ইহসান প্রত্যেক মানুষের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যাদের ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব যতখানি বিস্তৃত, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক ততখানি ব্যাপক ও বিশাল। তার উচিত, স্বীয় ইহসানের পরিমন্ডলকে সম্প্রসারিত করা, প্রতিটি ব্যক্তিকে তার সহায়-সম্পদ দ্বারা উপকৃত করা। কারূনের বংশের লোকেরা চেয়েছিল তার মাঝে এ নৈতিক গুণটির বিকাশ ঘটুক। আল কুরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তুমি সেরূপ ইহসান প্রদর্শন করো, যেরূপ ইহসান আল্লাহপাক তোমার ওপর প্রদর্শন করেছেন।’ (সূরা কাসাস : রুকু ৮)।
ইসহানের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই যে, কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা। আল্লাহপাক হজরত ইউসুফকে কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এ জাতীয় বিপদ থেকে উদ্ধার করার প্রবণতা সর্বত্রই সমভাবে প্রশংসার দাবিদার। তাই দেখা যায়, ধন-সম্পদের মাধ্যমে অথবা মুসিবত থেকে উদ্ধার করার মাধ্যমে ইহসান প্রদর্শনের উত্তম দিকটি বিকশিত হয়ে উঠে। এ ছাড়াও অসংখ্য, অগণিত সদ্ব্যবহার, বদান্যতা ও সহৃদয়তাকে আল্লাহপাক ইহসানের পর্যায়ভুক্ত করেছেন।
এককালের মহিলাদের ব্যাপারে আইনানুগ প্রতারণার ছুতোয় নানারকম নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা থেকে কুরআনুল কারিম এ জাতীয় কার্যক্রমকে পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা করেছে। আর বলে দিয়েছে যে, যদি কোনো মহিলাকে দাম্পত্য জীবনের সাথী করে নিতে অনীহা প্রকাশ পায়, তাহলে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে পৃথক করে দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তালাক (যার পর প্রত্যাবর্তন সম্ভব তা দু’টি তালাক মাত্র) দু’বার প্রয়োগ করার পর, নিয়মমাফিক তাকে রেখে দেবে কিংবা সদ্ব্যবহারের সাথে বিদায় করে দেবে।’ (সূরা বাকারাহ : রুকু ২৯)।
অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমা করা এবং এগুলোর মোকাবেলায় ক্রোধকে হজম করাও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহপাক এ পর্যায়ের ইহসানকে এতটুকু মর্যাদা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি এ গুণে গুণান্বিত হবে, সে অবশ্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং আল্লাহপাক এ সকল পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : রুকু ১৪)।
ইহসানের জন্য কুরআনুল কারিমে অপর শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি হচ্ছে ‘ফাদল’। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিবাহিতা স্ত্রীকে খিলওয়াত বা একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসার আগেই তালাক দেয়, যদি তার জন্য মোহর নির্ধারিত করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অর্ধেক মোহরানা অবশ্যই দিতে হবে। (যদি মোহর নির্ধারিত না করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কিছু বসন ও জিনিস দিয়ে দিলেই চলবে) এটাই হচ্ছে আইন ও বিধানের কথা।
কিন্তু নৈতিক ও আখলাকি হুকুম হচ্ছে এই যে, হয়তো সেই তালাকপ্রাপ্তা মহিলা সেই অর্ধেক মোহরও ক্ষমা করে দেবে, সে এ থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না, তাহলে এটা হবে মহিলার সচ্চরিত্রতার নিদর্শন। অথবা স্বামী পুরো মোহর আদায় করে দেবে, অর্ধেক কেটে রাখবে না, এটাও হবে স্বামীর সচ্চরিত্রতার পরিচায়ক। এরপর ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কার্যসমূহ অবলোকন করছেন।’ (সূরা বাকারাহ : রুকু ৩১)।
হজরত সায়ীদ থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না’ এরপর হচ্ছে ‘পরস্পর ইহসানকে ভুলে যেও না।’ (ইবনে জারির তাবারি : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৬)। আল্লামা জারুল্লাহ জামাখশারী তাফসিরে কাশশাফে এ আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন যে, কোনো কোনো ভাষ্যকার এ আয়াতের ফাদল শব্দটির অর্থ গ্রহণ করেছেন ফজিলতে দ্বীনি। আবার কেউ বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে- মাল-সম্পদভিত্তিক সাহায্য-সহানুভ‚তি।
বস্তুত কোনো গরিব কিংবা কোনো নিকটতম বন্ধু-বান্ধব থেকে এমন কোনো আচরণ যদি প্রকাশ পায়, যার দরুণ অসন্তুষ্টি পয়দা হয়, তাহলে ইহসানকামীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে তা ক্ষমা করে দেয়া এবং স্বীয় ইহসান থেকে বিরত না থাকা। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং তোমাদের মাঝে যারা ইহসান ও সহানুভ‚তিশীল, তারা যেন আত্মীয়-প্রতিবেশীদের, গরিবদের, আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কোনো কিছু না দেয়ার শপথ না করে। তাদের উচিত ক্ষমা করা, অনুকম্পা প্রদর্শন করা।’ (সূরা নূর : রুকু ২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন