মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অহঙ্কারী মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অহঙ্কার প্রকাশের একটি সুনির্দিষ্ট আচরণ নির্ণয় করেও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত আবু হুরায়রা রাজি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পূর্বযুগে) একজন লোক ছিল, যে উন্নতমানের এক প্রস্থ পোশাক পরে চলছিল, যা তাকে আত্মম্ভরিতায় নিমজ্জিত করেছিল। মাথা ছিল চিরুনিকৃত, সে পথ চলছিল দাম্ভিকতার সাথে। ঠিক তখন আল্লাহ তাকে ভ‚মিতে দাবিয়ে দিলেন। লোকটি কিয়ামত পর্যন্ত মাটিতে ধসতেই থাকবে, ধসতেই থাকবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
অপর একটি হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রাজি. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি করুণার নজরে তাকাবেন না, যে তার লুঙ্গি-পায়জামা-প্যান্ট অহঙ্কারবশত টাখনুর নিচে পরিধান করে’। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
এ দুটো হাদিসের প্রথমটিতে উন্নতমানের পোশাক পরাকে নয়, বরং পোশাকের বা সাজসজ্জার কারণে দাম্ভিক হয়ে উঠে বা অহঙ্কার প্রদর্শন করাকে মারাত্মক অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য পাপ বলে বোঝানো হয়েছে। মাশাআল্লাহ, আমরা অনেকেই হয়তো এহেন পাপচিন্তা ও অন্যায় অভ্যাসে আক্রান্ত নই। কিন্তু আমাদেরই মাঝে এ ধরনের সাজ-পোশাক ও ঠাটপাট নিয়ে আত্মম্ভরিতায় ভোগের লোকের সংখ্যা নেহাত কমও নয়।
আসলে অহঙ্কার তো পোশাকে নয়, অন্তরেই বাসা বাধে। আর অন্তরের অহঙ্কার ও দম্ভই মানুষের পোশাকে, আচরণে প্রকাশ পেতে থাকে। সাধ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী হালালভাবে উপার্জিত দামি-সুন্দর পোশাক পরতে নিষেধ নেই; যদি তা অপব্যয়ের পর্যায়ে বা অহঙ্কারের উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে। বস্তুত হাদিসে বর্ণিত ব্যক্তির সাজ-পোশাক নয়, আত্মম্ভরিতাই তাকে আল্লাহর গজবে নিপতিত করেছে।
দ্বিতীয় হাদিসটিতেও লুঙ্গি-পায়জামা-প্যান্ট টাখনুর নিচে পরিধানের কথাটির সঙ্গে ‘অহঙ্কারবশত’ শর্তটি জুড়ে রয়েছে। কেননা, শত সতর্কতার মাঝেও কখনো কারো টাখনুর নিচে কাপড় নেমে যেতে পারে। এ কাজ মনের ভুলে বা অনিবার্য প্রয়োজনে বা পোশাকের আকার-আকৃতি ও ধরনের কারণেও হতে পারে। যদি এ রকমটি কারো সাথে নিয়মিত বা স্থায়ীভাবে না দেখা যায়, বরং মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে তবে তাকে এ হাদিসের উদ্দেশ্যকৃত ব্যক্তি বলে গণ্য না করাই উচিত হবে।
কারণ, এ আচরণের সঙ্গে অহঙ্কারের শর্ত রয়েছে। কাজেই আমরা যেন অহঙ্কারবশত টাখনুর নিচে পোশাক না পরি। সেই সঙ্গে ভুল, অপারগতা বা প্রয়োজনবশত কাউকে পরতে দেখে প্রকৃত কারণ না জেনে তার ব্যাপারে কুধারণা ও বদনাম জুড়ে না দিই। কেননা, এ রকম করাটাও জঘন্য ও গর্হিত কাজ। আমরা কোনোভাবেই দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রহমতের নজর থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।
এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি হাদিস নিম্নরূপ, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাজি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘ূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’
জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, ‘কোনো মানুষ যদি চায় তার উত্তম পোশাক হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, তা হলে এটা কি অহঙ্কার?’
জবাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর! তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহঙ্কার হলো, সত্যকে অস্বীকার করা ও মানুষকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করা।’ (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসটির মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য বিভ্রান্তি ও অহেতুক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকতে পারি। কেননা, অহঙ্কার বা দম্ভ ব্যতিরেকে কেবল সরল সৌন্দর্যবোধ ও রুচিশীলতা থেকে উত্তম পোশাক ও সাজসজ্জা নিষেধ তো নয়ই, বরং আল্লাহরও তা-ই পছন্দ। হাদিসের শেষাংশের ঘোষণা ও ব্যাখ্যা আমাদের জন্য বিশাল ছাড় ও উৎসাহপূর্ণ বটে। তবে হাদিসটির প্রথমাংশের ওপরেই আমাদের অধিক দৃষ্টি, চিন্তা ও আমল থাকা উচিত। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সরিষা দানা পরিমাণ অহঙ্কার থাকলেও জান্নাতের দরজা বন্ধ অর্থাৎ জাহান্নাম অবধারিত।
কতই না ভয়াবহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই উচ্চারণ। আমরা যখন অহঙ্কার থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত হতে পারব, আর নিজের অনিচ্ছায় অজান্তে লালিত ছিটেফোঁটা অহঙ্কারের ব্যাপারেও সদা সতর্ক ও তৎপর থাকব; তখনই আমরা মুক্তির আশা করতে পারব, এর আগে নয়। বাস্তব তো এই যে, শুধু দুনিয়ার সম্পদ ক্ষমতা ও সৌন্দর্যই নয়; আমরা অনেক সময় দ্বীনি কর্মকান্ড বা প্রতিষ্ঠানেও প্রভাব পরিচয় নিয়ে অহঙ্কারী হয়ে থাকি। এমনটি মোটেও কাম্য নয়।
আমাদের সোজা কথাটি বুঝতে হবে যে, নিরহঙ্কার মানুষ হতে পারাটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত্রের অন্যতম ও বিশালতম এক সুন্নত; যা আমরা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করেও হয়তো অনেক সময় নিজেদের খুব সুন্নতওয়ালা ভেবে থাকি। অথচ এ অহঙ্কারমুক্ত থাকার সুন্নতটির ওপর আমল না করতে পারলে কেবল সাজ-পোশাকের সুন্নত আমাদের অবধারিত জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে না। তাই আমরা প্রকৃত নিরহঙ্কার হওয়ার চেষ্টা করি এবং আল্লাহ পাকের কাছে তা কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Rubel Hossain ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০১ এএম says : 0
অহংকার এমন এক মারাত্মক আচরণ। যা একজন বিনয়ী ও সফল ব্যক্তিকে তার সফলতার উচ্চস্থান থেকে মুহূর্তের মধ্যে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কোনো বক্তিকে গরিব বলে ছোট বললে অহংকার হবে না বরং তাকে হেয় করলেই তা অহংকার হিসেবে পরিগণিত হবে।
Total Reply(0)
Jashim Uddin ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০২ এএম says : 0
আল্লাহ করুণ, আমরা সবাই যেন বিনয়, নম্রতা আর সৎব্যবহারের উত্তম পথে চলে আল্লাহতাআলার কৃপাদৃষ্টি লাভকারী হই, আল্লাহতাআলার জান্নাতে প্রবেশকারী হই আর প্রতিটি গৃহ যেন অহঙ্কারের গুনাহ থেকে পবিত্র থাকে, আমিন।
Total Reply(0)
Nazir Ahmed ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০২ এএম says : 0
পৃথিবীর প্রথম পাপ কাজ হলো অহংকার। এ অহংকারের কারণেই ইবলিস আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে নজির স্থাপন করেছিল।
Total Reply(0)
Bellal Hossain ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৩ এএম says : 0
অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি।
Total Reply(0)
Umme Habiba ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৪ এএম says : 0
অহংকার আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি অহংকার নিয়ে টানাটানি করবে, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না বরং ধ্বংস করে দেন। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি ভয় এবং সম্মান করে তারাই হলো অধিক সম্মানিত ও সফল।
Total Reply(0)
সাইফ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৪ এএম says : 0
"নিরহঙ্কার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম ও বিশালতম এক সুন্নত" আসলেই আপনার এই কথাটা পড়ে এই বিষয়টা প্রথম অনুধাবন করলাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকেও, আর আপনাদের সকলকে আল্লার এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন