শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিবর্তনশীল এ পৃথিবীতে আদল ও ইনসাফের কোনো জুড়ি নেই। প্রকৃতপক্ষে কোনো বোঝাকে দু’টি সমান অংশে এমনভাবে বণ্টন করা, এ দু’টির মাঝে যেন সামান্য পরিমাণ কমবেশি না হয়। এ সুষম বণ্টনকে আরবিতে আদল বলা হয়। (আল মুফরাদাত : রাগেব ইস্ফাহানি)। এই মানদন্ড থেকেই ওই সকল অর্থ পয়দা হয়, যার মাঝে আমরা আদল শব্দটিকে ব্যবহার করি। মোটকথা, যে কথা আমরা বলি, অথবা যে কাজ আমরা করি, এতে যেন সততার পাল্লা কোনো দিকে ঝুঁকে না পড়ে এবং ওই কথা বলা ও ওই কাজ করা, যা সত্যতার মানদন্ডে বিশ্লেষণ করলে পরিপূর্ণরূপে যথার্থ বলে প্রতিপন্ন হয়। এই নিরীক্ষা থেকে অবশ্যই বোঝা যাবে যে, আখলাক ও নৈতিকতার দাঁড়িপাল্লায় আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আদল বা ন্যায় বিচার মূলত আল্লাহপাকেরই গুণ। হাদিস শরিফের যে সকল বর্ণনায় আল্লাহপাকের ৯৯টি গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তন্মধ্যে আদল বা ন্যায়পরায়ণতাও একটি। বিশেষজ্ঞগণ তার অর্থ এভাবে করেছেন যে, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির ফায়সালা সত্য হয়। তিনি সত্য কথা বলেন, এবং ওই কাজই করেন যা সত্য যথার্থ। (কিতাবুল আসমা ওয়াসসিফাত : বায়হাকি ৬১ পৃষ্ঠা)। কোরআনুল কারীমে বেশ কয়েকবার এ বিশেষত্বটি বিভিন্ন শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ক. আল্লাহপাক সত্যসহ ফায়সালা করেন।’ (সূরা মু’মিন : রুকু ২)। এটি হচ্ছে আদলের ব্যবহারিক দিকের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। খ. অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহপাক সত্য কথা বলেন।’ (সূরা আহজাব : রুকু ১)। এখানে আল্লাহপাকের কওলি বা বাকরীতির আদলের কথা বলা হয়েছে। এই উভয় দিক নির্দেশনাই নিম্নের আয়াতে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং তোমার প্রতিপালকের কথা সততা ও ইনসাফের সাথে পরিপূর্ণ হয়েছে। (সূরা আনয়াম : রুকু ১৪)।
দুনিয়ার এই সুবিশাল কারখানা যা আকাশ হতে জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত তা আল্লাহপাকের আদল ও ইনসাফের ওপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তিনি স্বীয় শাহানশাহী পরিপূর্ণ ইনসাফের সাথে কায়েম করেছেন এবং এটাই হচ্ছে তার ওয়াহদানিয়াত বা একত্বের চ‚ড়ান্ত দলীল। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহপাক সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর অন্য কোনো উপাস্য নেই এবং ফেরেশতামন্ডলী ও মনীষীগণ ও মহীয়ান আল্লাহ ইনসাফ নিয়ে সদা প্রস্তুত রয়েছেন।’ (সূরা আল ইমরান : রুকু ২)। এই আয়াতের মর্মের দ্বারা বোঝা যায় যে, আদল ও ইনসাফ শুধুমাত্র শৃঙ্খলা বিধান ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের জন্যই সুনির্দিষ্ট নয়, বরং জীবন ও জগতের সকল অংশেই আদলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই মহাবিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা কেবলমাত্র আদলের কারণেই কায়েম আছে। আল্লাহপাক আল কোরআনের একটি পরিপূর্ণ আয়াতে যেখানে উত্তম আচরণ সমূহের কথা বলেছেন, এতে সর্বপ্রথম আদল ও ইনসাফ কায়েম করার নির্দেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, অবশ্যই আল্লাহপাক আদল ও ইহসানের নির্দেশ করেছেন। (সূরা নাহল : রুকু ১৩)।
আদল ও ইনসাফ আইন ও সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ। ইহসান করা, ক্ষমা ও সদ্ব্যবহার করা নৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহপাক পৃথিবীর নিয়ম শৃঙ্খলা কায়েম রক্ষার জন্য সর্বপ্রথম আদল প্রতিষ্ঠার হুকুম করেছেন। এরপর ইহসানের তাগিদ করেছেন। যার দ্বারা মানুষের আত্মিক শক্তির পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। আর একথা সুস্পষ্ট যে, সারা বিশ্বের প্রতি দৃষ্টি রাখার দায়িত্ব কোনো ব্যক্তি বিশেষের পরিপূর্ণতার দায়িত্ব থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও এই ইজমালি শিক্ষার ওপরই মানুষকে ছেড়ে দেয়া হযনি। বরং মানব জিন্দেগির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অধ্যায় ও পরিমন্ডলেই আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, পারিবারিক জীবনে আদল ও ইনসাফের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়তা ওই সকল লোকদেরই হয়, যারা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছে। এ জন্য ওই সকল লোকদের আল্লাহপাক হুকুম করেছেন, ‘তারপর যদি এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ কর যে, স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ কায়েম করতে পারবে না, তা হলে একজন স্ত্রী গ্রহণ করো কিংবা কোনো দাসীকে স্ত্রীর মর্যাদা দান করো।’ (সূরা নিসা : রুকু ১)। অনুরূপভাবে স্ত্রীদের মতো এতিমদের অধিকার হেফাজতের জন্যও আদল ও ইনসাফের প্রয়োজন আছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা বিশেষ করে এতিমদের অধিকারের প্রতি ইনসাফের দৃষ্টি রাখবে। (সূরা নিসা : রুকু ১৯)। আর সাধারণ কায়-কারবারে আদল ও ইনসাফের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় দৈনন্দিন ক্রয়-বিক্রয়ে ওজন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা ইনসাফের সাথে ওজন ও পরিমাপ পরিপূর্ণ করো।’ (সূরা আনয়াম : রুকু ১৯)। সুতরাং নিখিল বিশ্বে আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম তা সহজেই অনুমেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Zulfiqar Ahmed ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের সূরা নিসার ১৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা সর্বদাই ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার জন্য সত্যের সাক্ষি হিসেবে পেশ করো যদি এই কাজটি তোমার নিজের পিতা-মাতার কিংবা নিজের আত্মীয়-স্বজনের উপরেও আসে। সে ব্যক্তি ধনি হোক বা গরিব হোক এটা কখনও দেখবে না। কেননা তাদের উভয়ের চাইতে আল্লাহ্র অধিকার অনেক বেশি। অতএব তুমি কখনও ন্যায় বিচার করতে খেয়াল খুশি অনুসরণ করো না।’
Total Reply(0)
আমিন মুন্সি ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
ইসলাম শাশ্বত, অবিনশ্বর-চিরন্তন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী জিন্দেগির পরতে পরতে ইনসাফ বা ন্যায়নীতির দৃষ্টান্ত রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য জায়গায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় বক্তব্য রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “আল্লাহ তা’আলা কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?” [আল কুরআন ৯৫ঃ৮]
Total Reply(0)
রিপন ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
“আর তিনিই সর্বোত্তম হুকুমদাতা ও শ্রেষ্ঠ বিচারক।” [আল কুরআন ৭ঃ৮৭]
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
মানব জীবনে আল্লাহর দেয়া বিধি বিধানই শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম। এ বিধান মেনেই জীবন পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় ইনসাফের ওপর কায়েম থাকা যাবে না। আর আল্লাহর নির্দেশও তাই
Total Reply(0)
শেখ সামাদ ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী শরী‘আহ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। সুবিচার ছাড়া মানুষের সম্মান, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক সাম্য সর্বোপরি মানুষের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ করা যায় না। একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি এবং সমৃদ্ধি নির্ভর করে আইনের শাসনের ওপর। আইনের শাসন ছাড়া দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন সম্ভব নয়। ন্যায় বিচারহীন সমাজে হানাহানি ও রক্তপাত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সে জাতি ধ্বংসের মুখে পতিত হতে পারে।
Total Reply(0)
আমির হামজা ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
যুগে যুগে আল্লাহ যত নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন তার উদ্দেশ্য সমাজে ন্যায় নিষ্ঠতা ও সুশৃঙ্খলার বিধান করা। মানুষের মাঝে যেমন হায়েনার চরিত্র বা পশুত্ব রয়েছে তেমনি ফেরেশতা সুলভ সুকুমার বৃত্তি ও রয়েছে। পশুত্বের ওপর সুন্দর গুণাবলীকে জাগিয়ে তোলাই নবী, রাসুল, আওলিয়া, আম্বিয়ার কাজ। নবী রাসুল প্রেরণের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, অত্যাচারী-অসভ্য-বর্বর লোকদেরকে সুসভ্য, ন্যায়ানুগ-সুশৃঙ্খল করাই ছিল তাদের কাজ।
Total Reply(0)
Kaysar A. Ovi ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
ন্যায় বিচারকের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেছেন, ‘যে বিচারে ভালো, সে-ই সর্বোত্তম ব্যক্তি। যে মুসলিম দু’পক্ষের মধ্যে সুবিচার করে দেয়া তা সাদাকাহ্ তুল্য।
Total Reply(0)
Kazi Jamal ১২ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
কতইনা ভয়ংকর হবে হিসাব নিকাশের দিন। সেদিন কারো কোন আশ্রয় থাকবে না। মানুষ তার আত্মীয়তার বন্ধন ভুলে যাবে। কেউ কাউকে চিনবে না। একে অপরের নিকট থেকে পলায়ন করবে। সত্যই তা অত্যন্ত ভয়ানক ও কঠিন পরিস্থিতি।
Total Reply(0)
মামুনুর রশিদ ২৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:২৯ পিএম says : 0
আল্লাহ সবচেয়ে বড়
Total Reply(0)
HM Islam Monir ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:২৮ পিএম says : 0
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কথাবার্তা, কাজকর্ম আচার-আচরণ, ন্যায়নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা ফরজ। যেহেতু ইসলাম ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে, তাই আদল-ই হলো ন্যায়বিচারের একমাত্র উপায়। আর ন্যায়নীতি অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পাদনা করাই হলো ইনসাফ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন