে জবরদস্তি নেই

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

তা এমন একটি হাকিকত যার আওয়াজ বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেয়াল ও দরজা হতে উত্থিত হচ্ছে যে, ধর্মে জবরদস্তি থাকতে পারে না। কিন্তু হয়তো মানুষ এ কথা জানে না যে, এ হাকিকতের ঘোষণা সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সা. জবান মোবাররক হতে উত্থিত হয়েছিল এবং এ কথাও সুস্পষ্ট যে, যে ধর্ম নিজের প্রচার ও প্রসারের জন্য শুধু কেবল দাওয়াত ও তাবলীগের পথ খোলা রেখেছে যার মাঝে তাবলীগের নিয়ম-নীতি বলে হয়েছে। যে ধর্ম জ্ঞান, পথ নির্দেশনা, দূরদৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা ও গবেষণাধর্মী বস্তুসমূহ মানুষের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে চায় এবং প্রতিটি কদমে বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা এবং হেকমত ও মুসলিহাতের বিকাশ চায়, তা কিভাবে নিবর্তণমূলক জুলুম, অত্যাচার, নিগ্রহ ও জবরদস্তির তরিকা অবলম্বন করতে পারে? ইসলামী দর্শনে জবরদস্তির কোনো নাম-গন্ধও পরিদৃষ্ট হয় না। ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক ধর্মীয় ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। ঈমান হচ্ছে বিশ্বাসের নাম। দুনিয়ার কোনো শক্তি কাহারো অন্তরে জবরদস্তি দ্বারা বিশ্বাসের একটি অণু-পরমাণুও সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি তরবারীর তী² ধার কারো অন্তরের পর্দায় বিশ্বাসের একটি অক্ষর অঙ্কন করতে পারে না। এ কারণে আল কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই। অবশ্যই হেদায়েত গোমরাহি থেকে পৃথক হয়ে গেছে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩৪)। এ হলো এমন মর্যাদাপূর্ণ হাকিকত যার শিক্ষা মানুষ রাসূলুল্লাহ সা. দ্বারা লাভ করেছে। অপর এক স্থানে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘বলে দাও, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতেই আগমন করেছে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে বিশ্বাস স্থাপন করুক, আর যে ইচ্ছা করে সে অস্বীকার করুক।’ (সূরা কাহাফ : রুকু ৪)।
ঈমান এবং কুফর ও দু’য়ের মাঝে কোনো একটিকে ইখতিয়ার করার ওপর কোনোরকম জবরদস্তি নেই। জ্ঞান ও দূরদৃষ্টির অধিকারী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই তা গ্রহণ করবে এবং বুদ্ধিহীন লোকেরা তা হতে বঞ্চিত থাকবে। এ জন্য বারবার এ কথাটি সুস্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, রাসূলের সা. কাজ হলো আল্লাহর পয়গাম মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া। জবরদস্তি প্রদর্শন করা নয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমাদের রাসূলের ওপর দায়িত্ব হলো পয়গামকে সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।’ (সূরা মায়িদা : রুকু-১২)। রাসূলুল্লাহ সা. কোরাইশদের বিরুদ্ধবাদিতা অস্বীকৃতির দরুণ খুবই চিন্তান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহপাক সান্তুনা দান করে ইরশাদ করলেন, ‘হে রাসূল, আপনার দায়িত্ব হচ্ছে পয়গাম পৌঁছে দেয়া’ (সূরা শো’বা : রুক-৫) কোনো জবরদস্তিমূলক প্রচার ও প্রসার করাকে ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ঘৃণ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাসূলের শাণ ও মর্যাদা এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে অবস্থিত। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করেন যে, জবরদস্তিমূলক সকল মানুষকে ঈমান আনয়নে বাধ্য করবেন, তা হলে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। তবে কি হে রাসূল, আপনিও জবরদস্তি করবেন যেন তারা ঈমান আনয়ন করে। (সূরা ইউনুস : রুকু-১০)। ইসলামে সত্যের সহযোগিতা করা এবং বাতিলকে পরাস্ত করার জন্য যুদ্ধ করা বৈধ। রাসূলুল্লাহ সা.কে বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এর ফলে বিরুদ্ধাবাদীরা এই পরিণাম উপলব্ধি করেছিল যে, এই যুদ্ধ-বিগ্রহ কেবলমাত্র এ জন্য সংঘটিত হয়েছিল যে, ইসলামকে তরবারীর জোরে মানুষের মাঝে সম্প্রসারিত করা। অথচ কুরআনুল কারীমে একটি আয়াতও নেই যার মাঝে কোনো কাফিরকে জবরদস্তি মুসলমান বানানোর হুকুম দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. পবিত্র জীবনাদর্শের কোথাও এমন কোনো ঘটনা যেখানে কোনো লোককে তরবারীর জোর-জবরদস্তি করে মুসলমান বানানো হয়েছে। বরং এ সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘সে আল্লাহর কালাম শুনতে পাবে। তারপর তাকে ওই স্থানে পৌঁছে দাও যেখানে সে একান্ত নির্ভয় হবে। তা এ জন্য যে, তারা একটি মূর্খ সম্প্রদায় মাত্র।’ (সূরা তাওবাহ : রুকু-১)। একথা বলা হয়নি যে, যতক্ষণ তারা মুসলমান না হবে তাদেরকে আশ্রয় দিও না। বরং বলা হয়েছে যে, তাকে আশ্রয় দেবে, তাকে নিরাপদ স্থান পর্যন্ত পৌঁছে দেবে এবং আল্লাহ কালাম তাকে শোনাতে থাকবে, যাতে করে সে চিন্তা ও গবেষণা করার সুযোগ লাভ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
আমিন মুন্সি ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কর্তৃক মনোনীত চূড়ান্ত জীবন বিধান হলো ইসলাম। যা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও কল্যাণের জীবন ব্যবস্থা দিয়ে মনোনীত করেছেন। যে কারণে ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কাউকে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের ২৫৬নং আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন- ‘দ্বীনের (ইসলামি জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণের) ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এ যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকাড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং জানেন।’
Total Reply(0)
মনির হোসেন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৬ এএম says : 0
ইসলাম হলো চিরন্তন, সুন্দর ও কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থা। যারাই ইসলামকে সুদৃঢ়ভাবে গ্রহণ করে; তাঁরাই দুনিয়া ও পরকালের ধ্বংস ও প্রবঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
Total Reply(0)
জয়নাল আবেদীন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৬ এএম says : 0
ইসলাম গ্রহণের (ঈমানের) সম্পর্ক বাহ্যিক অঙ্গ-প্রতঙ্গের সঙ্গে না হওয়ায় জোর-জবরদস্তি করে ঈমান গ্রহণ করানোর কোনো সুযোগই নেই। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম গ্রহণে বল প্রয়োগ সম্ভবও নয়। কারণ ঈমানের সম্পর্ক বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে নয়; তাহলো মনের সঙ্গে। তাই ইসলামের সৌন্দর্য ও উত্তম আদর্শগুলোই মানুষকে ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। এটাই ইসলামের প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম।
Total Reply(0)
নাজিরুল ইসলাম ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৬ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের সৌন্দর্য ও উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলো যথাযথ পালন করার মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
আলাউদ্দিন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
ইসলামের সঙ্গে জোরজবরদস্তি, বলপ্রয়োগ, নিপীড়ন, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ প্রভৃতির কোনই সম্পর্ক নেই। এসবই ইসলামবিরোধী কর্মকা-। কেননা দীন বা ধর্ম নির্ভর করে বিশ্বাস ও আন্তরিক ইচ্ছার ওপর। বলপ্রয়োগ করে কাউকে প্ররোচিত করা বা রাজি করানো ইসলাম সমর্থন করে না। ফিত্না-ফাসাদ, ঝগড়া-বিবাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রভৃতি সৃষ্টি করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ইসলামে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এসবের জন্য ইসলামে সুনির্দিষ্ট শান্তিবিধান রয়েছে, এমনকি মৃত্যুদ-েরও বিধান রয়েছে।
Total Reply(0)
কাবের আলী ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
ধন্যবাদ লেখককে। আল্রাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন।
Total Reply(0)
Amirullah Meher ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৯ এএম says : 0
কোন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে হারাম ঘোষণা করে ইরশাদ হয়েছে : কেউ একজন মানুষকে হত্যা করল, সে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল; কেউ একজনের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করল (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩২)। যারা সন্ত্রাসবাদী তারা ইসলামের দুশমন, তারা শয়তানের অনুচর, তারা পথভ্রষ্ট।
Total Reply(0)
Nurul Amin ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৯ এএম says : 0
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। অর্থাৎ কোন কাফির বা বিধর্মীকে ঈমান গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না বা জোর করে মুসলমান বানানো যাবে না।
Total Reply(0)
সাইফ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৭ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ পাক জনাব মুন্সি সাহেবকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট কেও। উত্তম এই লেখার জন্যে এবং প্রকাশ করার জন্যে আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন