বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রতিবেশীর অধিকার ও সদ্ব্যবহার-১

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে সমাজের অবকাঠামোর অংশ হয়ে সামাজিক নীতিনিয়ম রক্ষা করেই আমাদের জীবনযাপন করতে হয়। এর বাইরে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চললে অসামাজিক, এমনকি সমাজবিরোধী বলে চিহ্নিত হতে হয়। কিন্তু সমাজের এ নীতিনিয়ম ঠিক করে দেবে কে?
একজনের কাছে যা ভালো রীতি, অন্যের কাছে তা মন্দ বা অপ্রয়োজনীয় হতে পারে। তাই মানবজীবনের সব সমস্যার ও প্রয়োজনের শ্রেষ্ঠ সমাধান ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর তা আমরা পাই কোরআন ও প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে।
সমাজে বসবাসের অন্যতম অনিবার্য উপাদান হচ্ছে প্রতিবেশী। আমরা যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি, প্রতিবেশী বেষ্টিত হয়েই থাকি। এই প্রতিবেশীরা হয়তো আমাদের আত্মীয় বা নিকট আপনজন নন; কিন্তু সারা জীবনের নিকট প্রতিবেশীরা আত্মীয়ের চেয়েও বেশি নিকটে থাকেন।
তাদের সবাই হয়তো মানে, গুণে, রুচি, আচরণে, জ্ঞানে, বুঝে এক রকম নন অথবা শিক্ষা-সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদায় আমাদের সমপর্যায়েরও নন; তবুও তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য কম নয়। প্রতিবেশীর হক বা অধিকার বিষয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. ও হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত জিবরাঈল আ. আমাকে এমনভাবে অনবরত প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ভাবতে শুরু করলাম, মনে হয় প্রতিবেশীও সম্পদের মধ্যে শরীক হয়ে যাবে।-সহীহ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটির দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাটা আল্লাহর নির্দেশ, যার ব্যাপারে জিবরাঈল আ. এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনবরত তাগাদা করা হয়েছে উম্মতকেও এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই। আর এ তাগাদা বা গুরুত্বারোপের কারণে স্বয়ং রাসূলের কাছেই প্রতিবেশীকে প্রায় উত্তরাধিকারীর মতোই মনে হয়েছে। এ থেকে অন্তত এটুকু আমাদের বুঝে নেয়া উচিত যে, উত্তরাধিকারীরা যেমন করে সব সময় আদর-যত্ম, সেবা, উপকার ও সম্মান পেয়ে থাকেন, প্রতিবেশীরাও তেমনই অধিকার রাখেন। যদিও আমাদের উত্তরাধিকার পাবেন না। সুতরাং যখন যেভাবে যতটা সম্ভব প্রতিবেশীর উপকার করাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদীসের ইঙ্গিত।
বিষয়টি আরও খোলাসা হয় নবীজির নিম্নোক্ত হাদীসটিতে : হযরত আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আবু যর, যখন তরকারি রান্না করো, তখন তাতে একটু পানি বাড়িয়ে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীদের বাসা-বাড়ির খোঁজ নাও অর্থাৎ প্রয়োজনে তাদের একটু পৌঁছিয়ে দাও।-সহীহ মুসলিম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সরল পথ ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
তোমার বাসস্থানের নিকটতম ব্যক্তিই তোমার প্রতিবেশী। তোমার ওপর তার অনেক অধিকার রয়েছে। যদি সে তোমার রক্ত সম্বন্ধের দিক দিয়ে কাছাকাছি লোক হয় এবং মুসলিম হয় তা হলে তোমার ওপর তার তিনটি অধিকার রয়েছে। আর সে তিনটি অধিকার হচ্ছে- প্রতিবেশীর অধিকার, নিকট আত্মীয়ের অধিকার এবং ইসলামের অধিকার
Total Reply(0)
সাদমান ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
আমরা আজ যে সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তাতে আমাদের অনুভূতিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন আজকালকার যুগের সবার চিন্তাধারার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট পাথরের দালানে থাকা আমরাও যেন অনুভূতিহীন কলের পুতুল। পাশের দরজার প্রতিবেশীর বিপদে আপদে, তাদের সুখ দুঃখের সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দুরের কথা, কেউ কাউকে চিনিই না অনেক সময়। এরপরও কি আমরা দাবী করতে পারি আমরা সত্যিকারের মুসলমান?
Total Reply(0)
অহির ডাক ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ» জিবরাইল সব সময় আমাকে প্রতিবেশী সম্বন্ধে উপদেশ দিয়ে আসছেন, যার ফলে আমার এ ধারণা হলো যে, হয়তো শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী রূপেও গণ্য করা হবে। [বুখারি, ৬০১৫; মুসলিম, ২৬২৫] একজন প্রতিবেশীর ওপর তার অপর প্রতিবেশীর অধিকার হচ্ছে এই যে, উক্ত প্রতিবেশী যেন তার সাধ্যানুসারে তার ধন-সম্পদ এবং মর্যাদা ও কল্যাণকারিতার মাধ্যমে তার সাথে সদ্ব্যবহার করে।
Total Reply(0)
ভোরের আলো ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
‘‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।’’ ( সূরা নিসা: ৩৬)
Total Reply(0)
ইসলামই পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৬)
Total Reply(0)
জয়নাল আবেদীন ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
বর্তমানে অনেক লোকই প্রতিবেশীর অধিকারগুলোকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যত্নবান নয়, এমনকি তাদের প্রতিবেশীগণ তাদের অন্যায় আচরণের কারণে শান্তিতে বসবাসও করতে পারছে না। অতএব, তুমি দেখতে পাবে যে, তারা সব সময়ই ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত রয়েছে এবং প্রতিবেশীকে কথা ও কাজে ব্যথা দিচ্ছে। আর এরূপ আচরণ নিসন্দেহে আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুমের পরিপন্থী, আর মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছেদ, তাদের অন্তরের দূরত্ব এবং একে অন্যের সম্মান বিনষ্ট করণের জন্য এতটাই হচ্ছে বড় কারণ।
Total Reply(0)
00000000 ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্ব উওম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উওম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্ব উওম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উওম।” (তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন