শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আমানতের খেয়ানতকারী ঈমানের পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা রাখে না

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

যথাযথ একজন মানুষ যদি আল্লাহর রাসূল (সা.) ও আখেরাতের সত্যতার ওপর ঈমানদার হয়, তা হলে সে আমানতের খেয়ানত করতে পারে না। আর যদি সে আমানতের খেয়ানত করে, তবে সে ঈমানের পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা রাখে না।
এত কঠোর ও মর্মন্তুদ ব্যাখ্যা সরাসরি হাদিসে আসার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমানতদারী সুন্নতকে অবজ্ঞা করে বাহ্যিক সুন্নতের গর্ব-অহঙ্কার ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশও সুন্নতে নববীর চরম খেয়ানত ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। মুসলিম শরিফের হাদিসে হজরত হুযায়ফা (রাজি.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রাজি.)-এর যৌথ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদে এ রকম উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ হাশরের ময়দানে সকল মানুষকে একত্র করবেন। মুমিনরা দাঁড়াবে, বেহেশত তাদের নিকটস্থ করা হবে। তারা একে একে পর্যায়ক্রমে হজরত আদম (আ.), হজরত ইবরাহীম (আ.), হজরত মুসা (আ.), হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে বেহেশতের দরজা খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে আরজি পেশ করবে।
কিন্তু তাঁরা সকলেই বিভিন্ন কারণ ও অজুহাত পেশ করে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর মানুষ শেষ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এলে তিনি উঠে দাঁড়াবেন। তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হবে এবং ‘আমানত’ ও ‘আত্মীয়তার বন্ধন’ সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলসিরাতের ডানে বামে অবস্থান করে নেবে। (আংশিক)
মুসলিম শরিফের এই হাদিসের বর্ণনায় প্রতীয়মান হয়, মানবজাতির পুলসিরাত অতিক্রমকালে ‘আমানত’ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে পুলসিরাত পারাপার ও বেহেশতে প্রবেশের যোগ্যতা প্রমাণের সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করবে এবং তার দেয়া সাক্ষ্য অনুসারে মানুষের পুলসিরাত পারাপারের গতি ও প্রকৃতি, এমনকি সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ণীত হবে বলে হাদিসটির বাকি অংশে উল্লেখ রয়েছে। ভেবে দেখুন, আমরা এ অপরিহার্য সুন্নতটির প্রতি কতই না উদাসীন হয়ে থাকি।
হাতে গোনা পোশাকি সুন্নত মেনে চলে আত্মতুষ্টিতে ভোগী আর অন্যকে মন্দারোপ করি। অথচ হতে পারে আমার চেয়েও ওই ব্যক্তি অধিক সৎ ও নিরাপদ, যদি তার ভেতরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শিক বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক সুন্নতসমূহ থেকে থাকে, যা হয়তো আমার মধ্যে ততটা নেই বা আদৌ নেই। আমরা কি এভাবে কখনো ভেবে দেখি!
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ অনুযায়ী আমানত গ্রহণ, সংরক্ষণ ও যথাযথ আদায়ের পবিত্র সুন্নতটি পালনের জন্য আল্লাহর কাছে যোগ্যতা ও মানসিকতা কামনা করা আমাদের উচিত। সেই সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই মেঘে ঢাকা সুন্নতের পাবন্দ হওয়া উচিত। যা কেবল মানুষের চোখে ইজ্জত ও সমীহই বৃদ্ধি করে না, বরং ঈমান, তাকওয়া ও খুলুসিয়াতের পরীক্ষাও নেয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Zulfiqar Ahmed ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
মুমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সে আমানতদার হয়। মুমিনের কাছে জীবনের সর্বাপেক্ষা সম্পদ হলো আমানতদারী। আমানতদারী একজন মুমিনের নিদর্শন। এ কারণে মুমিন নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করে হলেও আমানতদারী রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
আমানতদারীর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন, আমানত তার হকদারকে প্রত্যাবর্তন করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দিচ্ছেন তা কত উত্কৃষ্ট আল্লাহ সর্বশ্রোতা আল্লাহ সর্বস্রষ্টা।’ (সূরা নিসা : ৪৮)।
Total Reply(0)
রিপন ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
শুকরিয়া। একটি সময়পোযোগী লেখার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন।
Total Reply(0)
আখতার হাবিব ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
আমানতদারী শুধু হকদারকে হক বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করাটাও আমানতদারী। আর এই দায়িত্ব অর্পণ যেমনিভাবে বান্দার পক্ষ থেকে অন্য বান্দার ওপর হতে পারে আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতিও হতে পারে।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
আল্লাহ মানুষকে সুস্থ বিবেক, হাত, পা, চক্ষুসহ যত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ-প্রদত্ত এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশের বাইরে, পছন্দের বাইরে কোনোভাবে ব্যবহার করে তবে সে কিয়ামতের দিন খেয়ানতকারীদের দলভুক্ত হয়ে উঠবে।
Total Reply(0)
Shah Alam Khan ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
আমাদের সব ধরনের খেয়ানত বর্জন করে মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আমানতদারীর বিশেষ গুণ অর্জন করতে হবে। আর তখনই আমরা নিজেদের মুমিন পরিচয় দিতে পারব। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন, রসুলে কারিম (সা.)-এর কোনো বক্তৃতা এমন ছিল না যেখানে তিনি এ কথা না বলেছেন যে যার চরিত্রে আমানতদারী নেই তার ইমান নেই। আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার দীন নেই। (মুসনাদে আহমাদ)।
Total Reply(0)
রুবেল ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
আসুন আমরা সব ধরনের আমানত রক্ষা করি, খেয়ানতের মহামারী থেকে দূরে থাকি। আল্লাহ মেহেরবানি করে আমাদের সব ক্ষেত্রে আমানতদারী রক্ষা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Mohammed ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
রাসূল (ছাঃ) নবুঅত লাভের পূর্ব থেকেই ‘আল-আমীন’ অর্থাৎ বিশ্বস্ত ও আমানতদার হিসাবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সে সময় তার সমাজ ব্যবস্থায় অন্যান্য মানুষের মাঝে এই উত্তম গুণটি বিদ্যমান ছিল না। যার ফলে তাদের সমাজ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে ওঠে।
Total Reply(0)
আবু নাঈম ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
আমানত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা রক্ষা করা ঈমানের অপররিহার্য অঙ্গ। পক্ষান্তরে আমানতের খেয়ানত ঈমানহীনতার পরিচায়ক। যার জন্য পরকালে কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। তাই সকলকে আমানত রক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া যরূরী। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমানতের দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করার তাওফীক দিন, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তা কায়েম করার শক্তি সামর্থ্য দান করুন-আমীন!
Total Reply(0)
Shanto ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪০ পিএম says : 0
Amaderke allah hedayt Dan koruk
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন