আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি সম্পর্কে বিগত আলোচনাগুলোতে যেসব কুরআনী বিবরণ উদ্ধৃত হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয়, আল্লাহ তায়ালা আলেমুল গায়েবে ওয়াশ-শাহাদাহ (অনুপস্থিত ও উপস্থিত বিষয়ে পরিজ্ঞাত) এবং সর্বজ্ঞ।
সবার সঙ্গে এবং সবার নিকটবর্তী, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সবার স্রষ্টা ও অন্নদাতা, সবার কর্মসম্পাদক ও পালনকর্তা এবং তিনিই সমগ্র জগৎ-সংসারের মালিক, নিয়ন্তা ও স্বপ্রতিষ্ঠিত। এখানে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা তারই নির্দেশে হয়। এ ছাড়া এমন কোনো সত্তা নেই যে তার হুকুম ছাড়া এখানে কোনোকিছু করতে পারে। সবরকম মহিমা ও মহত্ত, একমাত্র তারই জন্য। আর তিনি বড়ই রহমওয়ালা, অত্যন্ত মেহেরবান। সাথে সাথে নিতান্ত অমুখাপেক্ষীও তিনি। সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। কারো তোয়াক্কা তার নেই এবং তিনি ন্যায়পরায়নও বটে। অর্থাৎ, প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের বদলা বা বিনিময় দানকারী। এ সমস্ত পূর্ণতা গুণে গুণান্বিত হওয়ার সাথে সাথে এমন প্রত্যেকটি বিষয় এবং এমন প্রত্যেকটি বস্তু থেকে তিনি বিমুক্ত, যাতে দোষত্রুটির কোনো দিক বা কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং যা তার পবিত্র মহিমার পরিপন্থী।
বলা বাহুল্য, এ কথা জেনে নেয়ার পর যে, কোনো সত্তা এমন রয়েছেন যার ভেতরে এ সমুদয় গুণ-বৈশিষ্ঠ্য পরিপূর্ণভাবে সমন্বিত, সততই এ কথা নির্ধারিত হয়ে যায় যে, একমাত্র তিনিই ইবাদত-উপাসনার যোগ্য এবং তিনিই এমন যার উপাসনা করা যেতে পারে। প্রীতি-ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে তার নির্দেশের সামনে আত্মসমর্পণ করা যায়। তাকে নিজের মালিক এবং নিজেকে তার গোলাম মনে করে তার নির্দেশে চলা যায়। তার সাথে আশার বন্ধন স্থাপন করা যায়। নিজের প্রয়োজনের জন্য তারই কাছে প্রার্থনা কার যায়। বিপদাপদে তারই সাহায্য কামনা করা যায়। তারই ওপর নির্ভর করা যায়। তারই সন্তুষ্টির জন্য বাঁচা-মরা যায়। তারই হামদ-সানা ও পবিত্রতা কীর্তন করা যায় এবং তার স্মরণকেই নিজের জপমালা সাব্যস্ত করা যায়।
সে জন্যই কুরআন মাজিদে তার গুণাবলি বর্ণনার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি প্রমাণিত বাস্তব ও অবধারিত পরিণতিরস্বরূপ তাওহিদেরও বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনটি পাঠকবর্গ গুণাবলি বর্ণনা প্রসঙ্গে পূর্বোল্লিখিত আয়াতগুলো পাঠ করে নিজেরাও নানা জায়গায় উপলব্ধি করে থাকবেন। এদিক দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আল্লাহ তায়ালার তাওহিদের বর্ণনার তেমন একটা প্রয়োজন অবশিষ্ট থাকে না; কিন্তু যেহেতু তাওহিদ কুরআন পাকের বিশেষ একটি দাওয়াতি প্রসঙ্গ এবং এরই ওপর অন্যসব প্রসঙ্গ অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং যেহেতু তাওহিদই ছিল, কুরআনের পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থসমূহ ও আল্লাহর রাসূলগণের শিক্ষা ও দাওয়াতের কেন্দ্রবিন্দুও, তাই বিগত আলোচনায় তাওহিদ সংক্রান্ত কুরআনী বর্ণনা-ভাষাগুলোকে কিছুটা বিস্তারিতভাবে স্বতন্ত্র অধ্যায়েই উপস্থাপন করতে চেয়েছি।
কুরআন মাজিদে তাওহিদের শিক্ষা এতই পরিচ্ছন্ন ও বিস্তারিতভাবে দেয়া হয়েছে যাতে বিষয়টির এমন কোনো দিক অবশিষ্ট থাকেনি, যা পরিপূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেনি। তা ছাড়া এমনটি হওয়াই উচিত ছিল। কারণ, পৃথিবীর জাতি-সম্প্রদায়কে সর্বক্ষণ তাওহিদেরই শিক্ষা দিয়েছিলেন। এক কথায় বলতে গেলে কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি নেই, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নবীর-রাসূল ও দ্বীনের দাওয়াত প্রচাকারীগণ তাওহিদের পয়গাম পৌঁছে দেননি।
তাই ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি পাঠিয়েছি সমস্ত জাতি-সম্প্রদায়ে আমার পয়গম্বর (এ দাওয়াত ও বাণী দিয়ে) যে, তোমরা সবাই শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে (যিনি সত্যিকার মা’বুদ)। আর সমস্ত মিথ্যা ও মনগড়া খোদা থেকে বেঁচে থাকবে’ (সূরা নাহল : আয়াত ৩৬)। অপর এক স্থানে বলা হয়েছে, ‘আপনার পূর্বে যে পয়গম্বরই আমি প্রেরণ করেছি, তাদের প্রতি এ নির্দেশ সম্বলিত ওহি অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ছাড়া আর কেউ ইবাদত-বন্দেগির যোগ্য নেই বিধায় কেবল আমারই বন্দেগি করো’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ২৫)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন