বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রূপগঞ্জে ৭০০ হেক্টর জমি অনাবাদি নিঃস্ব কৃষক

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রকল্প : পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের গাফিলতি

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রকল্পের বানিয়াদি পাম্প হাউসের আওতাধীন প্রায় ৭০০ হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের প্রধান খাল ও ক্যানেল সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকা ঠিকাদার ও কতিপয় কর্মকর্তা ভাগ-বাটোয়ারা করে হাতিয়ে নিয়েছে। পাউবো ও ঠিকাদারের এমন অসাদাচরণের কারণে স্থানীয় কৃষকরা ক্রমেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রকল্পের রূপগঞ্জের বানিয়াদী পাম্প হাউজের আওতাধীন ২০৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১২০০ হেক্টর জমি সেচযোগ্য। এই জমিনির্ভর প্রায় ৩ হাজার পরিবার। কৃষকরা বলছেন, মৌসুম চলে যাচ্ছে। পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এবার লক্ষমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে ১২০০ হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৪০০ হেক্টরের মতো জমি চাষাবাদ হয়েছে। কারণ হিসাবে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সেচ পানি সরবরাহ করার উপযুক্ত সময় হলেও এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অনেক দেরি করে সেচ পানি সরবরাহ করেছেন। তা-ও আবার একটু একটু করে। প্রধান সেচ ক্যানেলের অবস্থা খারাপ থাকায় পানি প্রবাহে ব্যাহত হচ্ছে। ক্যানেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা থাকলে পাউবোর ঠিকাদার মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আরিফ হাসান পাউবোর কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে হাতিয়ে নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বানিয়াদী পাম্প হাউসের আওতাধীন মুড়াপাড়া, হাউলিপাড়া, বানিয়াদী, হাটাবো, এখনো শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। পানির অভাবে অনেক জমি ফেটে চৌচির হয়ে রয়েছে। প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হলেও এসব জমির মালিকরা দ্বিগুণ টাকা খরচে ভিন্ন ব্যবস্থায় সেচ পানির ব্যবস্থা করেছে। কথা হয় হাটাবো এলাকার কৃষক ষাটোর্ধ্ব মকবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি এবার প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু সেচ পানির অভাবে তিনি এখনো চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি। এতে এবার ঘরে ফসল তুলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত তিনি। বৃদ্ধ মকবুল হোসেন বলেন, বাজানরে, এইবার বুঝি আর বাছুমনা (বাঁচবোনা)। পেরাই (প্রায়) বছর ঘরের ভাত খাই। পানির অভাবে এইবার অহনও ক্ষেত লাগাইবার পারলাম না। মনে অয় না এইবার ঘরে ধান পামু। পানি আহনের ডেরেনগুইলা (ক্যানেল) ভাঙ্গাচোরা। সুইচগেটের (পাউবো) লোকজন ঠিকমতন পানি ছাড়েনা। মিয়াবাড়ি এলাকার নাঈম মিয়া প্রতি বছর ৩ বিঘা জমি বর্গা চাষ করেন। এবার তিনি এক বিঘা জমিও চাষবাদ করতে পারেননি। নাঈম মিয়া বলেন, ভাই কর্মকর্তারা আর ঠিকাদার মিল্লা সব গিল্লা খাইছে। যার কারণে ঠিকমতন পানি পাই না। ঘুইরা দেখেন হাজার হাজার বিঘা জমি চাষ করে নাই কৃষকরা।
অভিযুক্ত ঠিকাদার আসিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বানিয়াদী ব্লকে দায়িত্বরত কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাইরুন নাহার বলেন, পানি যথাসময়ে না ছাড়ার কারণে জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। তবে ঠিক কি পরিমাণ জমি অনাবাদি তা তাদের রেকর্ডে নেই বলে জানান। তিনি বলেন, পানি প্রবাহের খালগুলো ব্লক হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, নানা জটিলতার কারণে পানি ছাড়তে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এতে কোন সমস্যা নেই। ফলন কিছুটা কম হতে পারে। ক্যানেল বরাদ্দের টাকার ভাগবাটোয়ার অভিযোগের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার তাজুল ইসলাম বলেন, কত বিঘা জমি অনাবাদি তা আমার জানা নেই। তবে পানি দেরি করে ছাড়ার কারণে এবার ফসল উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন