বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণাঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের লেখাপড়া ব্যাহত

৪ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক প্রাথমিক বিদ্যলয়ই চলছে না চলার মতো করে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার ৪২টি উপজেলায় পুরনো ও নতুন ৬ হাজার ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘ দিন ধরে। ফলে এ অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের প্রায় সোয়া ১১ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সরকারি প্রাথমিক স্কুলই একজন শিক্ষক দিয়ে কোনো মতে টিকে আছে। অথচ প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকার বিধান রয়েছে সরকারী নীতিমালায়। শিক্ষক সঙ্কটে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ভিত মজবুত হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে অভিভাববকসহ বিভিন্ন মহলের।
দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৬ হাজার ১৯১টি প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদের মধ্যে সাড়ে ১২শ’ই শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। ফলে এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়াসহ সার্বিক পরিচালন ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। ভালোভাবে চলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুরূপভাবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদের মধ্যে ২ হাজার ৭৩২টি শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। ফলে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একজন শিক্ষক দিয়েও পাঠক্রম চলছে, না চলার মতো করে। গতকাল প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। ফলে ঐসব পদে আর বড় কোন সমস্যা থাকবে না।
তবে সারা দেশের মতো বরিশাল বিভাগের প্রায় ১ হাজার দুশ’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। স¤প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদগুলো ২য় শ্রেণীর গেজেটেড মর্যাদা দেয়ায় ঐসব পদে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগদানের প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারি কোন সিদ্ধান্তও চ‚ড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত হলেই কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক-এর শূন্য পদসমূহ পূরণে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। তবে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় দক্ষিণাঞ্চলে ক্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভীত নিয়ে অভিভাবক মহলেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। গ্রামের অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই মাত্র একজন শিক্ষক বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্বে রয়েছেন। এসবের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একশ’ শিক্ষার্থীর বিপরীতেও একজন শিক্ষক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।
অপরদিকে বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষকই গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে চাচ্ছেন না। সবার নজরই শহরের দিকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনিক খুব বড় মাপের রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে অনেক শিক্ষকই শহরে চলে আসছেন। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট প্রকট। লেখাপড়ার মান তলানীতে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৫টি। এছাড়া ২ হাজার ৭৫৪টি সাবেক বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। সরকারের দেশব্যাপী দেড় হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বরিশাল বিভাগে আরো ১৩২টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ৬টি পরীক্ষণ বিদ্যালয়, ২৪টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩৫টি নন রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৩টি শিশু কল্যাণ বিদালয় রয়েছে এ বিভাগে। এসব বিদ্যালয়গুলোতেই প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা হচ্ছে শিক্ষক সঙ্কট নিয়ে। এর বাইরে ৫৫২টি আনন্দ স্কুল, ৫টি কমিউনিট প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এনজিও ব্রাক ২৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। বিভাগের ১২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথেও রয়েছে প্রাথমিক শাখা। অনুরূপ আরো ৪৫টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথেও প্রাথমিক শাখা রয়েছে। আরো কয়েকটি এনজিও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ৩৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। উপরন্তু দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ১ হাজার ১৬৫টি এবতেদায়ী মাদরাসাতেও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।
সরকারি হিসেবে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার প্রাথমিক স্তরের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৪ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনা করছে। এরমধ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১১ লাখ ২০ হাজারের মত। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের অভাবে খোদ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া যথেষ্ঠ বিপর্যয়ের কবলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন