ইসলাম বিচার বিভাগীয় কর্মকান্ডের সর্বত্র আদল ও ইনসাফের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত কর্তব্য বলে নির্দেশ করেছে। সুতরাং বিচার বিভাগীয় কর্মকান্ডে আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা’ সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু তা-ই নয়, লিখিত দলিল দস্তাবেজের ক্ষেত্রেও তা একান্ত প্রয়োজনীয়।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনের ঘোষণা করা হয়েছে: ক. এবং তোমাদের চুক্তিপত্রগুলো যেন কোনো লেখক ইনসাফের সাথে লিখে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)। খ. তারপর যার জিম্মায় এ দায়িত্ব পড়বে, যদি সে স্বল্প বুদ্ধির হয়, কিংবা মা’জুর হয়, কিংবা নিজে উদ্দেশ্য পূরণে অপরাগ হয়, তাহলে তার অভিভাবক যেন ইনসাফের সাথে চুক্তির ভাষা বলে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)।
বস্তুত: সাক্ষ্যদান এবং বিচার মীমাংসার সময় অধিকাংশ লোকের ঈমান টল টলায়মান হয়ে যায়। একদিকে অভিযোগ পেশকারী যদি স্বীয় আত্মীয়, প্রতিবেশী হয় অথবা এর প্রতি সাক্ষী কিংবা বিচারকের যদি শত্রুতা থাকে, তাহলে বিষয়টি আরও কঠিনরূপ ধারণ করে। কিন্তু ইসলামের নৈতিক শিক্ষা এ অবস্থায়ও আদল ও ইনসাফের সীমারেখা অতিক্রম করাকে বৈধতা দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. এবং (সাক্ষ্য দিতে হোক অথবা ফায়সালা করতে হোক) যখন কথা বলবে, তখন (বাদী ও বিবাদী পক্ষ) নিজের আত্মীয় পরিজন হলেও ইনসাফকে অগ্রাধিকার দিবে। (সূরা আনয়াম: রুকু ১৯)। খ. ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনের প্রতি প্ররোচিত না করে, তোমরা সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার অধিক নিকটতর।’ (সূরা মায়িদাহ: রুকু ২)।
এখানে প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে, পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত যেন তোমাদেরকে সুবিচার থেকে বিরত না রাখে। এবং দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে যে, কারও দুশমনী যেন তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিরত না রাখে। কেননা, সকল অবস্থায় আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে তাকওয়ার নিদর্শন।
বর্তমান সময়ের মত, পূর্বেও ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন ছিল। এতদসত্তে¡ও রাসূলুল্লাহ সা. এর জবান মোবারক হতে অহীয়ে ইলাহীর এই বাণী ঘোষিত হয়েছে, ‘বল আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি এবং আমি তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি, আল্লাহপাকই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ওপর এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের ওপর বর্তাবে। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো বিবাদ-বিসম্বাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্রিত করবেন এবং তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা বাকারাহ: রুকু ২)।
এই আয়াতে কারীমায় যে আদল ও ইনসাফের কথা বলা হয়েছে, তার কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন ১. যে সত্যতা আমার নিকট এসেছে তাকে আমি বারবার তোমাদের নিকট পৌঁছে দেব। ২. শুধু কেবল ধর্মীয় বিরোধিতার কারণে তোমাদের প্রতি বে-ইনসাফী করা যাবে না। বরং তা-ই করা হবে, যা আদল ও ইনসাফের পরিচায়ক। ৩. এতদিন পর্যন্ত তোমাদের মাঝে বিভিন্ন অভিযোগের ফায়সালায় যে দিকটি জারী আছে, বিত্তবান ও কুলীনদের প্রতি সমীহ ভাব পোষণ করা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা, আমার প্রতিপালক এমনটি করতে আমাকে নিষেধ করেছেন এবং হুকুম দিয়েছেন যে, আম ও খাস, আমীর ও গরিব সকলের সাথে একই রকম সমতাসুলভ ব্যবহার করবে। কেননা, আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক এক। আমরা সবাই তার বান্দাহ বা দাস। তাই, তার বান্দাহদের জন্য একই আইন হওয়া দরকার। আমরা এবং তোমরা সকলেই নিজ নিজ আমলের প্রতিফল ভোগ করব। এতে বিবাদ বিসম্বাদের কোনোই হেতু নেই। সকলকেই কিয়ামতের দিন তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যার কাজ তিনি পছন্দ করবেন তাকে পুরস্কৃত করবেন এবং যার কাজ মন্দ বলে বিবেচিত হবে, তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
উপরোক্ত আলোচনা ও আয়াতসমূহের আলোকে আদলের খেলাফ এক একটি চিহ্নকে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে যে, ব্যবহারিক কর্মকান্ডে আদল ও ইনসাফের সহায়তা করা যেন সর্ববস্থায় তোমাদের মূল উদ্দেশ্য হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন