বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সত্তাগত ও উপাস্যতাগত তাওহীদ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রত্যেক জাতিতে আল্লাহর পয়গম্বর ও দ্বীনের প্রচারকারীগণ সর্বদা তাওহীদেরই শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর অধিকাংশ জাতি কোনো না কোনো রকম শিরকে লিপ্ত হয়ে গেছে। আর আজও একই অবস্থা বিদ্যমান।
অনেকে আল্লাহকে স্বীকার করে এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখে; কিন্তু কোনো না কোনো শিরকে লিপ্ত রয়েছে। কোরআনও তাই বলেছে, ‘আর অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতিও বিশ্বাস রাখে এবং একই সঙ্গে তারা শিরকেও লিপ্ত রয়েছে।’ (সূরা ইউসুফ : আয়াত ১০৬)। যা হোক, চিরকালই মানুষের বিরাট ও মারাত্মক ব্যাধি ছিল শিরক। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সর্বশেষ পথপ্রদর্শক কিতাব কোরআন মাজীদে যার পরে মানুষের জন্য আর কোনো আসমানী কিতাব আসার নয়, তাওহীদের বিষয়টিকে সর্বাধিক স্পষ্ট করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী উম্মতদের ভেতর শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে কিংবা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থাকতে পারত।
কোরআন শুধু এ কথা বলেই তাওহীদের শিক্ষাদান সমাপ্ত করে দেয়নি যে, ‘আল্লাহ এক, তাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত-উপাসনা করা যাবে না,’ বরং আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত তাওহীদ ছাড়াও সে আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেকটি গুণের কথা উল্লেখ করে বাতলে দিয়েছে যে, এ গুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহতেই রয়েছে। তিনি নিজের সত্তার মত গুণাবলীর ক্ষেত্রেও একক, লা-শরীক। তেমনিভাবে, কর্ম ও অধিকারে একক, লা-শরীক।
তাছাড়া নিজের খোদায়ী অধিকারের ক্ষেত্রেও তেমনিভাবে ওয়াহাদুহু লা-শরীক। কোরআন তাওহীদের সেসমস্ত দিককে এমনভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে যাতে, কোনো রকম বিশ্বাসগত কিংবা কর্মগত, প্রকাশ্য কিংবা গোপন শিরকের কোনো অবকাশ না থাকে। আমরা কোরআন মাজীদের তাওহীদ সংক্রান্ত দাওয়াত প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি আয়াতকে এখানে উল্লেখ করছি।
তাওহীদের একটি সাদামাটা ও সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক শিরোনাম হলো ‘ইলাহ’ অর্থাৎ, উপাস্য মাত্র একজনই। তিনিই কেবল ইবাদত ও বন্দেগীর যোগ্য। কোরআন মাজীদে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এ বিষয়টি বহুবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
কয়েকটি আয়াত এরূপ : ‘আর তোমাদের উপাস্য মাবুদ শুধুমাত্র একজনই। তাকে ছাড়া আর কেউ ইবাদত-উপাসনার যোগ্য নেই। তিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও করুণাময়।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৩)।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সে আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৬২)।
অন্য এক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আসল সত্য কথা হলো, তোমাদের উপাস্য একজনই। তিনি আসমান-জমীন এবং এর মধ্যবর্তী সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা।’ (সূরা সাফফাত : আয়াত ৪-৫)।
অপর এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি তাদেরকে বলে দিন এবং ঘোষণা দিয়ে দিন যে, সত্য মাবুদ মাত্র একজনই। আর আমি তোমাদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১৯)।
তেমনি আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘বস্তুত তোমাদের উপাস্য একই উপাস্য। কাজেই তারই আনুগত্য কর এবং নিজেকে তারই সামনে আনত করে দাও।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
সাদ বিন জাফর ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
তাওহীদই হলো জান্নাতী ও জাহান্নামী হওয়ার এবং আল্লাহর রহমত পাওয়ার ও গজবে পরার মূল বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় এবং একক নিরংকুশ, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে বিশ্বাস, গ্রহণ ও মান্য করার নাম হলো তাওহীদ।
Total Reply(0)
নুরুল আবছার ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
যারা আল্লাহর সাথে অন্যজনকে বা অন্য কিছুকে যুক্ত অথবা সমান করে তারা তাওহীদ বিশ্বাসী বা তাওহীদবাদী হতে পারে না। তারা হবে শিরিককারী। তাই আল্লাহ তার পরিচয় দিয়ে বলেন, “হে রাসূল (স) আপনি সবাইকে বলে দিন, আল্লাহর কোন শরিক নেই। আল্লাহ এক, তিনি মুখাপেক্ষীহীন। তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তার সমকক্ষ কেউ নেই। যাহা ইচ্ছা তা তিনিই করতে পারেন। তাই তিনিই শুধু সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনি ছাড়া আর কোন বিধানদাতা নেই। তিনিই রহমান, তিনিই রহীম।
Total Reply(0)
মোঃ সোহেল রাড়ি ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
যখন আল্লাহর কোনো বান্দা তাওহীদের এ উচ্চতর মাকাম অর্জন করেন তখন তার সকল কাজ শুধু আল্লাহরই জন্যই হয়। এমনকি যখন তিনি ব্যক্তিগত বা গৃহস্থলি কাজে থাকেন সেটাও তার প্রয়োজনের অনুভূতি ও ইচ্ছা পূরণের জন্য হয় না। আল্লাহর হুকুম পালনের নিয়তে ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
নিশ্চয়ই আল্লাহ চূড়ান্ত ক্ষমতার মালিক এবং প্রচুর রিজিকদাতা” আল-কুরআন। তাওহীদভিত্তিক একক ক্ষমতার মালিক যিনি, তার পক্ষেই শুধু সম্ভব নিরপেক্ষভাবে শাসন করা। যার যার মর্যাদা ও অধিকার অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য দান করা। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে শুধু তিনিই বিচার ও ফয়সালা করতে পারেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে আইন ও বিধান রচনা করা শুধু তার পক্ষেই সম্ভব। এই কারণে শুধু তারই অধিকার আছে সবার আনুগত্য, এবাদত ও প্রশংসা পাওয়ার এবং সবার জন্য আইন ও বিধান দেয়ার। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর ছাড়া দ্বিতীয় আর একজন ইলাহ থাকলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত” আল-কুরআন।
Total Reply(0)
রাশেদ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩১ পিএম says : 0
তাওহিদের বিপরীত হচ্ছে শিরক। শিরক মানে অংশীদারিত্ব। ইসলামী শরিয়তে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, শক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সত্তায় ও গুণাবলিতে, অধিকার ও মর্যাদায় অথবা ক্ষমতায় আল্লাহর সমান করাই হলো শিরক। শিরক করতে যারা মানুষকে হুকুম দেয় অথবা বাধ্য করে তারা হলো তাগুত। যেমন ফেরাউন, সে মানুষকে শিরক করতে বাধ্য করেছে। শিরক ও তাগুত হলো হারাম। কবিরা গুনাহ। তাগুত ও শিরিকের পরিণাম হলো আল্লাহর গজব ও আজাব। এদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম।
Total Reply(0)
Humaira Tabassum Himi ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩২ পিএম says : 0
শিরক মারাত্মক অপরাধ। মানুষ শিরকের মাধ্যমে ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যায়। এ জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল এবং আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন মানুষের হিদায়াতের জন্য। যাতে মানুষ তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে।
Total Reply(0)
Jashim Uddin ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৩ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকের গোনাহ থেকে হিফাজাত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Faysal Mahmud ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৪ পিএম says : 0
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রবহমান পাপ সমূহের মধ্যে শিরক সর্বাপেক্ষা বড় পাপ হিসাবে স্বীকৃত। শিরকের চেয়ে জঘন্য কোন পাপ নেই। অন্যান্য পাপ মহান আল্লাহ সহজেই মাফ করে দেন। কিন্তু শিরকের পাপ সহজে মাফ করেন না। শিরকের অপরাধের জন্য বিনয়-নম্রতার সাথে তওবা করতে হয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন