বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মানুষের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ইহসান প্রত্যেক মানুষের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যাদের ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব যতখানি বিস্তৃত, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক ততখানি ব্যাপক ও বিশাল। তার উচিত, স্বীয় ইহসানের পরিমন্ডলকে সম্প্রসারিত করা, প্রতিটি ব্যক্তিকে তার সহায়-সম্পদ দ্বারা উপকৃত করা। কারূনের বংশের লোকেরা চেয়েছিল তার মাঝে এ নৈতিক গুণটির বিকাশ ঘটুক। আল কুরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তুমি সেরূপ ইহসান প্রদর্শন করো, যেরূপ ইহসান আল্লাহপাক তোমার ওপর প্রদর্শন করেছেন।’ (সূরা কাসাস : রুকু ৮)।
ইসহানের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই যে, কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা। আল্লাহপাক হজরত ইউসুফকে কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এ জাতীয় বিপদ থেকে উদ্ধার করার প্রবণতা সর্বত্রই সমভাবে প্রশংসার দাবিদার। তাই দেখা যায়, ধন-সম্পদের মাধ্যমে অথবা মুসিবত থেকে উদ্ধার করার মাধ্যমে ইহসান প্রদর্শনের উত্তম দিকটি বিকশিত হয়ে উঠে। এ ছাড়াও অসংখ্য, অগণিত সদ্ব্যবহার, বদান্যতা ও সহৃদয়তাকে আল্লাহপাক ইহসানের পর্যায়ভুক্ত করেছেন।
এককালের মহিলাদের ব্যাপারে আইনানুগ প্রতারণার ছুতোয় নানারকম নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা থেকে কুরআনুল কারিম এ জাতীয় কার্যক্রমকে পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা করেছে। আর বলে দিয়েছে যে, যদি কোনো মহিলাকে দাম্পত্য জীবনের সাথী করে নিতে অনীহা প্রকাশ পায়, তাহলে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে পৃথক করে দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তালাক (যার পর প্রত্যাবর্তন সম্ভব তা দু’টি তালাক মাত্র) দু’বার প্রয়োগ করার পর, নিয়মমাফিক তাকে রেখে দেবে কিংবা সদ্ব্যবহারের সাথে বিদায় করে দেবে।’ (সূরা বাকারাহ : রুকু ২৯)।
অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমা করা এবং এগুলোর মোকাবেলায় ক্রোধকে হজম করাও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহপাক এ পর্যায়ের ইহসানকে এতটুকু মর্যাদা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি এ গুণে গুণান্বিত হবে, সে অবশ্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং আল্লাহপাক এ সকল পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : রুকু ১৪)।
ইহসানের জন্য কুরআনুল কারিমে অপর শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি হচ্ছে ‘ফাদল’। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিবাহিতা স্ত্রীকে খিলওয়াত বা একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসার আগেই তালাক দেয়, যদি তার জন্য মোহর নির্ধারিত করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অর্ধেক মোহরানা অবশ্যই দিতে হবে। (যদি মোহর নির্ধারিত না করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কিছু বসন ও জিনিস দিয়ে দিলেই চলবে) এটাই হচ্ছে আইন ও বিধানের কথা।
কিন্তু নৈতিক ও আখলাকি হুকুম হচ্ছে এই যে, হয়তো সেই তালাকপ্রাপ্তা মহিলা সেই অর্ধেক মোহরও ক্ষমা করে দেবে, সে এ থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না, তাহলে এটা হবে মহিলার সচ্চরিত্রতার নিদর্শন। অথবা স্বামী পুরো মোহর আদায় করে দেবে, অর্ধেক কেটে রাখবে না, এটাও হবে স্বামীর সচ্চরিত্রতার পরিচায়ক। এরপর ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কার্যসমূহ অবলোকন করছেন।’ (সূরা বাকারাহ : রুকু ৩১)।
হজরত সায়ীদ থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না’ এরপর হচ্ছে ‘পরস্পর ইহসানকে ভুলে যেও না।’ (ইবনে জারির তাবারি : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৬)। আল্লামা জারুল্লাহ জামাখশারী তাফসিরে কাশশাফে এ আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন যে, কোনো কোনো ভাষ্যকার এ আয়াতের ফাদল শব্দটির অর্থ গ্রহণ করেছেন ফজিলতে দ্বীনি। আবার কেউ বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে- মাল-সম্পদভিত্তিক সাহায্য-সহানুভ‚তি।
বস্তুত কোনো গরিব কিংবা কোনো নিকটতম বন্ধু-বান্ধব থেকে এমন কোনো আচরণ যদি প্রকাশ পায়, যার দরুণ অসন্তুষ্টি পয়দা হয়, তাহলে ইহসানকামীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে তা ক্ষমা করে দেয়া এবং স্বীয় ইহসান থেকে বিরত না থাকা। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং তোমাদের মাঝে যারা ইহসান ও সহানুভ‚তিশীল, তারা যেন আত্মীয়-প্রতিবেশীদের, গরিবদের, আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কোনো কিছু না দেয়ার শপথ না করে। তাদের উচিত ক্ষমা করা, অনুকম্পা প্রদর্শন করা।’ (সূরা নূর : রুকু ২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Imran Sazol ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 1
ক্ষমা প্রদর্শন ও মাফ করে বিপদে-আপদে সাহায্য করা মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
কোনো ব্যক্তি যদি অপর কোনো ব্যক্তির ওপর অন্যায় করে তখন শরিয়ত সম্মতভাবে তার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে। তবে যদি প্রতিশোধ গ্রহণ না করে তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে আল্লাহও তাকে ক্ষমা করে দেন।
Total Reply(0)
সত্যান্বেষী ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
অসহায়দের সাহায্য করা প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ আল্লাহ তায়ালা অসহায়দের মাধ্যমে সহায়দের পরীক্ষা করে থাকেন। অন্যকে সাহায্য করার প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলোÑ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শিষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রত্যেক শিষে রয়েছে ১০০টি শস্যকণা। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি মুক্ত হস্ত ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)।
Total Reply(0)
হক পথ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের যারা পদমর্যাদাবান ও আর্থিক প্রাচুর্যের মালিক তারা যেন শপথ না করে যে, আত্মীয়স্বজন, অভাবী ও হিজরতকারীদের কিছু দিবে না। বরং তাদের ক্ষমা করা উচিত, দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুক? আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা নূর : ২২)
Total Reply(0)
সাহেদ শফি ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’
Total Reply(0)
মিরাজ হোসেন ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
সাহায্য বলতে অনেকে শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করা বোঝেন। সাহায্য অনেকভাবেই হতে পারে। কথা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, শ্রম দিয়ে, সঙ্গে থেকেও সাহায্য করা যায়। সবচেয়ে বড় সাহায্য হলো মানবসেবা।
Total Reply(0)
00000 ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
মানবসেবার চেয়ে বড় কোনো সাহায্য নেই। সাধ্যমতো মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা ধর্ম ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়াদান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রত্যেক কদমে একটি গোনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (আত-তারগিব)
Total Reply(0)
ইসলাম শান্তির ধর্ম ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
মানুষকে অসহায় ও বিপদগ্রস্ত দেখে পাশ কেটে চলে যাওয়া প্রকৃত মোমিনের কাজ নয়। যে ব্যক্তি মানুষের বিপদ দেখে চোখ বুজে থাকে, আল্লাহ তায়ালা তার বিপদের সময় তার প্রার্থনায় সাড়া দেন না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন