প্রত্যেক জাতিতে আল্লাহর পয়গম্বর ও দ্বীনের প্রচারকারীগণ সর্বদা তাওহীদেরই শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর অধিকাংশ জাতি কোনো না কোনো রকম শিরকে লিপ্ত হয়ে গেছে। আর আজও একই অবস্থা বিদ্যমান।
অনেকে আল্লাহকে স্বীকার করে এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখে; কিন্তু কোনো না কোনো শিরকে লিপ্ত রয়েছে। কোরআনও তাই বলেছে, ‘আর অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতিও বিশ্বাস রাখে এবং একই সঙ্গে তারা শিরকেও লিপ্ত রয়েছে।’ (সূরা ইউসুফ : আয়াত ১০৬)। যা হোক, চিরকালই মানুষের বিরাট ও মারাত্মক ব্যাধি ছিল শিরক। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সর্বশেষ পথপ্রদর্শক কিতাব কোরআন মাজীদে যার পরে মানুষের জন্য আর কোনো আসমানী কিতাব আসার নয়, তাওহীদের বিষয়টিকে সর্বাধিক স্পষ্ট করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী উম্মতদের ভেতর শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে কিংবা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থাকতে পারত।
কোরআন শুধু এ কথা বলেই তাওহীদের শিক্ষাদান সমাপ্ত করে দেয়নি যে, ‘আল্লাহ এক, তাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত-উপাসনা করা যাবে না,’ বরং আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত তাওহীদ ছাড়াও সে আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেকটি গুণের কথা উল্লেখ করে বাতলে দিয়েছে যে, এ গুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহতেই রয়েছে। তিনি নিজের সত্তার মত গুণাবলীর ক্ষেত্রেও একক, লা-শরীক। তেমনিভাবে, কর্ম ও অধিকারে একক, লা-শরীক।
তাছাড়া নিজের খোদায়ী অধিকারের ক্ষেত্রেও তেমনিভাবে ওয়াহাদুহু লা-শরীক। কোরআন তাওহীদের সেসমস্ত দিককে এমনভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে যাতে, কোনো রকম বিশ্বাসগত কিংবা কর্মগত, প্রকাশ্য কিংবা গোপন শিরকের কোনো অবকাশ না থাকে। আমরা কোরআন মাজীদের তাওহীদ সংক্রান্ত দাওয়াত প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি আয়াতকে এখানে উল্লেখ করছি।
তাওহীদের একটি সাদামাটা ও সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক শিরোনাম হলো ‘ইলাহ’ অর্থাৎ, উপাস্য মাত্র একজনই। তিনিই কেবল ইবাদত ও বন্দেগীর যোগ্য। কোরআন মাজীদে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এ বিষয়টি বহুবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
কয়েকটি আয়াত এরূপ : ‘আর তোমাদের উপাস্য মাবুদ শুধুমাত্র একজনই। তাকে ছাড়া আর কেউ ইবাদত-উপাসনার যোগ্য নেই। তিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও করুণাময়।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৩)।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সে আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৬২)।
অন্য এক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আসল সত্য কথা হলো, তোমাদের উপাস্য একজনই। তিনি আসমান-জমীন এবং এর মধ্যবর্তী সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা।’ (সূরা সাফফাত : আয়াত ৪-৫)।
অপর এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি তাদেরকে বলে দিন এবং ঘোষণা দিয়ে দিন যে, সত্য মাবুদ মাত্র একজনই। আর আমি তোমাদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১৯)।
তেমনি আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘বস্তুত তোমাদের উপাস্য একই উপাস্য। কাজেই তারই আনুগত্য কর এবং নিজেকে তারই সামনে আনত করে দাও।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন