বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আখেরাত অপরিহার্য কেন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সবার আগে আখেরাতের অপরিহার্যতা ও এর নিশ্চয়তা সম্পর্কে কুরআন মাজিদের বর্ণনা শোনা যাক। কুরআন বলে, মানুষের জীবন যদি এ জগতেই শেষ হয়ে যায় এবং এর পরে অন্য কোনো জীবন না থাকে, তাহলে গোটা বিশ্বের সমস্ত কর্মশালাই তো উদ্দেশ্যবিহীন হৈহল্লা আর অর্থহীন তামাশা এবং সৃষ্টিকর্তার এক নিরর্থক কর্মপ্রয়াসে পরিণত হয়।
অতঃপর তার সৃষ্টির এমন কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকে না, যা সে প্রজ্ঞাময় ও মহাজ্ঞানী স্রষ্টার মহিমার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে। বিষয়টি কিছুটা বিস্তারিত এভাবে বুঝতে পারেন যে, সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, সারা জগতে মানবজাতির অবস্থান ও মর্যাদা ঠিক তেমনি, যেমন কোনো বাড়িতে বাড়িওয়ালারা থাকে। অর্থাৎ, যেভাবে বাড়িতে বাড়ির মানুষজন ছাড়াও অন্যান্য বহু আসবাবপত্র যেমন- খাবার-দাবার বস্তু সামগ্রী, পরার কাপড়-লতা, বিছানা-পত্র, খাট-পালঙ্ক, লেপ-তোষক, কার্পেট-চাদর, আলনা-আলমারী, চেয়ার-টেবিল এবং অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী, যেমন- পানাহারের জন্য বাসন-কোসন, আলো জ্বালানোর জন্য বাল্ব-প্রদীপ প্রভৃতি, চলাফেরার জন্য সাইকেল, মোটরযান কিংবা বাহনের পশু, বিনোদনের জন্য তোতা-ময়না, কবুতরের মতো পাখি কিংবা বিড়াল-কুকুর, তেমনিভাবে শিশুদের জন্য থাকে নানা রকম খেলনা-পুতুল।
কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনো একটি বস্তুই স্বয়ং উদ্দেশ্য নয়, বরং প্রত্যেকটি বস্তু-সামগ্রী এ জন্যই রাখা হয় যাতে মানুষের কাজে লাগে। তারা যেন সেগুলো ব্যবহার করে। তা সেগুলো বিনোদন, ঘরের শোভা-সৌন্দর্য কিংবা শিশুদের খেলাধুলার কাজেই আসুক না কেন। তেমনিভাবে সমগ্র জগৎ-সংসারের প্রতি লক্ষ্য করলেও প্রতীয়মান হয়, মানুষ ছাড়া এখানে যা কিছুই রয়েছে, পাহাড়, ভ‚মি, বাতাস, পানি, নদী-নালা, চাঁদ-সূর্য, পশুপাখি, উদ্ভিদ সবকিছুই মানুষের জন্য।
যেন সমগ্র এ জগৎ-সংসারের আসল ও মূখ্য উদ্দেশ্য শুধুই মানুষ। পৃথিবী ও আকাশের যাবতীয় কর্মশালাকে যেন শুধুমাত্র মানুষের জন্য অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। আর এটি একটি বাস্তব সত্য যে, কয়েকদিনের পার্থিব এ মানবজীবন স্বপ্নের চাইতে বেশি কিছু গুরুত্ববহন করে না। তদুপরি শতকরা দু’একজনও এমন নেই যারা নিজেদের এ জবীন নিয়ে তুষ্ট ও হৃষ্ট, বরং অধমের ধারণা, আখেরাতের সে জীবন যদি না থাকত, যার সংবাদ নবী-রাসূলগণ দিয়ে গেছেন এবং কুরআন মাজিদ যার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছে, তা হলে এ জগতে মানুষের জন্ম অপেক্ষা হাজারগুণ উত্তম ছিল আদতেই জন্ম না হওয়া।
তার চাইতে আরো একটু এগিয়ে বলব, যদি আখেরাতের জীবনের ওপর ঈমান না থাকত, তা হলে আমি আমাকে সৃষ্টি করার দরুণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতাম। আর এখানকার হাজার রকমের চিন্তাভাবনা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাময় ক্ষণস্থায়ী জীবনের তুলনায় শুধু নিজের জন্যই নয়, বরং সমস্ত মানুষের জন্য আমি এমন কোনো পন্থায় আত্মহত্যাকেই বৈধ; বরং উত্তম বিবেচনা করতাম যাতে তেমন কোনো কষ্ট না হয়।
যা হোক, এ জগতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ যে ক’বছরের জীবনপ্রাপ্ত হয়, যার প্রাথমিক অনেকখানি অংশ শৈশবের দুর্বলতা ও আনন্দহীনতায় অতিবাহিত হয়ে যায়। তারপর আসে যৌবন। তাও শক্তি ও সামর্থ্যরে সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসে হাজার রকমের চিন্তা-ভাবনা এবং সেসমস্ত কামনা-বাসনাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে, যেগুলো পূরণ করার ব্যবস্থাও থাকে না সবার।
এরই মধ্যে যৌবনের পতন আর সামর্থ্যরে ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। সামান্য কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত অসহায়ত্ব, রোগব্যাধি ও দুঃখ-বেদনা নিয়ে নেমে আসে বার্ধক্য। শেষ পর্যন্ত এসব মঞ্জিল পাড়ি দিয়ে মানুষ মৃত্যুর পথে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।
এই-ই হলো প্রত্যেকটি মানুষের পার্থিব জীবন। তাও যদি সে পুরো স্বাভাবিক বয়স পায় তা হলেই। ভেবে দেখুন, কারো সুষ্ঠু বিবেক কি এ কথা মেনে নিতে পারে যে, মানুষের জীবন এমন কোনো বিরাট বিষয় যার জন্য অস্তি ও নাস্তি জগতের এ সমস্ত তোলপাড় ও বিবর্তন বৈধ কিংবা বিজ্ঞোচিত হতে পারে?
মোট কথা, অসহায় মানুষের ক্ষণস্থায়ী ও নিরানন্দ জীবনের জন্য ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের গোটা এ ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি, এমন কি স্বয়ং মানুষের সৃষ্টিও নিঃসন্দেহে একটি আপত্তিকর প্রহসন এবং উদ্দেশ্যহীন তামাশায় পরিণত হয়ে যায়; যদি আখেরাতের জীবন না থাকে, যার সংবাদ নবী-রাসূলগণ এবং আল্লাহর কিতাবসমূহ আমাদেরকে দিয়েছেন।
কুরআন মাজিদ পুরো বিষয়টিকে তার সালঙ্কার, মু’জেজাসুলভ এবং অতি সংক্ষিপ্ত শব্দে এভাবে উচ্চারণ করেছে, ‘তবে তোমাদের ধারণা কি যে, আমি তোমাদের এমনিতেই সৃষ্টি করেছি এবং নিজেদের পার্থিব জীবন সমাপ্ত করার পর আমার দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে না? সুতরাং আল্লাহ তায়ালার সত্তা বড়ই মহান যিনি একক বাদশাহ, একক মা’বুদ, যাকে ছাড়া কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই। তিনি মহান আরশের অধিপতি।’ (সূরা মু’মিনুন : আয়াত ১১৫-১১৬)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Toraf Hossain ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, ভালো লাগলো। আসলে যে ব্যক্তি আখেরাতের উপর প্রত্যয় পোষণ করে না , তার পক্ষে ইসলামের পথে এক পাও অগ্রসর হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভাব।
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 0
মরণের স্মরণ আমরা ভুলে গেছি। তাই দুনিয়ার অস্থায়ী রংমহল আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে গেছে। অথচ মরণ এক চরম সত্য। ইরশাদ হচ্ছে, কুল্লু নাফসিন জা ইকাতুল মাওত। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এ আয়াত আমরা মানি আর না মানি, বিশ্বাস করি আর অবিশ্বাস করি- মৃত্যু একদিন আসবেই আসবে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো মরণের পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। দুনিয়া নামক বাজার থেকে চিরস্থায়ী আবাস আখেরাতের জন্য সদাই কেনাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৩ এএম says : 0
রসুল (সা.) বলেছেন— ‘আদ-দুনইয়া উ মাজরাআতুল আখেরাহ। অর্থাৎ এ পৃথিবী আখেরাতের শস্য খেত।’ এখানে যেমন ফসল লাগাব আখেরাতে তেমন ফল পাব। আখ গাছ লাগিয়ে যেমন ধান পাওয়া অসম্ভবের চেয়েও অসম্ভব, তেমনি মৃত্যু ভুলে পাপের জিন্দেগি যাপন করে সুখের আবাস জান্নাত পাওয়াও অসম্ভব।
Total Reply(0)
Kowaj Ali khan ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৩ এএম says : 0
হে মৃত্যু ভোলা মুসলমান! কীসে তোমাকে মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে রেখেছে? তুমি কি জান আজকের দিনটিই হতে পারে তোমার জন্য শেষ দিন। তাহলে কেন ফিরে আসছ না প্রভুর বন্দেগির পথে। কেন ডুবে আছ গন্ধময় জীবনে। আমার প্রিয় একটি উক্তি দিয়েই শেষ করছি আজকের লেখা। ‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়/মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়।’
Total Reply(0)
রুবেল ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৪ এএম says : 0
পরকালে জান্নাত পেতে হলে সমকালীন এই জীবনেই তা নিশ্চিত করে যেতে হবে। তবেই আপনি হবেন বুদ্ধিমান এবং জান্নাতি। হে আল্লাহ, আমাদের শুভবুদ্ধি দান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন