বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহ তায়ালা সর্ব বিষয়ের অভিভাবক ও কর্মসম্পাদক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কুরআন মাজিদ আল্লাহ তায়ালার ইতিবাচক গুণাবলি সম্পর্কে অনেকগুলো আয়াত উদ্ধৃত করেছে। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞাত। ছোট-বড়, প্রকাশ্য-গোপন কোনো বিষয়ই তার জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি একক ক্ষমতার অধিকারী। সব কিছুই তার ক্ষমতার আওতাভুক্ত। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা, অন্নদাতা এবং সবার যাবতীয় কর্মসম্পাদক, পালনকর্তা। সমগ্র জগৎ-সংসারের তিনিই মালিক, অধিপতি ও শাসক। যাবতীয় বিষয় তার সাম্রাজ্যভুক্ত। কোনো কিছুই তার অধিকার ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। তদুপরি তিনি অত্যন্ত করুণাময়, নিতান্ত মেহেরবান। এরই সাথে তার ভেতরে রয়েছে ন্যায়পরায়ণতার গুণ। অর্থাৎ, সৎকর্মী ও আনুগত্যপরায়ণ লোকদের তিনি নিজের বিশেষ করুণা ও আশীর্বাদে ভূষিত করেন। আর অবাধ্য অপরাধীদের স্বীয় মহিমা অনুযায়ী শাস্তি ও আজাব দান করেন।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির বর্ণনা এবং তার পরিচিতি ততক্ষণ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়, যতক্ষণ না সেসব বিষয় থেকে তার বিমুক্ততা ও পবিত্রতার কথাও বলে দেয়া হবে, যেগুলো তার পবিত্রতা, মহত্ত্ব ও মহিমার পরিপন্থী এবং যেগুলো সম্পর্কে মূর্খ ও আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের মাঝে কখনো কখনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় কিংবা হতে পারে। সে জন্য কুরআন মাজিদে শুধুমাত্র ইতিবাচক গুণাবলি বর্ণনা করেই ক্ষান্ত করা হয়নি, বরং তার পবিত্রতা ও মুক্ততার বিষয়গুলোও পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত পাঠ করে নেয়া যেতে পারে।
সূরা বনি ইসরাঈলের সর্বশেষ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই উদ্দেশে নিবেদিত, যার না আছে কোনো সন্তান-সন্ততি, না শাসন পরিচালনায় তার কোনো শরিক আছে এবং নাই বা দুর্বলতা ও শ্রান্তির দরুণ কেউ তার সাহায্যকারী রয়েছে। বস্তুত বিপুল পরিমাণে তার মহিমা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে থাকে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ১১১)।
সূরা আনআমের এক জায়গায় এ কথা বলার পর যে ‘মূর্খ এবং আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা আল্লাহর জন্য শরিকভাগী ও পুত্রকন্যা সাব্যস্ত করেছে।’ এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি সেসব বিষয় থেকে পবিত্র ও ঊর্ধ্বে, যা এরা তার ব্যাপারে বলে থাকে। তিনি তো আকাশসমূহ ও পৃথিবীর উদ্ভাবক, স্রষ্টা। (আর এসব মূর্খরাও জানে এবং স্বীকার করে যে, এ মহিমা তাকে ছাড়া অন্য কারো নেই; কিন্তু তা সত্তে¡ও তারা তার অংশীদার ও পুত্রকন্যা সাব্যস্ত করে।)
অথচ তার কোনো সন্তান-সন্ততি কেমন করে হতে পারে? যখন তার কোনো জীবনসঙ্গী নেই। (মোট কথা, তার কোনো সন্তান-সন্ততি এবং কোনো অংশীদার নেই; বরং সবই তার সৃষ্টি।) তিনি সবাইকে সৃষ্টি করেছেন এবং সর্ববিষয়ে তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। হে মানুষগণ, এই পবিত্র ও মহান আল্লাহ হলেন তোমাদের পালনকর্তা। তাকে ছাড়া অন্য কেউ ইবাদত-উপাসনার যোগ্য নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা সবাই তারই ইবাদত-উপাসনা করো। তিনি সর্ব বিষয়ের অভিভাবক। কর্মসম্পাদক। (সূরা আনআম : আয়াত ১০০-১০২)।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালার বিমুক্ততা সম্পর্কে চ‚ড়ান্ত কথা এভাবে বলা হয়েছে, ‘তার মহিমা এই যে, কোনো দৃষ্টিশক্তিই তাকে পরিবেষ্টিত করতে পারে না। কিন্তু তিনি সমস্ত দৃষ্টিশক্তিকে পরিবেষ্টিত করে নেন। আর তিনি অত্যন্ত ললিত ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১০৩)। এসব আয়াতে প্রায় সেসমস্ত বিষয় থেকেই আল্লাহ তায়ালার মুক্ত ও পবিত্র হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা তার উপাস্যতা ও পবিত্রতার শানের পরিপন্থী এবং যেসব বিষয়ে আল্লাহ সম্পর্কে অপরিচিত সম্প্রদায় এবং মুশরিকরা সাধারণত বিভ্রান্ত হয়েছে।
অতঃপর কুরআন পাকের এসব বিমুক্তিমূলক বর্ণনার চ‚ড়ান্ত কথা হলো, ‘লা তুদরিকুহুল আবসার, ওয়া হুয়া য়ুদরিকুল আবসার।’ অর্থাৎ (মানব দৃষ্টিসমূহ যা তারা এ জগতে পেয়েছে তদ্বারা আল্লাহকে খুঁজে পেতে পারে না, অথচ তিনি সমস্ত দৃষ্টিকে পেতে পারেন।) নিঃসন্দেহে অতি উত্তম, সূ²তর এবং অতি ব্যাপক বিমুক্ততা। এর সারমর্ম হলো এই, আল্লাহ তায়ালার সত্তা এতই সূ² ও উন্নত যে, সর্বক্ষণ সন্নিকটবর্তী এবং একেবারে সঙ্গে থাকা সত্তে¡ও তাকে কেউ খুঁজে পায় না, ধরতে পারে না অথচ তিনি সবার দৃষ্টিকে আয়ত্ব করতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Arifur Rahman ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
প্রকৃত অর্থে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বান্দা তারাই, যারা সুখ-দুঃখে, বিপদ-আপদে সর্বাবস্থায় আল্লাহতাআলার ওপর নির্ভর ও ভরসা করে। যারা সব সময় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তাদের কখনো আল্লাহতাআলা পরিত্যাগ করেন না, তারা সব সময় আল্লাহর আশ্রয়ে থাকে। তারা ভাবতেও পারে না, কীভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছে বা কোথা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা হয়েছে। যে
Total Reply(0)
জুবায়ের রাসেল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
অভিভাবক বলতে প্রথমত কেবল মহান আল্লাহতাআলাকেই বোঝায়। কারণ আল্লাহতাআলাই হচ্ছেন আমাদের সবার প্রকৃত অভিভাবক। তিনিই আমাদের সবার সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। তিনি কতই উত্তম অভিভাবক ও কতই উত্তম সাহায্যকারী’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪০)।
Total Reply(0)
সত্য পথের খোঁজে... ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তিনি তাকে এমন দিক থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। এবং যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে সে তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ নিজ উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করে থাকেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের পরিমাণ অবশ্যই নির্ধারণ করে রেখেছেন’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)।
Total Reply(0)
এস আলম ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
মুমিন মুত্তাকিদের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহপাক কোথা থেকে করবেন তা তারা নিজেরাও জানে না। আর এমনটি মুমিনদের সঙ্গে সব সময় হয়ে থাকে। দেখা যায়, মুমিনরা সাধারণত কোনো বিপদে পড়লে কারও কাছে হাত না পেতে সরাসরি সেই মহান স্রষ্টার কাছে হাত পাতে, যিনি সারা জগতের প্রভু-প্রতিপালক। আর মহান আল্লাহতাআলাও তার চাহিদা কোনো না কোনোভাবে ঠিকই পূরণ করে দেন। তাই আমরা যদি সব সময় মহান আল্লাহতাআলাকেই অভিভাবক মনে করি, তাহলে তিনিই আমাদের সব পেরেশানি দূর করবেন।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হলো, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম অভিভাবক।’ আর লোকেরা যখন হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার সঙ্গীদের বলেছিল মুশরিকরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত (খন্দকের যুদ্ধ) হয়েছে, তোমরা তাদের ভয় করো। তখন এতে তাদের ইমান আরও বেড়ে গেল। তারা তখন বলেছিল, ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম অভিভাবক’ (বোখারি)। আল্লাহতাআলার ওপর তারা পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করেছিল বলেই আল্লাহ তাদের নিজ কৃপাগুণে রক্ষা করেছিলেন।
Total Reply(0)
দীনের শিক্ষা ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাই, পৃথিবীতে মানুষ সর্বদাই মহাশক্তির আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছে। মানবীয় দুর্বলতার কারণে আত্মরক্ষা, নিরাপত্তা ও জীবিকার কারণে নিজ থেকে শক্তিশালী সত্তার সন্ধান করে আসছে। তাই আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি যে, কখনো সূর্য, চন্দ্র, তারকা বা কখনো গাছপালা বা কখনো মাটির বিভিন্ন আকৃতি বা মানুষকে মহাশক্তিধর এদের পূজা-আর্চনা করেছে, যাতে মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পায়।
Total Reply(0)
আবদুল আলিম ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
খোদাতাআলা তার মহাপরাক্রমশালী সত্তাকে যুগে যুগে মানবজাতির সামনে তার ওই সব ব্যক্তি দ্বারা দিনের মতো উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরেছেন, যারা তার ওপর ইমান আনে ও তার ওপর ভরসা রাখে। পবিত্র কোরআনের উল্লিখিত আয়াতটিতে আল্লাহতাআলা আমাদের এ নসিহতই করছেন, যে খোদাতাআলার ওপর ভরসা রাখে, খোদা তার জন্য যথেষ্ট হন। তার সব সমস্যার সমাধানকারী হন।
Total Reply(0)
সরল পথ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
কোরআনের আয়াত এবং হাদিস আমাদের এ শিক্ষাই দিচ্ছে, আমরা যেন আমাদের জীবনে কখনো খোদার ওপর আস্থা না হারাই। আমাদের সবকিছুই তিনি। আমরা যদি তাকে সবকিছু মনে করি, তবে তিনি আমাদের সর্বোত্তম অভিভাবক।
Total Reply(0)
গোলাম রাব্বি ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই মহান খোদার ওপর পরিপূর্ণ ভরসা করার মনমানসিকতা তৈরি করে দিন, আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন