বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামের সার্বজনীন শান্তিপ্রিয়তা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১ জানুয়ারি, ২০১৯

একবার জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. প্রতিপক্ষের তরবারীর আঘাতে যুদ্ধের মাঠে আমার একটি হাত যদি কেটে যায়। তারপর যখন আমার আক্রমণের পালা আসে তখন আমার প্রতিপক্ষ একটি বৃক্ষের আড়ালে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, আমি মুসলমান হতে চলেছি। এমতাবস্থায় আমি কি করব, আমি কি তাকে হত্যা করব? ইরশাদ হল, ‘না তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না।’ লোকটি পুনরায় আরজ করল, যে আমার হাত কেটে ফেলেছে তারপরও তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না? রাসূল সা. বললেন, ‘যদি তুমি তাকে হত্যা কর তাহলে সে ওই অবস্থায় উপনীত হবে, তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে যে অবস্থায় ছিলে। আর তুমি সে পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে যা তার তাওহীদের স্বীকৃতির পূর্বে ছিল।
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাসূল সা.-এর প্রিয় খাদেম ছিলেন। তাকে একদল সেনার সেনাপতি করে কোনো এক যুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছিল। উভয়পক্ষে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের ময়দানে একজন কাফির তার সামনে পড়ে যায়। তিনি তার উপর হামলা করতে উদ্যত হন। সঙ্গে সঙ্গে সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ধ্বনি উচ্চারণ করতে লাগল।
একজন আনসারী যে প্রথমে তার দিকে অগ্রসর হয়েছিল সে কালেমার ধ্বনি শুনতে পেয়ে হামলা থেকে বিরত রইল। কিন্তু হযরত উসামা এই কাফিরের কালেমা পাঠকে জীবন বাঁচানোর প্রতারণা বলে সাব্যস্ত করলেন এবং বল্লমের আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। রাসূলুল্লাহ সা. এই খবর জানার পর উসামার প্রতি খুবই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।
উসামা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা., সে কেবলমাত্র তরবারীর ভয়ে কালেমা উচ্চারণ করেছিল। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, সে কি উত্তম কথা উচ্চারণ করেছিল। হে উসামা, তুমি কি তার অন্তর চিড়ে দেখেছিলে? তারপর তিনি বারবার বলতে লাগলেন, হে উসামা, কিয়ামতের দিন আমি তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ কি জবাব দিব? উসামা প্রয়ই বলতেন, আমি এতই লজ্জিত হয়ে পড়েছিলাম যে, আমি মনে মনে এই প্রত্যাশা করতাম, কি ভালো হত আমি যদি কেবলমাত্র আজ ইসলাম গ্রহণ করতাম। (সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ঈমান)।
লক্ষ্য করুন, মূল ঘটনা তো এই যে, তুমুল যুদ্ধের সময় অধিকাংশ কাফির ও মুশরিকের জানা ছিল যে, মুসলমানগণ কোনো কালেমা পাঠকারীর ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র চালনা করেন না। তাই তারা যখনই মুসলমানদের আওতায় পড়ে যেত তখনই জীবন বাঁচানোর জন্য দ্রুততার সাথে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করত। এরপরও এ কথা বলা কতটুকু সঙ্গত যে, ইসলাম কাফিরদের তরবারীর জোরে কালেমা পাঠ করতে বাধ্য করেছিল? এ জাতীয় ধারণা কি সত্যের অপলাপ না?
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সা. অপর একটি ঘোষণা যাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। তা হলো এই যে, ‘আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে আমি মানুষের ওই সময় পর্যন্ত যুদ্ধ করব, যতক্ষণ না ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে এবং যখন তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ একবার করে নেবে তখন সে নিজের জান ও মাল আমা হতে বাঁচিয়ে নিল এবং তার নিয়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা আল্লাহপাকের কাজ।’
এই হাদীসের উদ্দেশ্য শুধু এতটুকুই যে, মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা সিদ্ধ নয়। কিন্তু কোনো অমুসলিম সম্প্রদায়ের সাথেও যুদ্ধ করা ওই সময় পর্যন্ত বৈধ যতক্ষণ না তারা তাওহীদের স্বীকৃতি দান করে এবং যখন তারা তাওহীদের স্বীকৃতি দান করবে তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা বৈধ নয়। তাই তারা আক্রমণের ভয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে কিংবা জান বাঁচানোর জন্য পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তাওহীদের একরার করে। এই বর্ণনার এমন বিশ্লেষণ করা যে, কোন উদ্দেশ্যে সে কালেমা পাঠ করেছে তা?
শুধু তাই নয়, ইসলাম ওই সকল মুশরিকের সাথেও যুদ্ধ করতে নিষেধারোপ করেছে যারা আমাদের সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ। কোনো মুশরিক গোত্রের বন্ধু এবং যারা আমাদের সাথে সন্ধি ও সখ্যতা স্থাপন করে বসবাস করতে চায়। কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তারপর যদি তারা তোমাদের থেকে একদিকে চলে যায় এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয় এবং সন্ধি স্থাপনের প্রস্তাব পাঠায় তাহলে তাদের ওপর হামলা করার কোনো পথ আল্লাহপাক রাখেননি।’ (সূরা নিসা: রুকু ১২)। অর্থাৎ তাদের ওপর তরবারী উত্তোলন করা দুরস্ত নয়। অথচ যদি ইসলামের ধর্মীয় যুদ্ধবৃত্তির সেই অর্থই গ্রহণ করা হয় যে, হয়তো ইসলাম, না হয় তরবারী, তাহলে সন্ধিপ্রিয়তা এবং নিরাপত্তাবিধান ও যুদ্ধ পরিহার করার কোনা অবকাশ থাকতে পারে কি?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
তানভীর আহমাদ ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটি মুসলিম মাত্রেরই মনের কথা এবং অতি সত্য ও বাস্তব কথা। তবে বহুল উচ্চারিত অনেক সত্য কথার মতো এ কথারও মর্ম ও বিস্তৃতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ, সঠিক কথারও ভুল বা অসম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
কেরামত আলী আকন্দ ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
...তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদের পথ দেখান সরল পথ। -সূরা মাইদা (৫) : ১৫-১৬
Total Reply(0)
সোহাগ ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও বিধানের চর্চা ও বিস্তারে ব্রতী হওয়া। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের জীবনে পূর্ণ শান্তি বিরাজ করবে এবং ইসলাম শান্তির ধর্ম কথাটির সত্যতা ও যথার্থতা বাস্তবরূপে প্রতিফলিত হবে।
Total Reply(0)
সোহাগ ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ইসলামের পূর্ণ অনুসারী করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের পূর্ণ শান্তি দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে কাউকে অনর্থক আঘাত করা নিষেধ। ইসলামের শিক্ষা হলো, অমুসলিম যেই হোক তাকে আদর-আপ্যায়ন করে, সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দীনের পথে আনতে হবে।
Total Reply(0)
আজিজুর রহমান হৃদয় ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
এক যুদ্ধের ময়দানে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) যখন দুশমনের বুকের ওপর উঠে তলোয়ার চালাবেন তখনই ওই কাফের মুখে কালিমা পড়ে নিল। হজরত খালিদ (রা.) কালিমা পড়ার পরও তাকে হত্যা করে ফেলেছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনা শুনে মারাত্মক কষ্ট পেয়ে হজরত খালিদ (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে খালিদ কালিমা পড়ার পরও তুমি তাকে কেন হত্যা করেছিলে? হজরত খালিদ (রা.) উত্তর দিলেন, সে তলোয়ারের ভয়ে এবং চাপের মুখে কালিমা পড়েছিল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে ভয়ে পড়ুক বা অন্য কোনো কারণে পড়ুক তার মুখ দিয়ে তো কালিমা বের হয়েছিল। তুমি তো তার অন্তর ফেড়ে দেখনি যে, সে কী কারণে কালিমা পড়ছিল। হে খালিদ তুমি এ কাজটা মোটেই ঠিক করনি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন