শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন, কষ্ট প্রশমন, উপকার ও কল্যাণ সাধন-১

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

একটি হাদিস দিয়ে লেখাটি শুরু করতে চাই। হজরত আবু হুরায়রা রাজি. থেকে বর্ণিত হয়েছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ জনসাধারণের নামাজের ইমামতি করে সে যেন নামাজ দীর্ঘ না করে। কেননা, তাদের মধ্যে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোকজনও থাকে। যখন তোমরা একাকী নামাজ পড়ো তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারো। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
অপর বর্ণনায় রয়েছে, অর্থাৎ- ঠেকাগ্রস্ত, প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী। যেমন- প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হওয়া বা নির্দিষ্ট সময়ে যানবাহন ছেড়ে যাওয়া বা
কথামতো কোনো কাজ করা বা কোথাও পৌঁছানো ইত্যাদি প্রয়োজন।
অপর এক হাদিসে হজরত আবু কাতাদাহ রাজি. বর্ণনা করেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নামাজ পড়তে দাঁড়াই এবং ইচ্ছা থাকে দীর্ঘ করে শান্তিতে নামাজ পড়ব। কিন্তু যখন কোনো শিশুর কান্না শুনতে পাই, নামাজ সংক্ষেপ করে দিই এ জন্য যে, তার মায়ের কষ্ট বা পেরেশানি হবে। (সহিহ বুখারি)
আরো একটি হাদিসে হজরত আয়েশা রাজি. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এমন আমল করা ছেড়ে দিতেন, যা তিনি করতে ভালোবাসতেন। এমনটি শুধু এ ভয়ে করতেন, হয়তো তা আমার উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
সুবহানাল্লাহ! এই না হলে কি দয়াল নবী! আর আমরা! আমরা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব মানবিক চরিত্র-মাধুর্যকে তাঁর সুন্নত বলে মনে রাখি? মনেও রাখি না, পালনও করি না। আল্লাহ আমাদের এহেন গাফলত ও জাহালত থেকে মুক্ত রাখুন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাজি. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তাই সে তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করতে পারে না। তার ভাইকে কোনো শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোনো প্রয়োজন পূরণ করে দেয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি বিপদ বা কষ্ট দূর করে দেয়, মহান আল্লাহ তার কিয়ামতের বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাজি. থেকে বর্ণিত এমন আরেকটি হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। ক্রয়-বিক্রয়ে একে অপরকে প্রতারিত করবে না। পরস্পর শত্রুতা রাখবে না। একে অন্যকে এড়িয়ে চলবে না। একজনের ক্রয়-বিক্রয়ে দামদরকালে অন্যজন তাকে ডিঙিয়ে যাবে না এবং তোমরা আল্লাহর অনুগত ভাই ভাই হয়ে জীবনযাপন করবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Iqbal Chowdhury ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
মানবিক গুণাবলির মধ্যে মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করা একটি অন্যতম গুণ। সমাজে নিয়মশৃঙ্খলা, প্রেম-প্রীতি ও শ্রদ্ধা-সম্মানের এ মহৎ গুণের উসিলায় শান্তি নেমে আসে সমাজে। ইসলামে তাই অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সৎ স্বভাব ও সৎ আচরণের মাধ্যমে আমরা এ গুণটি জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ফুটিয়ে তুলতে পারি।
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
পরিবারের সদস্য হিসেবে আদব রক্ষা করা যেমন সবার উচিত, তেমনি মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শন করাও সবার কর্তব্য। মানুষের উত্তম স্বভাব ও শিষ্টাচার পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে উপকারে আসে, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টতা নির্ভর করে মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শনের ওপর।
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার নিমিত্তে বিভিন্ন নিয়মকানুন প্রবতির্ত হয়েছে। এসব নিয়মকানুনের কাযর্কারিতা সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে প্রচুর আলোচনা-পযার্লোচনা হয়। আলোচনায় ওই নিয়মসমূহ কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। চিরায়ত সেসব নিয়মকানুন মেনে চলাই হচ্ছে- নৈতিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ, যা ইসলাম শিখিয়েছে।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, যারা বড়দের শ্রদ্ধা করে না এবং ছোটদের স্নেহ করে না, তারা আমার উম্মত নন। তিনি আরও বলেছেন, যে যুবক কোনো বৃদ্ধের প্রতি তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহতায়ালা সেই যুবকের শেষ বয়সে তার জন্য সম্মানকারী ব্যক্তি পয়দা করে দেবেন। সম্মান বোধের এ মহান বাণী আমরা মনে রেখে বলতে পারি, প্রত্যেক ব্যক্তির পদমর্যাদা অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া, বয়োবৃদ্ধকে পিতার মতো সম্মান দেখানো এবং ছোটদের পুত্রের মতো স্নেহ করা মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় বহন করে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘তিনটি বিষয় দিয়ে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত ও মজবুত হয়। তাহল কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেই সালাম দেবে। মজলিসে এলে বসার স্থান দেবে এবং তিনি যে নামে সম্বোধন করলে খুশি হন, সেই নামে সম্বোধন করবে।
Total Reply(0)
রিপন ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
বতর্মান সময়ে প্রায় সব বয়সীদের মধ্যে নৈতিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে একটা পরস্পর বিরোধী অসন্তোষ বিরাজমান। বয়স্করা তরুণদের ওপর ক্ষুব্ধ যে- তারা মুরুব্বিদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে জানে না। আর তরুণরা আক্ষেপ করে বলে মুরুব্বিরা তাদের সব কিছুতেই বাঁধা দিয়ে থাকে, নাক গলায়। শহরকেন্দ্রিক সমাজে এই সমস্যাটা বেশি নজরে পড়ে। গ্রাম পযার্য়ে প্রত্যেকেই মোটামুটি পরস্পর পরিচিত- তাই সমস্যা তুলনামূলক কিছুটা কম। তার পরও নেই- তা বলা যাবে না।
Total Reply(0)
তৌফিক হাসান ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
মানবিক মূল্যবোধের কারণে আমাদের সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আমরা ব্যক্তি, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি কাজকর্ম জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সবার মধ্যে পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন করে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও সম্মান বোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেন এক পরিপূর্ণ ভালোবাসার বেহেশতি জগৎ গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
আসলে ইসলামি মূল্যবোধের সৌন্দর্য হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস প্রদর্শন- যা প্রত্যেকের কর্তব্য বলে মনে করা হয়। একজন মুসলিম তার প্রতিপালকের প্রতি কেমন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি রাখবে। তার আচরণ কিভাবে নির্ধারণ হবে এবং কিভাবে প্রভাবিত করবে তার এবং হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) সম্পর্ককে। তার এবং সমাজে বসবাসকারী অন্যান্যদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং আচরণ কেমন হওয়া উচিত- এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Jamal ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ পিএম says : 0
Assalamu Alikum Dear My Brather Any One Submitted Any Hadis Need Hadis Number Please Thank You.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন