সত্তা, গুণাবলি, কর্ম ও অধিকারে আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও অনন্যতার বর্ণনা করার সথে সাথে কুরআন মাজিদ এ কথাও বলে যে, তিনি অধিকারের ক্ষেত্রেও একক, শরিক বিহীন। বান্দাদের ওপর তার যেসব অধিকার রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কারো তা নেই। প্রশংসা ও সাধুবাদ তারই অধিকার। তিনিই প্রীতি ও ভীতির যোগ্য।
এমন উপযুক্ত তিনিই যার ওপর নির্ভর করা যায়, যার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা যায়। তিনিই প্রকৃত মালিক ও শাসক, যার শাসন মানা যায়। অর্থাৎ, বান্দাদের জন্য শরিয়ত তথা বিধান নির্ধারণ করা তারই অধিকার। তিনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী। তাই তার কাছেই প্রার্থনা জানাতে হবে এবং তিনিই ইলাহ এবং মা’বুদ। অতএব, তার এবং শুধুমাত্র তারই ইবাদত করা যাবে। তার সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে কুরআনের বর্ণনা শুনুন, ‘আর তিনিই আল্লাহ। তাকে ছাড়া কেউ ইবাদত ও উপাসনার যোগ্য নেই। দুনিয়া ও আখেরাতের শুধুমাত্র তিনিই প্রশংসা ও সাধুবাদের যোগ্য।’ (সূরা কাসাস : আয়াত ৭০)। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘সমস্ত প্রশংসা ও সাধুবাদ আল্লাহরই জন্য যিনি আসমান, জমিন ও সমগ্র জগৎ-সংসারের পালনকর্তা। আর শুধুমাত্র তারই জন্য মহিমা ও মহত্ব আসমান ও জমিনে। আর তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা জাসিয়াহ : আয়াত ৩৬-৩৭)।
নিজের সীমাহীন আশীর্বাদ, ইহসান ও পূর্ণাঙ্গতার দিক দিয়ে তিনিই এর যোগ্য যে, বান্দা সর্বাপেক্ষা অধিক মহব্বত পোষণ করবে তার প্রতি এবং তাকেই সবার চাইতে বেশি আপন জানবে। আর তার প্রজ্ঞাময় বিক্রম ও পরাক্রমের দিক দিয়ে তিনিই এমন যোগ্য যে, তার বান্দারা সর্বাধিক তাকেই ভয় করবে।
যেসব অজ্ঞ ও মূর্খ লোকেরা আল্লাহকে ছাড়া কিছু সত্তাকে এমন সাব্যস্ত করে রেখেছে, যাদের সাথে তারা উপাসনা ও বিনয়ের সম্পর্ক রাখে, তাদেরকে আল্লাহর সমান মহব্বত করে, এদের ব্যাপারে কুরআন বলেছে, ‘কিছু লোক এমন রয়েছে; যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যান্যদেরকে তার সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করে। তারা তাদের সাথে এমনি মহব্বত রাখে, যেমন মহব্বত আল্লাহর সাথে রাখা উচিত।
পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার তারা সর্বাধিক মহব্বত করে আল্লাহকে।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৬৫)। আর ভীতি সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা মানুষকে ভয় করবে এবং তার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।’ (সূরা তাওবা : আয়াত ১৩)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না; বরং আমাকে এবং শুধুমাত্র আমাকেই ভয় করো।’ (সূরা মায়েদা : আয়াত ৪৪)।
তেমনিভাবে আল্লাহ তায়লার উপরই নির্ভর করা যায় এবং তার কাছেই আশা করা যায়। এ ব্যাপারে কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘তিনিই আল্লাহ, আমদের কর্মনির্বাহী ও মালিক। সুতরাং সেই আল্লাহর প্রতি ঈমানদারদের ভরসা করা উচিত।’ (সূরা তাওবা : আয়াত ৫১)। সূরা হজ্জে বলা হয়েছে, ‘শুধুমাত্র আল্লাহরই আশ্রয় অবলম্বন করো দৃঢ়ভাবে। তিনিই তোমাদের কর্মনির্বাহী। আর আল্লাহ যার কর্মনির্বাহী হন, তার জন্য তিনি কতই না উত্তম কর্মনির্বাহী এবং উত্তম সাহায্যকারী।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৭৮)।
সূরা মুজ্জাম্মিলে বলা হয়েছে- ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক। তিনিই সত্যিকার মা’বুদ। তাকে ছাড়া সেউ ইবাদত-উপাসনার যোগ্য নেই। কাজেই তোমরা তাকেই নিজেদের কর্মনির্বাহী সাব্যস্ত করে নাও। আর প্রয়োজনে তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করো। (তারই সাহায্য প্রার্থনা করো।)’ (সূরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৯)।
কুরআনে পাকের জায়গায় জায়গায় বলা হয়েছে, আল্লাহই একমাত্র হুকুমদাতা এবং তার হুকুম তামিল করাই অপরিহার্য। বলা হয়েছে, ‘আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্তদাতা বিচারকের সন্ধান করব, অথচ তিনি তোমাদের প্রতি বিস্তারিত কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১১৪)।
যেসব মূর্খ আল্লাহকে ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির বলা কথাকে শরিয়ত সাব্যস্ত করে এবং তাদের অনুগত্যকে অপরিহার্য মনে করে, তাদের সম্পর্কে কুরআন বলেছে, ‘তাদের কি আর কোনো অংশীদার রয়েছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন ও বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা : আয়াত ২১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন