বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান একটি দেহ

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পারস্পরিক সম্মান ও গুরুত্ববোধ সহকারে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা ও অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখতে এবং সাধ্যমতো একে অন্যের ছোট-বড় প্রয়োজন পূরণ ও উপকার করতেও উৎসাহিত করেছেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোনো নির্দেশ বা দায়িত্ব অন্যকে দেননি যা তিনি নিজে পালন করেননি। কাজেই উল্লিখিত গুণাবলি তাঁর মধ্যে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান ছিল। এসব অভ্যাস ও মানবিকতা ধারণ করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নত। যা আমরা সুন্নতের তালিকায় খুব একটা গণ্যই করি না।
হজরত নুমান ইবনে বশির রাজি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের পরস্পরের ভালোবাসা, অনুগ্রহ, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহ বা শরীরের মতো। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন সারা দেহের সবগুলো অঙ্গই নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে এবং কষ্ট-যন্ত্রণায় জরাগ্রস্ত ও কাতর হয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
মুমিনদের পারস্পরিক বন্ধন সম্পর্কে হজরত আবু মূসা রাজি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরের মতো যার এক অংশ অপর অংশকে শক্ত গাঁথুনিতে ধরে রাখে। উদাহরণ দেখাতে গিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক হাতের আঙুলকে অপর হাতের আঙুলের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
মুমিনদের পরস্পরের ঐক্য অনুভ‚তি ও দায়িত্ব বোঝানোর জন্য ওপরের হাদিস দুটিই যথেষ্ট। এরপরও বিষয়টির সূ² দিক আরো স্পষ্ট করে বোঝার জন্য আরো কিছু সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ও বিবরণমূলক হাদিস জেনে নেয়া দরকার।
হজরত আবু মূসা রাজি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের মসজিদ বা বাজারসমূহে এমতাবস্থায় গমন করে যে, তার সঙ্গে তীর ইত্যাদি (ধারালো হাতিয়ার) রয়েছে, সে যেন অবশ্যই এসবের ধারালো অংশ হাত বা কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে বা মুড়িয়ে রাখে, যাতে এর দ্বারা কোনো মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হাদিসটিতে অতি সাধারণ একটা বিষয়কেও অসাধারণ গুরুত্বসহকারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন। কারণ, তিনি ছিলেন অতুলনীয় মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তি। দয়া, প্রেম ও দরদে ভরপুর অভিভাবক।
আমাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক চাল-চলনের মাঝেও নিজের অজান্তে বা অসাবধানতায় কোনো না কোনোভাবে অপরের কোনো কষ্ট হতে পারে, সুতরাং আমাদের নিতান্ত খুঁটিনাটি দিক থেকেও সতর্ক এবং পরিপাটি হয়ে থাকতে হবে। মহানবীর এই তো মহান আদর্শ। এই তো তাঁর মহান সুন্নত।
শুধু জাগতিক বিষয়ই নয়, ইবাদত ও আধ্যাত্মিক কার্যকলাপেও অপরের কষ্ট ও অসুবিধার প্রতি সতর্ক ও যত্মবান হওয়ার শিক্ষা তিনি দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Zulfiqar Ahmed ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০৮ এএম says : 0
"মহান আল্লাহ বলেন, ‘সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই’। [সুরা হুজুরাত/১০] অর্থাৎ সকল বিশ্বাসী মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই। সাদা ভালো, গরীব ধনী, ছোট বড়,ভারতীয় আমেরিকান, আরব অনারব সকল মুসলিমই ভাই ভাই। আর যেহেতু আমরা ভাই ভাই তাই পরস্পরের প্রতি কিছু অধিকার আছে, কিছু কর্তব্য আছে। এই তো একদেহ যাকে বলে।
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০৯ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, সে দোযখ থেকে নিস্তার লাভ করে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে সে ব্যক্তির জন্য উচিত,যেন তার মৃত্যু তার কাছে সেই সময় আসে, যে সময় সে আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে। আর লোকেদের সাথে সেইরুপ ব্যবহার করে যেরুপ ব্যবহার সে নিজের জন্য পছন্দ করে’। (মুসলিম/৪৮৮২)।আল্লাহ আমাদের ভুল গুলোকে ক্ষমা করুন এবং সঠিকভাবে ইসলাম পালন করার শক্তি দিন।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১০ এএম says : 0
ইসলামের বিকাশের সাথে সাথে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ইত্যাদি পরিভাষা চালু হয়।
Total Reply(0)
রুবেল ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১০ এএম says : 0
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা-এর অর্থ হচ্ছে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ ও আল্লাহর আনুগত্য কামনা করা। সম্পদের মোহ, বংশ বা স্থান ইত্যাদির কোন সংশ্লিষ্টতা এক অপরের সম্পর্কের ও ভালোবাসার মানদণ্ড হবে না।
Total Reply(0)
রিপন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১১ এএম says : 0
মহান আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না।
Total Reply(0)
রিপন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৩ এএম says : 0
অপর ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, তার গোপনীয় বিষয় প্রকাশ না করা, উত্তম পন্থায় তাকে উপদেশ দেয়া, তার ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষণ করা, ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, তার সাথে সুন্দর আচরণ করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সুধু তার জন্য ভালবাসার তউফিক দান করুক। আমিন
Total Reply(0)
শাহ আলম ফারুক ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৪ এএম says : 0
সারা বিশ্বের মুসলমান একটি দেহ স্বরূপ। দেহের এক স্থানে আঘাত পেলে যেমন তা সারাদেহে সঞ্চালিত হয়, তেমনি একটি মুসলিম দেশ দুর্ভিক্ষপীড়িত হলে সারা মুসলিম বিশ্বে তা আলোড়িত হবার কথা।
Total Reply(0)
মহম্মদ হাসান ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৮ পিএম says : 0
কিন্তূ এখন মুসলমানে মুসলমানে সহিংসতা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন