বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শেণী পর্যন্ত স্কুলে শিশুদের কোনো পরীক্ষা না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এটি বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের উপর প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার চাপ তাদের মানসিক বিকাশকে ব্যহত করে, এই বিবেচনায় শিশুদের আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার ধকল থেকে মুক্ত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সাথে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের সময়সীমা এক বছর থেকে বাড়িয়ে ২ বছর এবং ভর্তির বয়েস ৫ বছর থেকে ৪ প্লাস নির্ধারণ করার বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্ডারগার্টেনের নামে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাণিজ্যিকিকরণ থেকে মুক্ত করতে এবং সব শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়। শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার ভিত্তি মজবুতকরণ এবং শিক্ষাকে বৈষম্য ও মুনাফাবাজিমুক্ত করতে এ পদক্ষেপ কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। বিগত দশকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কিছু অহেতুক এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে। পঞ্চম শ্রেনীতে প্রাথমিক সমাপনী, মাদরাসায় ইবতেদায়ী ও অষ্টম শ্রেনীতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জেডিসি পরীক্ষা চালু করার পর প্রাথমিক স্তরে একাধিক পাবলিক পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষা বাণিজ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা বিভাগের একশ্রেনীর কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁেসর ঘটনা গোটা পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থাকেই অকার্যকর ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
গত ১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না নিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটিকে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। শিশুদের জন্য গৎবাঁধা সিলেবাস, মুখস্ত পড়া-লেখা এবং পরীক্ষা মূল্যায়ণের প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে শ্রেনীতে উপস্থিতি, শ্রেণীকক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অগ্রগতি ও ডায়রী মূল্যায়ণকেই অগ্রগতির মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা হলে শিশুরা শিক্ষায়তনের সামগ্রিক কর্মকান্ডে আরো বেশী আগ্রহী ও মনোযোগী হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ডের মত উন্নত দেশের দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরেছেন। তবে আমাদের দেশীয় বাস্তবতায় এ ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হলে যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও নজরদারি থাকা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থাও থাকতে হবে। বিশেষত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা, শিক্ষকের সংখ্যা এবং সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছর থেকে দুই বছরে বর্ধিত করা এবং তৃতীয় শেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা ও পঞ্চম শ্রেনীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নামে পাবলিক পরীক্ষার প্রতিযোগিতা বন্ধ হলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা বাণিজ্যসহ দুর্নীতি ও বৈষম্য কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতির বাইরে নানামুখী প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুর অগ্রগতি মূল্যায়ণের যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা সফল করতে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। পরীক্ষার বদলে বিভিন্ন কর্মকান্ডের ভিত্তিতে শিশুদের মেধা বিকাশ ও মূল্যায়ণের ধারা সৃষ্টি করতে হলে সে সব কর্মকান্ড ও তার পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক। উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টান্ত সামনে রেখে আমরা এসব পদক্ষেপ নিতেই পারি। তবে নিজেদের প্রস্তুতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে। পরীক্ষা না থাকায় যে শিশুটি প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হবে তাদের জন্য নিরাময়মূলক ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা গবেষণা সংশ্লিষ্টরা। সেই সাথে পঞ্চম শ্রেনীতে বিদ্যমান পাবলিক পরীক্ষাটি বাতিল করার দাবী দীর্ঘদিনের। ফরাসী দার্শনিক রুশো বলেছেন‘, শিক্ষা হলো শিশুর স্বত:স্ফুর্ত আত্মবিকাশ, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, আনন্দহীন শিক্ষা কোনো শিক্ষা নয়। যে বয়েসে শিশুরা খেলাধুলা, পরিবার, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের ভিত্তি রচিত হবে, সে বয়েসে তাদের কাঁধে অনেকগুলো বই ও গৎবাঁধা পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হলে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ও সৃজনশীলতা বাঁধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিশুদের অতিরিক্ত বইয়ের বোঁঝা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৈহিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। এসব নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তা দেখতে হবে, নজরদারি বাড়াতে হবে। তথাকথিত নামিদামী স্কুলের ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে অনৈতিক প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ash ২২ মার্চ, ২০১৯, ৫:৩০ এএম says : 0
KENO PORIKHA NEWA HOBE NA?? ODER SHIKHTE HOBE NA??? ODER PORIKHAR JONNY OVOSTO HOTE HOBE NA ?? CHOTO BELA BACHA DER BRAIN THAKE KADA MATIR MOTO, TOKHON THEKE ORA CHAP NITE PARE !! WORLD ER SHOB DESHE E TO PORIKHA NAY, TO BANGLADESHER KI HOLO???
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন