বিশ্ব নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর কবর মোবারক জিয়ারত করা মোস্তাহাব। তবে কেবল মোস্তাহাব মনে করাই শেষ কথা নয়, বরং তা উত্তম ইবাদতও বটে। কেননা, তা নেকির কাজ। সকল নেকির কাজ ইবাদতের শামিল। তাই মনে রাখা উচিত, রওজায়ে মুতাহহারা জিয়ারত বড় ধরনের ইবাদত, আনুগত্য ও এনকিয়াদের উচ্চস্তর এবং উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার সহজ রাস্তা। এ জন্য মদিনা শরিফে গমণকারীর উচিত মদিনা শরিফ সফরের প্রাক্কালে রওজা মোবারক জিয়ারতের নিয়ত করা। কেননা, সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর অন্যান্য বরকতময় স্থানের জিয়ারত হয়ে যাবে। এরূপ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অধিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। তবে যে ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম বিশ্বাস পোষণ করবে, তার প্রসঙ্গে মনে করতে হবে যে, সে ইসলামের রশ্মি স্বীয় গলদেশ হতে খুলে ফেলেছে। এমনকি আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নির্ভরযোগ্য আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনের বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে। (শরহুল যুরকানি আলাল মাওয়াহিব : খন্ড-১২, পৃ. ১৭৮)। উপর্যুক্ত বিষয়ের ওপর বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্য হতে কয়েকটি হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
ক. হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো কাজের প্রয়োজন ছাড়া শুধু আমার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করল, তার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করা আমার কর্তব্য হয়ে পড়ল। (মুজামে কবীর, তিবরানি : খন্ড-১২, পৃ. ২২৫)। খ. হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করল, তারপর আমার মসজিদের জিয়ারতের অভিলাষ রাখল, তার জন্য দু’টি মকবুল হজের সওয়াব লিখিত হবে। (ওয়াফাউল ওয়াফা : খন্ড-৪ পৃ. ১৩৭৪)। প্রসঙ্গত এ কথাও উল্লেখযোগ্য, রওজা মুবারকের জিয়ারতের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাজিম ও তাকরিম প্রকাশ পায়। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাজিম প্রদর্শন করা ওয়াজিব। এ জন্য কোনো কোনো আলেম বলেন, জিয়ারতের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান। তাদের মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। (শরহুল যুরকানি আলাল মাওয়াহিব : খন্ড-১২, পৃ. ১৮৩)। স্মর্তব্য যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরের পার্শ্বে হাজির হয়ে তার উছিলা দিয়ে দোয়া করা, শাফায়াতের আবেদন করা, এরূপ বলা- হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে মাফ করে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন। ইত্যাদি বরং মুস্তাহাব। এতদসংক্রান্ত প্রমাণাদি আল কুরআন, হাদিস শরিফ ও প্রামাণ্য কিতাবাদিতে পাওয়া যায়। যেমন- ক. আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘যদি তারা নিজেদের ওপর জুলুম করার পর আল্লাহর কাছে আসে তারপর তারা আল্লাহপাকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলও তাদের জন্য মাগফেরাত প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তওবা কবুলকারী দয়ালু পাবে।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৬৫)। খ. হজরত মালিক আদ্দার (রা.) বলেন, হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকালে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কবরের পাশে এস বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনি উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির আবেদন করুন। কেননা, তারা অনাবৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে গেল। রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে লোকটিকে দেখা দিয়ে নির্দেশ দিলেন, তুমি খলিফা ওমরের নিকট যাও। তাকে সালাম জানিয়ে খবর দাও যে, তার ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তাকে আরো বল, তুমি বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করো, তুমি বুদ্ধিমত্তা ধারণ করো। লোকটি ওমর (রা.)-এর কাছে হাজির হয়ে বিষয়টি অবহিত করলেন। হজরত ওমর (রা.) খুব কাঁদলেন। অতঃপর বললেন, হে আমার রব, আপনি আমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
‘ফতুলু’ গ্রন্থে হজরত সাইফ সূত্রে বর্ণিত আছে, উপরোক্ত স্বপ্নটি যিনি দেখেছিলেন, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবী হজরত বিলাল বিন হারিস সুযানি (রা.)। এ ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় হলো এই- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এই কামনা করা যে, তিনি যেন আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য আবেদন করেন। অথচ তিনি তখন বরযখের জগতে ছিলেন। এ অবস্থায়ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা তার জন্য সম্ভব ছিল। যেমনটি বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও সম্ভব আছে এবং থাকবে। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো এই- তিনি সুয়ালকারীর সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন। সুতরাং বৃষ্টির জন্য বা অন্য কোনো কিছুর জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে তার কাছে নিবেদন পেশ করার কোনো প্রতিবন্ধক আদৌ নেই। যেরকম তিনি দুনিয়াতে জীবিত থাকতে ছিলেন না। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ২/৪২১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন