সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আখেরাত অস্বীকারকারীদের ভিত্তিহীন সন্দেহ-সংশয়ের উত্তর

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কোরআন মাজীদ এ বিষয়ে শতাধিক জায়গায় আলোকপাত করেছে। আখেরাত অস্বীকারকারীদের সেসমস্ত দুর্বোধ্যতা ও যুক্তিহীন কাল্পনিক প্রশ্নের অবসান ঘটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াতও পড়ে দেখুন।
সূরা ইয়াসিনের একেবারে শেষাংশে আখেরাত সম্পর্কে সেসস্ত কাল্পনিক সন্দেহ-সংশয়ের জবাবদান প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ কুদরতের উদ্ধৃতি দিয়ে মুশরেকিনদের বুদ্ধিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘সেই একক ক্ষমতার অধিকারী যিনি আসমান, জমিন (এবং তন্মমধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তুকে) সৃষ্টি করেছেন তিনি কি এ ক্ষমতা রাখেন না যে, এমনি ধরনের আবারো সৃষ্টি করবেন? নিঃসন্দেহে তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। তিনি অসংখ্য সৃষ্টির স্রষ্টা এবং সর্বজ্ঞ। তার মহিমা তো এ রকম যে, তিনি যখনই কোনো কিছু সৃষ্টি করতে চান, তখন শুধু বলেন, ‘হয়ে যাও’ আর অমনি তা হয়ে যায়।’ (সূরা ইয়াসিন : আয়াত-৮১-৮২)। অর্থাৎ কোনো বস্তুকে অস্তিত্ব দান করতে এবং সৃষ্টি করতে শুধুমাত্র তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ই যথেষ্ট। এমতাবস্থায় নিজেরই সৃষ্ট কোনো সৃষ্টিকে একবার মৃত্যু দান করার পর পুনর্বার জীবিত করে দেয়া তার জন্য কঠিন কিছু নয়।
সূরা রূমে বলা হয়েছে, ‘তিনিই সৃষ্টিজগৎকে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, তারপর আবার তিনিই তাকে সৃষ্টি করবেন। আর (বলা বাহুল্য) একবার সৃষ্টি করার পর পুনরায় সৃষ্টি করা তার পক্ষে অনেক বেশি সহজ। আর আসমান ও জমিনে তার মহিমা সর্বোচ্চ। তিনি বড়ই পরাক্রমশীল (একক ক্ষমতাশীল) ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা রূম : আয়াত ২৭)। সূরা হজ্জে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষগণ কেয়ামত এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ-সংশয় থেকে থাকে, তা হলে (ভেবে দেখো) আমি তোমাদের তৈরি করেছি মাটির দ্বারা, অতঃপর বীর্যের দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্তপিন্ড থেকে, অতঃপর পূর্ণাকৃতি ও অপূর্ণাকৃতি খন্ড থেকে, যাতে আমি তোমাদের সম্মুখে আমার ক্ষমতা প্রকাশ করে দিতে পারি। আর আমি যে বীর্যকে ইচ্ছা জরায়ুতে স্থিতি দান করি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। তারপর বের করে আনি তোমাদেরকে শিশু বানিয়ে, যাতে অতঃপর তোমরা পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছাতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ থাকে যাদেরকে তুলে নেয়া হয় (যৌবনেই)। আবার কেউ কেউ থাকে যাদেরকে পৌঁছানো হয় (বার্ধক্যপূর্ণ) অথর্ব বয়স পর্যন্ত। (তার পরিণতি হয় এই যে,) জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভের পর পুনরায় তারা (সঙ্কুচিত হয়ে) জ্ঞানে খর্ব হয়ে থেকে যায়। আর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের আরেকটি প্রমাণ হলো এই যে, তোমরা দেখে থাকো, ভ‚মিকে বিশুদ্ধতার পর যখন তার ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন যেটি সজীব হয়ে উঠে, শস্যশ্যামল হয়ে যায় এবং নানা রকম সবুজ গাছ-গাছালি অঙ্কুরিত করে। এসব প্রক্রিয়া এজন্য যে, আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব সত্য। (আর যাতে তোমরা নিজের চোখে দেখে বুঝতে পারো যে,) তিনিই মৃতদের জীবনদাতা এবং সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ সক্ষম। আরো যেন বুঝতে পারো যে, অবশ্যই কেয়ামত সমাগত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর নিশ্চিতই আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জীবিত করে তুলবেন কবরে সমাহিত মৃতদেরকে।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৫-৭)।
কোরআনে বর্ণিত এসব আয়াতের সারসংক্ষেপ এটাই যে, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করার বিষয়টিতে সন্দিহান কিন্তু তা বুঝার ইচ্ছা পোষণকারী মানুষ যদি নিজের সৃষ্টি ও জন্মের ব্যাপারে এবং তার শৈশব থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত নিজের জীবনের এসব ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে চিন্তা করে, যাতে তার কোনো অধিকার চলে না এবং যা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হয়ে থাকে। তেমনিভাবে সে যদি ভ‚মির এই বিবর্তন সম্পর্কে চিন্তা করে যে, এক ঋতুতে তা সম্পূর্ণ বিশুষ্ক, নিষ্প্রাণ ও মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং তাতে জীবনের কোনো চমক বা কোনো তরঙ্গ দেখা যায় না; কিন্তু তারপর যখন আল্লাহর স্বীয় রহমতের পানি তার ওপর বর্ষণ করেন, তখন সেই মৃত ভ‚মির ভেতর থেকে জীবন ও সজীবতা শস্যের আকারে নির্গত হয়ে যায়। (মোট কথা, মানুষ যদি নিজের অস্তিত্ব এবং নিজের পায়ের তলার ভ‚মির এসব বিবর্তন নিয়ে সত্যিকার একজন জ্ঞানান্বেষীর মতো চিন্তাভাবনা করে,) তা হলে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান আর কেয়ামতের ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকতেই পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
আমিন মুন্সি ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
দুনিয়ার পরিচয়: দুনিয়া হলো মরুভূমির বালিকণর ন্যায়, দূর থেকে মনে হয় পানি। দৌড়ে গেলে দেখা যায় বালি আর বালি। সহজ সরল মানবজাতিকে ধেঁকা দিতেই দুনিয়া অভ্যস্ত। অথচ রহমাতুল্লিল আলামিনের উসিলায় আল্লাহতায়ালা এ দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ইবলিস-শয়তানের প্ররোচনায় কিছু কিছু মানব সৃষ্টির মোহে দুনিয়াকে স্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধরে নিজের এক খালিক (স্র)কে ভুলে যায়।
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
দুনিয়ার প্রতি অতি আসক্তি ও বিশ্বাসের কারণে তারা বলে থাকে, যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা বলে : আমরা কি উল্টো পায়ে প্রত্যাবর্তিত হবই। গলিত অস্থি হয়ে যাওয়ার পরও। তবে তো এ প্রত্যাবর্তন সর্বনাশা হবে।’ (সূরা নাজিআত:১০,১১,১২)।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
আখেরাত অস্বীকারকারীরা বিশ্বাস করে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সবই হলো পার্থিব। তাইতো তারা দীর্ঘ হায়াত কামনা করে থাকে। কিন্তু বাস্তব হলো সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহপাকের ফায়সালা যখন এসে যাবে তখন কে কোন অবস্থায় আছে তা দেখার সময় থাকে না। মালাকুল মউত ঠিকই তার প্রাণ বায়ু কব্জা করে নিয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই একেকটি ওয়াদা রয়েছে, যখন তাদের সে ওয়াদা এসে পৌঁছে যাবে, কখন না একদণ্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে।’ (সূরা ইউনুস:৪৯)।
Total Reply(0)
Mohammed Ali khan ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
দুনিয়ার মোহ মানবজাতিকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে ফেলে। ফলে সে কোনটা হক আর কোনটা না হক পার্থক্য করতে ভুলে যায়। অনেক সময় রসুল বা সঠিক ও সত্য পথকে সঠিকভাবে বোঝার পরও না বোঝার ভান করে থাকে।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর রুবেন ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
দুনিয়ার খেল তামাশায় লিপ্ত থাকে তার ঠিকানা জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ একিন ও বিশ্বাস করে পরকালের ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখে পরকালের সামানা তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি হতে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ (সূরা নাজিআত:৪০,৪১)।
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আল্লাহ শায়েখকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন