প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পারস্পরিক সম্মান ও গুরুত্ববোধ সহকারে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা ও অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখতে এবং সাধ্যমতো একে অন্যের ছোট-বড় প্রয়োজন পূরণ ও উপকার করতেও উৎসাহিত করেছেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোনো নির্দেশ বা দায়িত্ব অন্যকে দেননি যা তিনি নিজে পালন করেননি। কাজেই উল্লিখিত গুণাবলি তাঁর মধ্যে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান ছিল। এসব অভ্যাস ও মানবিকতা ধারণ করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নত। যা আমরা সুন্নতের তালিকায় খুব একটা গণ্যই করি না।
হজরত নুমান ইবনে বশির রাজি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের পরস্পরের ভালোবাসা, অনুগ্রহ, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহ বা শরীরের মতো। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন সারা দেহের সবগুলো অঙ্গই নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে এবং কষ্ট-যন্ত্রণায় জরাগ্রস্ত ও কাতর হয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
মুমিনদের পারস্পরিক বন্ধন সম্পর্কে হজরত আবু মূসা রাজি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরের মতো যার এক অংশ অপর অংশকে শক্ত গাঁথুনিতে ধরে রাখে। উদাহরণ দেখাতে গিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক হাতের আঙুলকে অপর হাতের আঙুলের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
মুমিনদের পরস্পরের ঐক্য অনুভ‚তি ও দায়িত্ব বোঝানোর জন্য ওপরের হাদিস দুটিই যথেষ্ট। এরপরও বিষয়টির সূ² দিক আরো স্পষ্ট করে বোঝার জন্য আরো কিছু সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ও বিবরণমূলক হাদিস জেনে নেয়া দরকার।
হজরত আবু মূসা রাজি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের মসজিদ বা বাজারসমূহে এমতাবস্থায় গমন করে যে, তার সঙ্গে তীর ইত্যাদি (ধারালো হাতিয়ার) রয়েছে, সে যেন অবশ্যই এসবের ধারালো অংশ হাত বা কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে বা মুড়িয়ে রাখে, যাতে এর দ্বারা কোনো মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হাদিসটিতে অতি সাধারণ একটা বিষয়কেও অসাধারণ গুরুত্বসহকারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন। কারণ, তিনি ছিলেন অতুলনীয় মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তি। দয়া, প্রেম ও দরদে ভরপুর অভিভাবক।
আমাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক চাল-চলনের মাঝেও নিজের অজান্তে বা অসাবধানতায় কোনো না কোনোভাবে অপরের কোনো কষ্ট হতে পারে, সুতরাং আমাদের নিতান্ত খুঁটিনাটি দিক থেকেও সতর্ক এবং পরিপাটি হয়ে থাকতে হবে। মহানবীর এই তো মহান আদর্শ। এই তো তাঁর মহান সুন্নত।
শুধু জাগতিক বিষয়ই নয়, ইবাদত ও আধ্যাত্মিক কার্যকলাপেও অপরের কষ্ট ও অসুবিধার প্রতি সতর্ক ও যত্মবান হওয়ার শিক্ষা তিনি দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন