আইনে নেই, প্রতিষ্ঠিত কোন রেওয়াজ না থাকলেও নিছক ভাবের উদ্বেগের জন্যই দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে ৩টি পদ বা দায়িত্ব। একাডেমিক বা প্রশাসনিক কার্যক্রমের চেয়ে ভিসি তোষামদে ব্যস্ত এমন শিক্ষকদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক এ পদগুলোয় বসিয়েছেন স্বয়ং ভিসি। দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী সম্প্রতি সৃষ্টি করেছেন এমন কয়েকটি পদ। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাছানকে আইটি উপদেষ্টা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক ভুঁইয়াকে গণমাধ্যম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন উপাচার্য। গেল বছরের ৮ নভেম্বর রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হলেও উপদেষ্টারা কি দায়িত্ব পালন করবেন তার সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা উল্লেখ নেই। দায়িত্ব প্রাপ্তরা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। দায়িত্ব প্রাপ্তির পর বেশ কয়েকদিন ফেইসবুক থেকে শুরু করে সর্বত্র চলে তাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানোর পর্ব। কিন্তু কেন এই দায়িত্ব এবং কি কাজ তাদের? বিষয়টি যেন মরুভূমির মরিচিকার মতই রয়ে গেল। তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা মনে করেন।
‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধন আইন ২০১৩’ তন্ন তন্ন করেও এমন কোন পদ বা দায়িত্বের হদিস পাওয়া যায়নি। তাহলে কিভাবে এমন দায়িত্বের পদ সৃষ্টি করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটও তো এমটি অনুমোদন করতে পারে না তারপরও নেই সিন্ডিকেটের অনুমোদন। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েও এমন কোন পদ বা দায়িত্বের খবর পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন প্রক্টর, আইটি সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য রয়েছে আইটি সেল ও গণমাধ্যম সংক্রান্ত কাজের জন্য রয়েছে জনসংযোগ দপ্তর।
এদিকে এসব পদ তৈরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা গুলোতে তাদের ‘হুকুমাত’ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা এ সব দায়িত্বে নিয়োজিতদের (ভিসির কাছের হওয়ায়) খুশি করতে সদা ব্যস্ত থাকেন। নিয়োজিতরা একাডেমিক কাজের চেয়ে ভিসিকেই রাজি খুশির জন্য ব্যস্ত থাকেন বলে জানা যায়। শিক্ষকরা যদি ক্লাসে পাঠদান ও গবেষণাকে দূরে রেখে এ কাজেই বেশি সময় দেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম গতিহারা হবে এমনটি মনে করেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভিসিকে সর্বদা তোষামোদ করেন এমন ব্যাক্তিদের উপাহার সরূপ এসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। গণমাধ্যম উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর মো. মাহবুবুল হক ভুঁইয়া ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় কালে বলেন, ‘আমি নতুন একটি পদ পেয়েছি এটি আমার জন্য আনন্দের। যদিও এমন পদ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় কিনা সেটাও আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পদ বা দায়িত্বের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আমীর হোসেনের সাথে কথা বললে তারা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘ ভিসি অনেক নির্বাহী ক্ষমতা থাকলেও তবে তিনি এধরনের পদ সৃষ্টি করতে পারেননা।’
অন্য দিকে বিভিন্ন সময় সংবাদকর্মীরা ভিসি সঙ্গে মুঠোফোনে বা তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে তার নিয়োগকৃত গণমাধ্যম উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এমনটি জন্য তিনি (উপদেষ্টা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নন বরং ভিসির গণমাধ্যম উপদেষ্টা বলেই মনে করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্বিদ্যালয়ের কাজে গতি নিয়ে আসার জন্য ভিসি এ ধরনের পদ তৈরি করতে পারেন এবং যে কাউকেই এসব পদে দায়িত্ব দিতে পারেন। সব বিষয় যে আইনে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। এ পদগুলো আমরা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করবো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমার একার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব না। তাই যে ব্যাক্তি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সে পদে দায়িত্ব দিয়ে তার থেকে সহযোগিতা নিচ্ছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন