বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যুদ্ধের মাঠে মহান ইসলামের তাবলীগ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের শান্তিপ্রিয়তা এই কানুন প্রবর্তন করেছে যে, যদি কোনো বিরুদ্ধবাদী গোত্রের সাথে যুদ্ধের অবতারণা ঘটে, তাহলে যুদ্ধের মাঠে অবতীর্ণ হয়েও সন্ধি এবং সমঝোতার খেয়াল পরিত্যাগ না করা চাই। বরং এ প্রস্তাব পোষণ করতে হবে যে, তোমরা কালেমায়ে শাহাদত পড়ে মুসলমান হয়ে যাও এবং যুদ্ধ হতে হাত গুটিয়ে নিয়ে আমাদের ভাই বনে যাও।
যদি তোমরা এ নির্দেশ পালন করো, তাহলে তোমরা ধর্ম, হুকুমত এবং সম্মানের যাবতীয় অধিকারে আমাদের সমপর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করো, তাহলে নিজেদের ধর্মের ওপর অবস্থান করে আমাদের রাজনৈতিক হুকুমতকে কবুল করে নাও। এমতাবস্থায় তোমাদের হিফাজত ও নিরাপত্তার সকল প্রকার জিম্মাদারি আমাদের ওপর বর্তাবে। ইসলামের ইতিহাসে এমন অসংখ্য দৃশ্য রয়েছে যে, কোনো ঘোরশত্রু ও দুশমন গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে অথবা অধীনতা ও বশ্যতা স্বীকার করে রক্ত প্রবাহ ও যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে এবং তাদের কাছে যুদ্ধের ময়দান হয়ে গেছে ভালোবাসা ও মহব্বতের শ্রেষ্ঠ মজলিস ও অনুষ্ঠান।
এই নিয়মতান্ত্রিকতা যা সর্বাত্মক শান্তিপ্রিয় এবং নিরাপত্তা বিধান ও রক্তপাত নিরসনের প্রচেষ্টা চালায় এবং সামগ্রিক শান্তির বাণী বহন করে তাকে বিরুদ্ধবাদীরা হিংসাবশত এভাবে উপস্থাপন করেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে জোরপূর্বক মুসলমান বানানোর শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করতেন, তখন সেনাপতিকে এই নির্দেশ দিতেন, ‘যখন তোমরা মুশরিকদের মাঝে কোনো দুশমন গোত্রের প্রতিদ্ব›দ্বী হও তাদেরকে তিনটি কথার কোনো একটি গ্রহণ করার আহ্বানজানাবে। তন্মধ্যে তারা যদি কোনো একটি গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাদের ওপর হামলা করবে না। তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাবে। যদি তারা গ্রহণ করে নেয়, তাদের ওপর হামলা চালাবে না। তারপর তাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করার আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে মুসলমানদের সমঅধিকার লাভ করবে। কিন্তু যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে বেদুঈন মুসলমানদের আইন তাদের ওপর প্রযোজ্য হবে। তবে গণিমত ও ফাইয়ের অংশ তারা পাবে না, যতক্ষণ না তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে। যদি তারা ইসলাম কবুল না করে, তাহলে তাদেরকে জিজিয়া প্রদান করার আহ্বান জানাবে। তারা তা মেনে নিলে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে না। যদি এ ক্ষেত্রেও তারা সাড়া না দেয়, তাহলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল জিহাদ)।
হজরত সাম্মামা বিন আছাল বনি হানিফা গোত্রের লোক ছিলেন এবং তিনি ইয়ামামাহ গোত্রের সর্দার ছিলেন। এই গোত্রটি শেষ পর্যন্ত বিরুদ্ধবাদিতায় আচ্ছন্ন ছিল। সাম্মামা ঘটনাক্রমে একদল মুসলমান সৈনিকের হাতে গ্রেফতার হয় এবং তাকে মদিনায় নিয়ে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের জন্য তশরিফ আনয়ন করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, হে সাম্মামা, তোমার অভিমত কি? সে উত্তর করল, হে মুহাম্মদ (সা.) আমার অভিমত উত্তম এবং স্পষ্ট। যদি আমাকে হত্যা করা হয়, তাহলে একজন রক্তধারীকে হত্যা করা হবে, আর যদি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়, তাহলে এই ক্ষমা প্রদর্শন একজন কৃতজ্ঞ লোকের ওপর বর্ষিত হবে। আর যদি টাকা-পয়সার প্রত্যাশা করা হয়, তাহলে যা চাওয়া হবে তা আদায় করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এই উত্তরে কোনো মন্তব্য করলেন না। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় দিন একই সওয়াল-জবাব হলো এবং তৃতীয় দিনও একইভাবে অতিবাহিত হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সাম্মামাকে ছেড়ে দাও। লোকজন বাঁধন খুলে দিলো এবং সে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করল। কিন্তু সত্যের জিঞ্জির অলক্ষ্যে তার পদযুগলকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিল। সে মসজিদে নববীর নিকটস্থ একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করে গোসল করল এবং তারপর মসজিদে ফিরে এসে কালেমায়ে শাহাদৎ পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি ও জামে তিরমিজি)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Zulfiqar Ahmed ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৬ এএম says : 0
মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পরও শত্রদের সাথে, শত্র পক্ষের বন্দিদের সাথে, আহতদের সাথে এবং বেসামরিক লোকজনের সাথে যেন মানবীয় নীতি নৈতিকতাগুলো মেনে চলা হয় সেজন্যে নবীজী তাঁর অনুসারীদের লক্ষ্য করে আদেশ দিতেন। ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনায় যুদ্ধে কী ধরনের শিষ্টাচার এবং নীতি নৈতিকতা মেনে চলা উচিত সে সম্পর্কে চমৎকার কিছু দিক উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম সাদেক (আ) বলেন, ‘রাসূলে আকরাম (সা.) যখন মুসলমান সেনাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতেন, তাদেরকে ডেকে পাঠাতেন এবং তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলতেন, যুদ্ধের ময়দানের দিকে অগ্রসর হও তবে কামনা বাসনা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নয় বরং আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে এবং তাঁরই সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী আমল করতে করতে আল্লাহর রাস্তায় পা বাড়াও।’
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৭ এএম says : 0
সিফফীনের যুদ্ধে শত্র সেনাদেরকে নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ হযরত আলী রা. এর ছিল, কিন্ত তিনি তা করেননি। যুদ্ধের মাঠে এক শত্র যখন তাঁর মুখে থু থু নিক্ষেপ করেছিল, তখন তিনি ওই শত্রকে তৎক্ষণাৎ আর মারেননি। শত্র যখন তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, তোমার থু থু নিক্ষেপের ঘটনায় আমার মনে ব্যক্তিগত প্রতিশোধস্পৃহা জেগে থাকতেও পারত। আর আমি তো তোমাকে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাবশত মারতে পারি না।” এই ছিল হযরত আলী ( আ. ) এর মহানুভবতা। যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা স্বাভাবিক জীবনে ইসলামের নীতি এটাই।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৭ এএম says : 0
শুকরিয়া। লেখককে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।
Total Reply(0)
মিনারুল ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
লন্ডন ইউনিভার্সিটির অ্যারাবিক অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর স্যার টমাস ওয়াকা্র আর্নল্ড ১৮৯৬ সালে খৃস্টান মিশনারীদের জন্য ‘দি প্রিসিং অব ইসলাম’ নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন। বইটি মূলত কোন কৌশলে খৃস্টান ধর্ম প্রচার করলে সুফল পাওয়া যাবে, সেই দিক নির্দেশনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রচনা করা। এই বইতে তিনি অতিতের খৃস্টান শাসক ও ধর্মগুরু এবং প্রথম যুগের মুসলিম শাসক ও ধর্মগুরুদের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন। খৃস্টান শাসক ও ধর্মগুরুদের প্রজাপীড়ন ও গোত্রপীড়নে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। তাই তারা মুসলিম শাসক ও ধর্ম প্রচারকদের মহানুভবতা ও সহমর্মিতা দেখে অভিভূত হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে। বইটিতে তিনি ইতিহাসের অন্ধকার গহ্বর থেকে তুলে এনেছেন নিগূঢ় সত্য। এবং সেই সত্যের আলোকেই তিনি বলতে চেয়েছেন যে, তলোয়ারের জোরে নয়,আদর্শিক গুণে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে।
Total Reply(0)
বিপ্লব ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
খৃস্টান মিশনারীদের মত কোন সংগঠন না থাকলেও মহানবী (স:)সাহাবিগণ,নিবেদিতপ্রাণ সূফীসাধক,ব্যবসায়ী,শিক্ষক,ইমাম এবং সাধারণ মুসলমানের মাধ্যমেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে।
Total Reply(0)
Shah Alam Khan ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
ভারতের উচ্চবংশীয় হিন্দুরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের অমর্যাদার চোখে দেখতো এবং রাজারাও সেইভাবেই রাজ্য শাসন করতেন। তাই এসব ওলী আওলিয়াদের মহানুভবতা ও ইসলামের সাম্যের আদর্শ মানুষকে গভীরভাবে অনুপ্রণিত করে। অন্যদিকে মুসলিম শানকদের উদারতা,সহমর্মিতা এঅঞ্চলের হিন্দুদের মুসলমান হতে অনুপ্রাণিত করে।
Total Reply(0)
রিপন আলী ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
ইসলাম তার আদর্শিক গুণাবলীর দ্বারাই বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক বর্ধনশীল ধর্ম।
Total Reply(0)
সাইফ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৭ এএম says : 0
লেখক মুন্সি সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন। মানবতার ধর্ম, ভালোবাসার ধর্ম, ইসলামকে আজকে আমরা মুসলমানরাই সবছেয়ে বেশি বদনাম করছি, আমরাই আমাদের এই উদার সম্প্রিতির ধর্মকে একবিংশ শতাব্দিতে উপস্তাপন করতে ব্যর্থ যে আমাদের ধর্ম কতটা মানবী, উদার এবং সহনশীল, আর এই শুজোগ নিয়ে শত্রুরা বার বার আঘাত করছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন