বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলাম প্রচারকের জন্য যা দরকার

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নরম ও প্রাণস্পর্শী বাক্য : দার্শনিক দলিল প্রমাণ হোক, অথবা ওয়াজ নসিহত হোক, অথবা বিতর্ক ও মোনাজারা হোক, এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে এই যে, আহ্বানকারী নম্রতা ও সদাচারের মাধ্যমে যেন কথা বলে। রুঢ়তা ও কঠোরতা সুলভ পন্থা অবলম্বন করলে অন্যের অন্তরে ঘৃণা এবং শত্রুতার অনুপ্রেরণা পয়দা করে, চাই তা যতই ভালো এবং যতই সত্য হোক না কেন। কিন্তু এই শ্রেণীর অনুপ্রেরণা তা গ্রহণ করার যোগ্যতা তার নিকট হতে দূরীভ‚ত করে দেয় এবং শ্রবণকারী মাঝে স্বীয় ভুলের জন্য জিদ এবং অনড়ভাব পয়দা করে নেয়া। যার ফলে আহ্বানের উপকারিতা এবং নসিহতের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে নিষ্প্রভ হয়ে যায়। এ জন্য কুরআনুল কারীম স্বীয় পয়গাম্বরদেরকে বিরুদ্ধবাদী দুশমনদের সাথে বিনম্র ও প্রাণস্পর্শী ভাষায় কথাবার্তা বলার তাকিদ করেছেন। হযরত মূসা আ. ও হযরত হারুন আ.কে ফেরাউনের মতো দুষ্টমতির সামনে পয়গামে ইলাহি নিয়ে যাওয়ার হেদায়েত দেয়া হয় এবং সাথে সাথে এই ইরশাদও করা হয়, ‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও, সে অবিশ্বাস ও বিরুদ্ধাবাদিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে, তার সাথে নরম ও সহিষ্ণুতার সাথে কথাবার্তা বলবে, হয়তো সে নসিহত কবুল করবে অথবা আল্লাহকে ভয় করবে।’ (সূরা ত্বাহা : রুকু ২) দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে নম্রতা ও সহৃদয়তা এবং প্রেম ও ধৈর্যের এর চেয়ে উত্তম উদাহরণ আর কী হতে পারে? এমনকি কোনো আহ্বানকারী ও নসিহতকারী পয়গাম্বরদের থেকে উত্তমও হতে পারে। তা ছাড়া ফেরাউনের চেয়ে অধিক বড় অপরাধীও কেউ হতে পারে না। তারপরও এমন কট্টর অপরাধীর সামনে এহেন নম্রতা ও স্নেহ-মমতাসুলভ ওয়াজ এবং নসিহতের হুকুম ও তালিম যখন পয়গাম্বরদের দেয়া হয়েছে, তখন সাধারণ আহ্বানকারী, মুবাল্লিগ এবং ওয়াজকারীদের সাধারণ বিরুদ্ধবাদীদের, অপরাধীদের এবং দুই দুরাচারদের সাথে উত্তম ব্যবহার ও আচরণ করা এবং নম্রতা প্রদর্শন অবশ্যই কর্তব্য। সুতরাং তাদের উচিত এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
ক্ষমাসুন্দর ও দৃষ্টি মার্জিত কথা : যে সকল মুনাফিক নাফরমানীর কারণে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হয়েছিল, মহান আল্লাহপাক তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা.কে নির্দেশ করেছেন, ‘তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তাকান, তাদেরকে নসিহত করুন এবং তাদের সাথে এমন কথা বলুন, যা তাদের প্রাণস্পর্শী হয়।’ (সূরা নিসা : রুকু ৯) এই তালিমে তিনটি হেদায়াত আছে। প্রথমত, দাওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপারে বিরুদ্ধবাদীদের দুর্ব্যবহার বরদাস্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদেরকে নসিহত করতে হবে, বুঝাতে হবে। তৃতীয়ত, কথা বলার বাচনভঙ্গীকে প্রাণস্পর্শী করে তুলতে হবে। যেন সহজেই তা তাদের অন্তরের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পারে।
নমনীয়তা ও শুভ সংবাদ : আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াতের বিকাশ ও পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে নমনীয়তা ও শুভ সংবাদ প্রদান একটি উত্তম পন্থা। রাসূলুল্লাহ সা. হযরত মোয়াজ বিন জাবাল রা. এবং হযরত আবু মূসা আশয়ারী রা.কে ইয়েমেনে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য মনোনীত করেন এবং তাদেরকে বিদায় দেয়ার সময় এই নসিহত করেন, ‘তোমরা সহজ সরল ও নমনীয় ব্যবহার করাবে, কখনো কঠোরতা অবলম্বন করবে না এবং তোমরা সেখানকার অধিবাসীদের শুভ সংবাদ দেবে। কোনোক্রমেই তাদের সাথে বিরক্তিকর কোনো পদচারণা করবে না। দ্বীনে ইলাহিকে সহজ ও নমনীয়তার সাথে মানুষের মাঝে শুভ সংবাদের বাণী পৌঁছাতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবীদের সামনে এবং সাহাবীগণ সাধারণ মুসলমানদের সামনে এই নিয়ম-নীতি মোতাবেক দ্বীনে ইলাহিকে পেশ করেছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। ধর্মের সহজ ও সরলতাকে প্রকাশ করা এবং তাকে কঠিন ও মুশকিল হিসেবে উপস্থাপন না করার মাঝেই রয়েছে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্যতার মর্মকথা। একই সাথে আল্লাহপাকের দয়া, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণা এবং স্নেহ ও মায়ার প্রাণবন্ত অনুরাগ সম্পর্কে মানুষের মনে সুদৃঢ় আশার সঞ্চার করা এবং মানুষকে প্রসন্ন চিত্তের অধিকারী করা ও ভীতির উল্লেখ করলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বীতশ্রদ্ধ ও নিরাশ হয়ে পড়ে। তাই তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজে আল্লাহর দেয়া বিধানসমূহ অনুসরণ করা একান্ত অপরিহার্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
আমিন মুন্সি ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
যদি তোমার রব চাইতেন, তবে সকল মানুষকে এক উম্মতে পরিণত করতেন, কিন্তু পরস্পর মত বিরোধকারী রয়ে গেছে, [সূরা হুদ, আয়াত: ১১৮]
Total Reply(0)
Shafiqul Islam ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
একজন আলেমের দায়িত্ব আর যে আলেম নয়, তার দায়িত্ব এক হতে পারে না। যারা আলেম নয় তাদের দায়িত্ব হল, জানার জন্য তারা আলেমদের নিকট জিজ্ঞাসা করবে, আর আলেমদের দায়িত্ব হল, তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে। মোট কথা ব্যক্তির ধরনের উপর নির্ভর করে, তাদের দায়িত্বও বিভিন্ন হয়ে থাকে। বর্তমান যুগে একজন আলেমের দায়িত্ব হল, সে তার ক্ষমতা অনুযায়ী মানুষকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেবে। আর যে আলেম নয়, তার উচিত হল, তার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা অথবা যে দায়িত্বশীল তাকে তার স্ত্রী সন্তানরা তাদের অজানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। যখন উভয় শ্রেণীর লোক তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করবে, তখন তারা নাজাত পাবে।
Total Reply(0)
Amdad ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৪ এএম says : 0
আমরা অত্যন্ত দু:খের সাথে বলছি বর্তমানে আমরা এমন এক দূরাবস্থার মধ্যে বসবাস করছি, ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা হল, মুসলিমদের বিরুদ্ধে অমুসলিম কাফেরদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ হাদীসে এর ভবিষ্যৎ করে বলেন, “বিজাতিরা তোমাদের বিপক্ষে একে অপরকে ডাকাডাকি করবে, যেমনটি খাওয়ার দস্তরখানের দিকে একে অপরকে ডাকাডাকি করে, তারা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আমাদের সংখ্যা কম হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম না, সেদিন তোমাদের সংখ্যা কম হবে না, বরং তোমাদের সংখ্যা সেদিন বেশি হবে, তবে তোমরা বন্যার পানিতে ভাসমান খড়-কুটার মত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়কে ছিনিয়ে নিবে। আর তোমাদের অন্তরে ওহানকে ঢেলে দেবে। তারা জিজ্ঞাস করল, হে আল্লাহর রাসূল ওহান জিনিসটি কি? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়।
Total Reply(0)
রিপন ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৫ এএম says : 0
একজন মুসলিমের উপর ওয়াজিব হল, তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধ্যমত আল্লাহর বিধানের বাস্তবায়ন করা। সুতরাং মনে রাখতে হবে, মুসলিমের উপর ওয়াজিব হল, তার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করা। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাউকে তার ক্ষমতার বাহিরে কোন কিছু্র দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৬ এএম says : 0
ইসলাম একটি বিশ্বজনীন শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এ শান্তির ধর্মের প্রচার-প্রসারের একমাত্র উপায় হলো দাওয়াত। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা যেসব নবী-রাসুল (আ.) প্রেরণ করেছেন, তাদের সবার কাজ ছিল এ সত্য ধর্মের প্রচার, সত্যের বাণী সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছানো। নবীর উত্তরসূরি হিসেবে একজন মুসলিমের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হলো, ‘ইসলামের দাওয়াত দেয়া।’ সত্যের বাণী তথা কোরান-হাদিসের বাণী নিজেরা সঠিকভাবে জানা, মেনে চলা এবং অপরের কাছে তা পৌঁছে দেয়া। এটাই হওয়া উচিত দাওয়াতের মূল কৌশল।
Total Reply(0)
করিম শেখ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৭ এএম says : 0
ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিজ্ঞান ও শিল্পসম্মতভাবে শৈল্পিক উপস্থাপনায় ইসলামের মহিমা অন্যের সামনে তুলে ধরা, যাতে তারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার দিকে আকৃষ্ট হয়। সাধারণত কোরান-সুন্নাহর বাণী সঠিকভাবে জানা থাকলে অপরকে ভালো কাজের প্রতি আহ্বান এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলা সম্ভব। তবে দাওয়াত প্রদানকারীর আরো কিছু গুণ থাকা আবশ্যক। এ জন্য ইসলামী জ্ঞানের নানাবিধ শাখায় তার দক্ষতা-যোগ্যতা থাকা দরকার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন