বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহ তায়ালার মধ্যে রহমতের সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়পরায়ণতাও রয়েছে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কোরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালার রহমত এবং তার ক্ষমা ও মার্জনার কথা বর্ণনা করার সাথে সাথে তার অন্য গুণ ন্যায়পরায়ণতা এবং উদ্ধত অপরাধীদের শাস্তি দানের কথাও বলা হয়েছে। যেমন- সূরা ফাতেহাতেই ‘রাব্বিল আলামিন ও আর রাহমান আর রাহিম’ এর সাথে সাথে তার ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দিন’ গুণেরও উল্লেখ করা হয়েছে।
এর উদ্দেশ্য ও কারণ হলো, আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত তথা করুণা ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কিত কোরআনি ঘোষণায় যেন কারো মনে এই বিভ্রান্তি না আসে যে, এবার পাপের খোলামেলা ছাড় হয়ে গেল। জীবন যেভাবে খুশি কাটানো যাবে। আল্লাহর রহমতের দরজা আমাদের জন্য অবারিত। এ বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য কোরআন মাজীদের জায়গায় জায়গায় রহমতের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার ন্যায়পরায়ণতার কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। এতদসংক্রান্ত কয়েকখানি আয়াত পাঠ করুন।
‘হে নবী, যদি তারা (এই পরিষ্কার বর্ণনা এবং দাবি প্রমাণের পরও) আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তা হলে আপনি তাদেরকে বলে দিন, তোমাদের পালনকর্তা বড়ই ব্যাপক রহমতের অধিকারী। (আর এ রহমতের কল্যাণেই তিনি তোমাদেরকে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মনে রেখো, অপরাধীদেরকে শাস্তি দেয়াও তারই আইন। কাজেই তোমরা যদি এ বিদ্রোহী ও অপরাধী জীবন থেকে প্রত্যাবর্তন না করো, তবে অবশ্যই এর কঠিন শাস্তি ভোগ করবে) এবং অপরাধীদের ওপর থেকে তার আজাব অপসারিত হতে পারে না।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১৪৭)।
সূরা হিজরে বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল, আমার বান্দাদের সতর্ক করে দিন যে, নিশ্চিতই আমি মহা ক্ষমাশীল এবং অত্যন্ত মেহেরবান। আর তেমনিভাবে এ ব্যাপারেও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, (অপরাধীদের জন্য) আমার আজাবও নিতান্ত বেদনাদায়ক।’ (সূরা হিজর : আয়াত ৪৯-৫০)।
সূরা মু’মিনের শুরুতে আল্লাহ তায়ালার মহিমা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তিনি পাপ মোচনকারী, তওবা গ্রহণকারী এবং (একই সঙ্গে অবাধ্য অপরাধীদের বেলায় তিনি) অতি কঠোর শাস্তি দানকারী। তিনি সবকিছুরই ক্ষমতা রাখেন। তাকে ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নেই। সবাইকে তারই কাছে ফিরে যেতে হবে।’ (সূরা মু’মিন : আয়াত ৩)।
কোনো কোনো জায়গায় আল্লাহ তায়ালার এ গুণটিকে অর্থাৎ, তার ন্যায়পরতা এবং অপরাধীদের শাস্তি দানের বিষয়টিকে অন্যভাবেও বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন- সূরা কলমে প্রশ্নবোধক আকারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি আমার অনুগত বান্দাদের নাফরমান বান্দাদের সমান করে দেবো? তোমাদের কী হলো, তোমরা কেমন কথা বলো? (অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে তোমরা এহেন অন্যায় ও প্রজ্ঞা বহির্ভূত বিষয় কেমন করে কল্পনা করছ যে, তিনি অনুগত আর অবাধ্যদের সাথে একই রকম আচরণ করবেন?)’। (সূরা কলম : আয়াত ৩৫-৩৬)।
এ বিষয়টিই সূরা জাসিয়াতে এভাবে বলা হয়েছে, ‘যারা অসৎকর্ম সম্পাদন করে তারা কি মনে করে যে, আমি সে অসৎকর্মীদের আমার সেসব বান্দার সমান করে দেবো, যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্মশীল জীবন যাপন করে? ফলে একই রকম হবে তাদের বেঁচে থাকা ও মৃত্যু? (এ ধরনের কল্পনাকারীরা হলো বোকা আর তাদের এ কল্পনা ভুল, আর) তারা সম্পূর্ণ মন্দ সিদ্ধান্ত আরোপ করে। (তারা লক্ষ করে না,) আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী ও আকাশকে (এবং সমগ্র জগৎ-সংসারকে) পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন। (তিনি সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা প্রজ্ঞার ভেতর দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুতরাং তার দ্বারা এহেন প্রজ্ঞাবিরোধী ও ন্যায়ের পরিপন্থী বিষয়ের আশা তারা কেমন করে করতে পারে?) এ জগৎ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো (এখানে বান্দাদের কর্ম করে যাওয়া এবং) সময় মতো প্রত্যেক ব্যক্তি যেন তার প্রতিদান পায়। (এই প্রতিদান ও শাস্তির বিষয়টিতে কখনো) কারো সাথে কোনো রকম অন্যায় ও বাড়াবাড়ি করা হবে না।’ (সূরা জাসিয়াহ : আয়াত ২১-২২)।
যা হোক, কোরআন বলে, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি নিতান্ত মমতাময় ও দয়ালু। তার দয়ার আঁচলে সবার জন্য পরিপূর্ণ স্থান রয়েছে। মারাত্মক অপরাধী ও মহাপাপীও যদি তার রহমত ও ক্ষমাপ্রত্যাশী হয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়, তা হলে তিনি তাকে ক্ষমা করতে এবং নিজ করুণার আঁচলে স্থান দিতে তৈরি রয়েছেন। কিন্তু এরই সঙ্গে তিনি ন্যায়পরায়ণও বটে। অবাধ্য, অপরাধীদের শাস্তি দেয়াও তার ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞারই দাবি।
কাজেই যে দুষ্কৃতকারী ও দুষ্ট, অবাধ্যতা ও দুষ্কৃতি পরিহার করবে না, উপদেশ উপরোধ সত্তে¡ও অবাধ্যতা, বিদ্রোহ এবং কুফর ও শিরকেই লিপ্ত থাকবে। আসন্ন সে জগতে (আখেরাতে) যাতে আল্লাহ তায়ালার সে ন্যায়পরায়ণতা গুণের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটবে, আল্লাহ তায়ালার রহমত ও করুণা থেকে সে সামান্যতম অংশও পাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আমিন মুন্সি ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। আল্লাহপাক হচ্ছেন সবচেয়ে বড় ন্যায়বিচারক। যেহেতু ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র আল্লাহরই কাজ, তাই ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান ও শাসনকার্যে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহপাক এ নির্দেশই প্রদান করেন যে, তারা যেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিজেদের কর্তৃত্বের সদ্ব্যবহার করেন।
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
অাল্লাহ ন্যায় পরায়নতা সদাচরন এবং অাত্নীয় স্বজনকে দান করার অাদেশ দেন এবং তিনি অশ্নীলতা অসগ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারন করেন তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্বরন রাখ (সুরা নাহল :৯০)
Total Reply(0)
Ali khan ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
শুধু সুবিচার প্রতিষ্ঠার কথাই নয়, বরং সুবিচারের পতাকাকেও সমুন্নত রাখতে হবে। যেখানেই ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হতে দেখা যাবে, সেখানে তা সমুন্নত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মামলায় কোনো পক্ষের হার-জিতের জন্য সাক্ষ্য নয়, বরং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সাক্ষ্য দিতে হবে। কেননা সত্য সাক্ষ্য ব্যতিরেকে সুবিচারের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সত্য সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যদি নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগে অথবা নিজ পিতা-মাতার প্রতিকূলেও যদি যায় বা নিকটাত্মীয়-পরিজনের স্বার্থে আঘাত লাগে, তবুও সত্য সাক্ষ্য দিতে হবে। ন্যায়বিচারের উচ্চ মানদ- ছাড়া সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সত্যকে প্রধান মাধ্যম বানাতে হবে।
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করাই মহানবী (সা.)-এর আগমণের উদ্দেশ্য এবং তিনি নিজ আমল দ্বারা সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষমও হয়েছিলেন। যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছেÑ ‘বলো, আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৯)।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
আমরা যারা নিজদের আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মনে করি, তাহলে আমাদের প্রত্যেককে এই অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা নিজেদের ঘর এবং সমাজের মাঝে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করে সমাজ ও দেশকে জান্নাত সদৃশ্য বানাব। পৃথিবীতে প্রকৃত ন্যায়ের শিক্ষা সুস্পষ্ট করে পৃথিবীকে ধ্বংসের গহ্বরে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষাকারী হব।
Total Reply(0)
রিপন ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
গোটা বিশ্ব অত্যন্ত বিপদসংকুল অবস্থায় আছে এবং ধ্বংসের দিকে অতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। মুসলমান, অমুসলিম, কারও মাঝেই আজ ইনসাফ অবশিষ্ট নেই। আর কেবল যে ইনসাফই অবশিষ্ট নেই তা নয়, বরং জুলুমের সব সীমাগুলোকেও ডিঙিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর চোখ উন্মোচন আর জুলুম থেকে বিরত রাখার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ধ্বংসের গহ্বরে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষার দায়িত্ব কেবল মুসলমানরাই পালন করতে পারে। কারণ মুসলমানদের আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের মতো এমন এক অস্ত্র দান করেছেন, যার ছায়াতলে আশ্রয় নিলে সবাই মুক্তি পেতে পারে
Total Reply(0)
নুরুল আবছার ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
আজকে ন্যায়বিচারের বড়ই অভাব। আর এ কারণেই সর্বত্র বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা দেখা দিচ্ছে। আল্লাহতাআলা শাসনকার্যে নিয়োজিত সবাইকে ন্যায়বিচার করার তৌফিক দান করুন। সেই সঙ্গে সারা পৃথিবীতে যেন আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য সবাইকে বেশি বেশি দোয়াও করা উচিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন