বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রসঙ্গ : রওজায়ে মুতাহহারা জিয়ারত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিশ্ব নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর কবর মোবারক জিয়ারত করা মোস্তাহাব। তবে কেবল মোস্তাহাব মনে করাই শেষ কথা নয়, বরং তা উত্তম ইবাদতও বটে। কেননা, তা নেকির কাজ। সকল নেকির কাজ ইবাদতের শামিল। তাই মনে রাখা উচিত, রওজায়ে মুতাহহারা জিয়ারত বড় ধরনের ইবাদত, আনুগত্য ও এনকিয়াদের উচ্চস্তর এবং উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার সহজ রাস্তা। এ জন্য মদিনা শরিফে গমণকারীর উচিত মদিনা শরিফ সফরের প্রাক্কালে রওজা মোবারক জিয়ারতের নিয়ত করা। কেননা, সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর অন্যান্য বরকতময় স্থানের জিয়ারত হয়ে যাবে। এরূপ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অধিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। তবে যে ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম বিশ্বাস পোষণ করবে, তার প্রসঙ্গে মনে করতে হবে যে, সে ইসলামের রশ্মি স্বীয় গলদেশ হতে খুলে ফেলেছে। এমনকি আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নির্ভরযোগ্য আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনের বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে। (শরহুল যুরকানি আলাল মাওয়াহিব : খন্ড-১২, পৃ. ১৭৮)। উপর্যুক্ত বিষয়ের ওপর বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্য হতে কয়েকটি হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
ক. হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো কাজের প্রয়োজন ছাড়া শুধু আমার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করল, তার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করা আমার কর্তব্য হয়ে পড়ল। (মুজামে কবীর, তিবরানি : খন্ড-১২, পৃ. ২২৫)। খ. হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করল, তারপর আমার মসজিদের জিয়ারতের অভিলাষ রাখল, তার জন্য দু’টি মকবুল হজের সওয়াব লিখিত হবে। (ওয়াফাউল ওয়াফা : খন্ড-৪ পৃ. ১৩৭৪)। প্রসঙ্গত এ কথাও উল্লেখযোগ্য, রওজা মুবারকের জিয়ারতের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাজিম ও তাকরিম প্রকাশ পায়। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাজিম প্রদর্শন করা ওয়াজিব। এ জন্য কোনো কোনো আলেম বলেন, জিয়ারতের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান। তাদের মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। (শরহুল যুরকানি আলাল মাওয়াহিব : খন্ড-১২, পৃ. ১৮৩)। স্মর্তব্য যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরের পার্শ্বে হাজির হয়ে তার উছিলা দিয়ে দোয়া করা, শাফায়াতের আবেদন করা, এরূপ বলা- হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে মাফ করে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন। ইত্যাদি বরং মুস্তাহাব। এতদসংক্রান্ত প্রমাণাদি আল কুরআন, হাদিস শরিফ ও প্রামাণ্য কিতাবাদিতে পাওয়া যায়। যেমন- ক. আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘যদি তারা নিজেদের ওপর জুলুম করার পর আল্লাহর কাছে আসে তারপর তারা আল্লাহপাকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলও তাদের জন্য মাগফেরাত প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তওবা কবুলকারী দয়ালু পাবে।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৬৫)। খ. হজরত মালিক আদ্দার (রা.) বলেন, হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকালে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কবরের পাশে এস বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনি উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির আবেদন করুন। কেননা, তারা অনাবৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে গেল। রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে লোকটিকে দেখা দিয়ে নির্দেশ দিলেন, তুমি খলিফা ওমরের নিকট যাও। তাকে সালাম জানিয়ে খবর দাও যে, তার ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তাকে আরো বল, তুমি বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করো, তুমি বুদ্ধিমত্তা ধারণ করো। লোকটি ওমর (রা.)-এর কাছে হাজির হয়ে বিষয়টি অবহিত করলেন। হজরত ওমর (রা.) খুব কাঁদলেন। অতঃপর বললেন, হে আমার রব, আপনি আমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
‘ফতুলু’ গ্রন্থে হজরত সাইফ সূত্রে বর্ণিত আছে, উপরোক্ত স্বপ্নটি যিনি দেখেছিলেন, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবী হজরত বিলাল বিন হারিস সুযানি (রা.)। এ ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় হলো এই- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এই কামনা করা যে, তিনি যেন আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য আবেদন করেন। অথচ তিনি তখন বরযখের জগতে ছিলেন। এ অবস্থায়ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা তার জন্য সম্ভব ছিল। যেমনটি বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও সম্ভব আছে এবং থাকবে। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো এই- তিনি সুয়ালকারীর সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন। সুতরাং বৃষ্টির জন্য বা অন্য কোনো কিছুর জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে তার কাছে নিবেদন পেশ করার কোনো প্রতিবন্ধক আদৌ নেই। যেরকম তিনি দুনিয়াতে জীবিত থাকতে ছিলেন না। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ২/৪২১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
আমিন মুন্সি ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
হজ ও ওমরা পালনকারীদের মদিনা আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা, রওজায় সালাম পেশ করা। হাদিস ও ফিকাহের গ্রন্থগুলোতে এ বিষয়ে প্রচুর নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামি স্কলারদের মতে, মদিনায় আসা ইবাদতের অংশবিশেষ।
Total Reply(0)
রিপন ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়েগেলো। -সহিহ মুসলিম নবী করিম (সা.) আরও বলেন, যে হজ করলো কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করলো না; সে আমার প্রতি জুলুম করলো। -তিরমিজি
Total Reply(0)
বিপ্লব ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
রাসুল (সা.) এর রওজা জিয়ারত করা সব মোমিন ব্যক্তির কাম্য। মোমিন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর দুই হাত তুলে স্বীয় প্রভুর কাছে যেটি কামনা করে সেটি হলো, রাসুল (সা.) এর রওজা শরিফ জিয়ারত এর নসিব হওয়া। যারা প্রিয় নবী (সা.) কে ভালোবাসে তারা এই দোয়া করে। রাসুল (সা.) কে ভালোবাসা ঈমানি দায়িত্ব। নিজের স্বজনের চেয়ে প্রিয় নবী (সা.) কে ভালোবাসতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই।’ (বোখারি : ১৫)।
Total Reply(0)
কাবের আলী ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
রাসুল (সা.) ইহজগতে নেই। তিনি মদিনায় রওজায়ে আতহারে শায়িত আছেন। তাঁর কাছে সব উম্মতের পাঠানো সালাম পৌঁছানো হয়ে থাকে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নিযুক্ত একদল ফেরেশতা পৃথিবীতে ভ্রমণরত আছে। তারা আমার কাছে আমার উম্মতের পাঠানো সালাম পৌঁছে দিয়ে থাকে।’ (নাসাঈ)।
Total Reply(0)
সত্য পথের পথিক ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূণ স্থান হলো- নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক। উম্মুল মুমিনিন হয়রত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর পবিত্র রওজা মোবারক অবস্থিত। রাসূলের রওজার পাশে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) ও ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর কবর। পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি। এখানে হযরত ঈসা (আ.)-এর কবর হবে।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতের ফজিলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর তার রওজা মোবারক জিয়ারতে করলো, সে যেন রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জীবদ্দশায় দশন করলো।
Total Reply(0)
এস আলম ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
দুনিয়ার সব কবরের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশি জিয়ারতের উপযুক্ত স্থান হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক। তাই এর উদ্দেশে সফর করা উত্তম। এ কথার ওপর পূর্বাপর সব উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে।
Total Reply(0)
কবির আলী ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
রাসুল (সা.) এর রওজা জিয়ারতের সুযোগ পাওয়ার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় এবং বারবার জিয়ারতের সুযোগ দানে প্রভুর দরবারে আকুতি জানাতে হবে।
Total Reply(0)
সাইফ ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
জনাব মুন্সি সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকেও, আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের সকলকে আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সাঃ) এর অনুগত হওয়ার এবং সেই ভাবে নিজের ঈমানকে পূর্ন করার তৌফিক প্রধান করুন যে ঈমান ও ভালোবাসার আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সাঃ) আমদের উপর হকদার।
Total Reply(0)
Md Mohsin Khan ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:৩২ পিএম says : 0
জনাব মুন্সি সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকেও, আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের সকলকে আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সাঃ) এর অনুগত হওয়ার এবং সেই ভাবে নিজের ঈমানকে পূর্ন করার তৌফিক প্রধান করুন যে ঈমান ও ভালোবাসার আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সাঃ) আমদের উপর হকদার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন