সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলাম গ্রহণের জন্য যে সব গুণাবলি প্রয়োজন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৪ জানুয়ারি, ২০১৯

যদিও ইউরোপের কপট পন্ডিতদের দাবি হচ্ছে এই যে, আরবে ইসলাম শুধুমাত্র তরবারীর জোরেই সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু তবুও প্রাথমিক পর্যায়ে যে সকল গোত্র এবং যে সব ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তাদের গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম নিজের জন্য শুধুমাত্র সংবেদনশীল প্রভাব কবুলকারী অন্তরের প্রত্যাশী ছিল এবং যখনই এই বাসা পাওয়া যেত, তখনই তার সামনে এই পবিত্র পাখি স্বীয় ডানা মেলে দিত। তাই দেখা যায়, নবুওতের প্রাথমিক পর্যায়ে যে সকল ব্যক্তিত্ব ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তারা ছিলেন এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
যারা নেক স্বভাব, ঈমানদার, সত্যপ্রিয় এবং সত্যানুরাগী ছিলেন। যারা নবুওতের গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। অতীত ঐশী ধর্মগুলো সম্পর্কে তারা কিছুটা অবহিত ছিলেন। তারা ব্যবহারিক জীবন যাত্রা ও সভ্যতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন। ব্যক্তি বিশেষ ছাড়া যে সকল গোত্র এবং আবাদি ইসলাম গ্রহণের অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছেন, তারাও ছিলেন একই গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
আরবের দু’টি পৃথক অংশ উত্তর আরব ও দক্ষিণ আরবের মাঝে সবচেয়ে বেশি ইসলামের কামিয়াবি ঘটেছে আরবের দক্ষিণাংশে। অর্থাৎ ইয়েমেন, আম্মান, বাহরাইন ও ইয়ামামায়। উত্তর আরবের মাঝে মদিনা মুনাওয়ারাহ এবং এর আশাপাশ এলাকায়। কেননা, তারা সভ্যতার ক্ষেত্রে দুনিয়ার দু’টি বিশেষ সুসভ্য জাতি, ইরানি এবং রোমীয়দের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিল। আর ধর্মীয় দিক থেকে ইহুদি এবং নাসারাদের সাথে তাদের মেলামেশা ও বাধাহীনভাবে গমণাগমন করার পথ উন্মুক্ত ছিল। মদিনাবাসীও ইহুদিদের সভ্যতা, ব্যবহারিক জীবন যাত্রা, বর্ণনাবলি ও রুসম-রেওয়াজ সম্পর্কে খুবই আগ্রহান্বিত ছিল। (মুস্তাদরকের হাকেম : দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫)।
ইসলামকে বিরুদ্ধবাদী আরবদের সাথে যে সকল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল, এর সব কিছুই সংঘটিত হয়েছিল নজদ এবং হিজাজ অঞ্চলে। কিন্তু মুসলমানদের কোনো সশ্রস্ত্র সেনাবাহিনী মদিনা, ইয়েমেন, আম্মান, ইয়ামামাহ এবং বাহরাইনকে জয় করার জন্য প্রেরণ করতে হয়নি। মদিনার আনসারগণ স্বয়ং মক্কা আগমন করে সাদরে ইসলাম কবুল করেছিল। মদিনার আশেপাশে গোত্রগুলোর মাঝে গিফার গোত্রের লোকজন স্বয়ং মক্কায় আগমন করে তরবারীর সামনে দাঁড়িয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করেছিল।
ইয়েমেনের দাউস গোত্রের লোকজন মক্কায় আগমন করে ঈমানের দৌলত অর্জন করেছিল এবং তার সর্দার নিজের দুর্গকে ইসলামের আশ্রয়ের জন্য পেশ করেছিল। আশয়ার গোত্রও সে যুগে গায়েবানাভাবে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিল। হামাদানের গোত্র হযরত আলী (রা.)-এর আহবানে একদিনে মুসলমান হয়েছিলেন। আম্মানের অবস্থাও একই ছিল। সেখানেও ইসলাম স্বীয় তাবলিগী প্রচেষ্টার মাধ্যমে শক্তি অর্জন করেছে।
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক গোত্রের কাছে একজন লোক প্রেরণ করলেন। সেখানকার লোকজন তার সাথে রূঢ় ব্যবহার করে এবং তাকে অশেষ লাঞ্ছনা গঞ্জনা দেয়। সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে এই ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে পেশ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি আম্মানবাসীরা হতো তাহলে তোমাকে গালি দিত না, মারধর করত না। (সহিহ মুসলিম : ফাজায়েলে আহলে আম্মান)।
এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলামের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল জিহালত ও অজ্ঞতা। তার প্রচার ও প্রসারের সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তারকারী এবং নাড়া দেয়ার বস্তু ছিল তমদ্দুন, আচার-ব্যবহার, উন্নত চরিত, আসমানী কিতাব সম্পর্কে সচেতনতা এবং অন্যান্য ধর্ম ও মাজহাব সম্বন্ধে অবহিত হওয়া। খোদ কুরআনুল কারিম এ কথাই প্রকাশ করছে।
ইরশাদ হচ্ছে, ‘গ্রাম্য বেদুইনরা কুফুরি ও নিফাকে খুবই মজবুত। এবং তারা সেই হুকুম-আহকাম যা আল্লাহপাক তার রাসূলের ওপর নাজিল করেছেন, তৎসম্পর্কে অজ্ঞ থাকার অধিক নিকটবর্তী, অবশ্যই আল্লাহপাক মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়।’ (সূরা তাওবাহ : রকু ১২)। এই মর্মজ্ঞাপক আয়াত আরো আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Zulfiqar Ahmed ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
মানুষের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি বিকাশের ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মানবতার মুক্তির একমাত্র পাথেয় পবিত্র ধর্ম ইসলামে নৈতিকতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
রিপন ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
নৈতিকতার সপক্ষে এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বর্ণনায় পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ মানুষের এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার সৎকর্ম ও অসৎকর্মের জ্ঞানদান করেছেন। সেই সফলকাম হবে যে নিজকে পবিত্র করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।’ (সুরা শামস, আয়াত ৭-১০)।
Total Reply(0)
jewel ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সুবিচার, কল্যাণ কামনা ও আত্মীয়তার বন্ধনকে সুদৃঢ় করার নির্দেশ দেন এবং অন্যায়-অশ্লীলতা, জুলুম ও খোদাদ্রোহিতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তোমাদের নসিহত করেন এ জন্য যে, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯০)
Total Reply(0)
Jahirul Islam ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
ইসলাম মানুষের জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। যারা ইসলামকে জীবন-বিধান হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারাই মুসলমান। মানুষ ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিতে হলে প্রথমেই তাকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।হাদিসে এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীর ব্যাপারে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
Total Reply(0)
Hasanat Hosain ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
ইসলাম গ্রহণকারী প্রত্যেক মুসলমানকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পছন্দনীয় দরজা দিয়ে প্রবেশের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Ali Akbar Bokool ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:০০ এএম says : 0
''পাখী''র উপমা----> ধর্মের ক্ষেত্রে 'বেমানান' !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন