ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের শান্তিপ্রিয়তা এই কানুন প্রবর্তন করেছে যে, যদি কোনো বিরুদ্ধবাদী গোত্রের সাথে যুদ্ধের অবতারণা ঘটে, তাহলে যুদ্ধের মাঠে অবতীর্ণ হয়েও সন্ধি এবং সমঝোতার খেয়াল পরিত্যাগ না করা চাই। বরং এ প্রস্তাব পোষণ করতে হবে যে, তোমরা কালেমায়ে শাহাদত পড়ে মুসলমান হয়ে যাও এবং যুদ্ধ হতে হাত গুটিয়ে নিয়ে আমাদের ভাই বনে যাও।
যদি তোমরা এ নির্দেশ পালন করো, তাহলে তোমরা ধর্ম, হুকুমত এবং সম্মানের যাবতীয় অধিকারে আমাদের সমপর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করো, তাহলে নিজেদের ধর্মের ওপর অবস্থান করে আমাদের রাজনৈতিক হুকুমতকে কবুল করে নাও। এমতাবস্থায় তোমাদের হিফাজত ও নিরাপত্তার সকল প্রকার জিম্মাদারি আমাদের ওপর বর্তাবে। ইসলামের ইতিহাসে এমন অসংখ্য দৃশ্য রয়েছে যে, কোনো ঘোরশত্রু ও দুশমন গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে অথবা অধীনতা ও বশ্যতা স্বীকার করে রক্ত প্রবাহ ও যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে এবং তাদের কাছে যুদ্ধের ময়দান হয়ে গেছে ভালোবাসা ও মহব্বতের শ্রেষ্ঠ মজলিস ও অনুষ্ঠান।
এই নিয়মতান্ত্রিকতা যা সর্বাত্মক শান্তিপ্রিয় এবং নিরাপত্তা বিধান ও রক্তপাত নিরসনের প্রচেষ্টা চালায় এবং সামগ্রিক শান্তির বাণী বহন করে তাকে বিরুদ্ধবাদীরা হিংসাবশত এভাবে উপস্থাপন করেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে জোরপূর্বক মুসলমান বানানোর শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করতেন, তখন সেনাপতিকে এই নির্দেশ দিতেন, ‘যখন তোমরা মুশরিকদের মাঝে কোনো দুশমন গোত্রের প্রতিদ্ব›দ্বী হও তাদেরকে তিনটি কথার কোনো একটি গ্রহণ করার আহ্বানজানাবে। তন্মধ্যে তারা যদি কোনো একটি গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাদের ওপর হামলা করবে না। তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাবে। যদি তারা গ্রহণ করে নেয়, তাদের ওপর হামলা চালাবে না। তারপর তাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করার আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে মুসলমানদের সমঅধিকার লাভ করবে। কিন্তু যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে বেদুঈন মুসলমানদের আইন তাদের ওপর প্রযোজ্য হবে। তবে গণিমত ও ফাইয়ের অংশ তারা পাবে না, যতক্ষণ না তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে। যদি তারা ইসলাম কবুল না করে, তাহলে তাদেরকে জিজিয়া প্রদান করার আহ্বান জানাবে। তারা তা মেনে নিলে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে না। যদি এ ক্ষেত্রেও তারা সাড়া না দেয়, তাহলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল জিহাদ)।
হজরত সাম্মামা বিন আছাল বনি হানিফা গোত্রের লোক ছিলেন এবং তিনি ইয়ামামাহ গোত্রের সর্দার ছিলেন। এই গোত্রটি শেষ পর্যন্ত বিরুদ্ধবাদিতায় আচ্ছন্ন ছিল। সাম্মামা ঘটনাক্রমে একদল মুসলমান সৈনিকের হাতে গ্রেফতার হয় এবং তাকে মদিনায় নিয়ে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের জন্য তশরিফ আনয়ন করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, হে সাম্মামা, তোমার অভিমত কি? সে উত্তর করল, হে মুহাম্মদ (সা.) আমার অভিমত উত্তম এবং স্পষ্ট। যদি আমাকে হত্যা করা হয়, তাহলে একজন রক্তধারীকে হত্যা করা হবে, আর যদি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়, তাহলে এই ক্ষমা প্রদর্শন একজন কৃতজ্ঞ লোকের ওপর বর্ষিত হবে। আর যদি টাকা-পয়সার প্রত্যাশা করা হয়, তাহলে যা চাওয়া হবে তা আদায় করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এই উত্তরে কোনো মন্তব্য করলেন না। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় দিন একই সওয়াল-জবাব হলো এবং তৃতীয় দিনও একইভাবে অতিবাহিত হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সাম্মামাকে ছেড়ে দাও। লোকজন বাঁধন খুলে দিলো এবং সে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করল। কিন্তু সত্যের জিঞ্জির অলক্ষ্যে তার পদযুগলকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিল। সে মসজিদে নববীর নিকটস্থ একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করে গোসল করল এবং তারপর মসজিদে ফিরে এসে কালেমায়ে শাহাদৎ পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি ও জামে তিরমিজি)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন