বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিচার বিভাগীয় কর্মকান্ডে আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ইসলাম বিচার বিভাগীয় কর্মকান্ডের সর্বত্র আদল ও ইনসাফের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত কর্তব্য বলে নির্দেশ করেছে। সুতরাং বিচার বিভাগীয় কর্মকান্ডে আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা’ সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু তা-ই নয়, লিখিত দলিল দস্তাবেজের ক্ষেত্রেও তা একান্ত প্রয়োজনীয়।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনের ঘোষণা করা হয়েছে: ক. এবং তোমাদের চুক্তিপত্রগুলো যেন কোনো লেখক ইনসাফের সাথে লিখে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)। খ. তারপর যার জিম্মায় এ দায়িত্ব পড়বে, যদি সে স্বল্প বুদ্ধির হয়, কিংবা মা’জুর হয়, কিংবা নিজে উদ্দেশ্য পূরণে অপরাগ হয়, তাহলে তার অভিভাবক যেন ইনসাফের সাথে চুক্তির ভাষা বলে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)।
বস্তুত: সাক্ষ্যদান এবং বিচার মীমাংসার সময় অধিকাংশ লোকের ঈমান টল টলায়মান হয়ে যায়। একদিকে অভিযোগ পেশকারী যদি স্বীয় আত্মীয়, প্রতিবেশী হয় অথবা এর প্রতি সাক্ষী কিংবা বিচারকের যদি শত্রুতা থাকে, তাহলে বিষয়টি আরও কঠিনরূপ ধারণ করে। কিন্তু ইসলামের নৈতিক শিক্ষা এ অবস্থায়ও আদল ও ইনসাফের সীমারেখা অতিক্রম করাকে বৈধতা দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. এবং (সাক্ষ্য দিতে হোক অথবা ফায়সালা করতে হোক) যখন কথা বলবে, তখন (বাদী ও বিবাদী পক্ষ) নিজের আত্মীয় পরিজন হলেও ইনসাফকে অগ্রাধিকার দিবে। (সূরা আনয়াম: রুকু ১৯)। খ. ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনের প্রতি প্ররোচিত না করে, তোমরা সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার অধিক নিকটতর।’ (সূরা মায়িদাহ: রুকু ২)।
এখানে প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে, পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত যেন তোমাদেরকে সুবিচার থেকে বিরত না রাখে। এবং দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে যে, কারও দুশমনী যেন তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিরত না রাখে। কেননা, সকল অবস্থায় আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে তাকওয়ার নিদর্শন।
বর্তমান সময়ের মত, পূর্বেও ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন ছিল। এতদসত্তে¡ও রাসূলুল্লাহ সা. এর জবান মোবারক হতে অহীয়ে ইলাহীর এই বাণী ঘোষিত হয়েছে, ‘বল আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি এবং আমি তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি, আল্লাহপাকই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ওপর এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের ওপর বর্তাবে। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো বিবাদ-বিসম্বাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্রিত করবেন এবং তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা বাকারাহ: রুকু ২)।
এই আয়াতে কারীমায় যে আদল ও ইনসাফের কথা বলা হয়েছে, তার কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন ১. যে সত্যতা আমার নিকট এসেছে তাকে আমি বারবার তোমাদের নিকট পৌঁছে দেব। ২. শুধু কেবল ধর্মীয় বিরোধিতার কারণে তোমাদের প্রতি বে-ইনসাফী করা যাবে না। বরং তা-ই করা হবে, যা আদল ও ইনসাফের পরিচায়ক। ৩. এতদিন পর্যন্ত তোমাদের মাঝে বিভিন্ন অভিযোগের ফায়সালায় যে দিকটি জারী আছে, বিত্তবান ও কুলীনদের প্রতি সমীহ ভাব পোষণ করা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা, আমার প্রতিপালক এমনটি করতে আমাকে নিষেধ করেছেন এবং হুকুম দিয়েছেন যে, আম ও খাস, আমীর ও গরিব সকলের সাথে একই রকম সমতাসুলভ ব্যবহার করবে। কেননা, আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক এক। আমরা সবাই তার বান্দাহ বা দাস। তাই, তার বান্দাহদের জন্য একই আইন হওয়া দরকার। আমরা এবং তোমরা সকলেই নিজ নিজ আমলের প্রতিফল ভোগ করব। এতে বিবাদ বিসম্বাদের কোনোই হেতু নেই। সকলকেই কিয়ামতের দিন তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যার কাজ তিনি পছন্দ করবেন তাকে পুরস্কৃত করবেন এবং যার কাজ মন্দ বলে বিবেচিত হবে, তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
উপরোক্ত আলোচনা ও আয়াতসমূহের আলোকে আদলের খেলাফ এক একটি চিহ্নকে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে যে, ব্যবহারিক কর্মকান্ডে আদল ও ইনসাফের সহায়তা করা যেন সর্ববস্থায় তোমাদের মূল উদ্দেশ্য হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
আলা উদ্দিন ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। আল্লাহপাক হচ্ছেন সবচেয়ে বড় ন্যায়বিচারক। যেহেতু ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র আল্লাহরই কাজ, তাই ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান ও শাসনকার্যে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহপাক এ নির্দেশই প্রদান করেন যে, তারা যেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিজেদের কর্তৃত্বের সদ্ব্যবহার করেন।
Total Reply(0)
খিলজি বারি ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘হে যারা ইমান এনেছো! তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে সে ধনী হোক বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হও, সে জন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বলো অথবা সত্যকে এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখো, তোমরা যা করো সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ পুরোপুরি অবগত আছেন’ (সুরা নেসা, আয়াত : ১৩৫)।
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
শুধু সুবিচার প্রতিষ্ঠার কথাই নয়, বরং সুবিচারের পতাকাকেও সমুন্নত রাখতে হবে। যেখানেই ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হতে দেখা যাবে, সেখানে তা সমুন্নত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মামলায় কোনো পক্ষের হার-জিতের জন্য সাক্ষ্য নয়, বরং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সাক্ষ্য দিতে হবে। কেননা সত্য সাক্ষ্য ব্যতিরেকে সুবিচারের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সত্য সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যদি নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগে অথবা নিজ পিতা-মাতার প্রতিকূলেও যদি যায় বা নিকটাত্মীয়-পরিজনের স্বার্থে আঘাত লাগে, তবুও সত্য সাক্ষ্য দিতে হবে। ন্যায়বিচারের উচ্চ মানদ- ছাড়া সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সত্যকে প্রধান মাধ্যম বানাতে হবে।
Total Reply(0)
কাজী মুস্তাফিজ ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
বর্তমান পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’-এর মূল লক্ষ্য হলো প্রত্যেককে তার হক বা প্রাপ্য অংশ পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, উচু-নিচু, সাদা-কালো আরব-অনারব, সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, দল-মত নির্বিশেষে কেউ কোন রকম অন্যায়-অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হবে না। পৃথিবীতে নবী ও রাসূলগণের প্রধান কাজ ছিল আল্লাহর বিধানের আলোকে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক এক শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
Total Reply(0)
ফিরোজ রশিদ ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
আধুনিক বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই রাসূলুল্লাহ স.-এর সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে লক্ষ্য করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে মানবরচিত মতবাদের মাধ্যমে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব না।
Total Reply(0)
খায়রুল ইসলাম বিপু ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহতাআলা শাসনকার্যে নিয়োজিত সবাইকে ন্যায়বিচার করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর রুবেন ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
বর্তমান বিশ্ব-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, চারিদিকে অশান্তি ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ বিরাজমান। এ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ মানুষের সার্বিক জীবন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের অভাব। মুসলিম বিশ্ব এবং তথাকথিত প্রগতিশীল পাশ্চাত্য সমাজ কেউই এ অশান্তি থেকে মুক্ত নয়। বিশ্ব-মুসলিম আজ একদিকে যেমন দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত, অন্যদিকে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, সামাজিক আচার-আচরণ, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এবং পরিবর্তিত বিশ্ব-পরিস্থিতির মোকাবিলা করাসহ দুনিয়াবী বহুক্ষেত্রে তারা ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ করতে ব্যর্থ,
Total Reply(0)
হক কথা ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
ন্যায়বিচার হচ্ছে মানবসভ্যতার প্রাণশক্তি। ন্যায়বিচার ব্যতীত কোনো সমাজ মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে টিকে থাকতে পারে না। একটি সমাজকে সত্যিকারার্থে মানব সমাজ বলা যায় না, যদি না তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান- এগুলো আমরা মৌলিক অধিকার বলি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন