সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৮ কর্মকর্তাই পদোন্নতি পান!

জাহালমের মামলা তদন্তকারী

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নিরাপরাধ জাহালমকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৯ জন কর্মকর্তা। কাজের মূল্যয়ন করে তাদের মধ্যে ৮ জন ইতোমধ্যে পদোন্নতিও পান। তারা বর্তমানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমর্রত আছেন। একজন প্রশিক্ষণের জন্য অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করছেন। দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমের বিষয়টি নজরে আসার পরে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর গত রোববার কারামুক্তির নির্দেশও দেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলেন আদালত। আদালতের আদেশের পর পর গত রাত নির্দোষ জাহালম কারামুক্তি পান। কারামুক্তির পর তিনি দুদক কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছেন। এদিকে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন দুদক । তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
গত রোববার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুদকের ভুলে তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জাহালাম ঘটনায় জজ মিয়া নাটক আরেকটি বানালেন নাকি? এই জাহালমকে মিথ্যাভাবে মামলায় অভিযুক্ত করার পেছনে দায়ী কে? আপনার অফিসের কেউ আছে কি না, তাঁদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। এছাড়াও দুদকে আরো স্বচ্ছ এবং সর্তক হতে বলেন হাইকোর্ট।
দুদক সুত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এইসব মামলা তদন্ত করেন দুদকের উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালকসহ ৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি পদোন্নতি পেয়ে উপপরিচালক হয়েছেন। মেফতা হুল জান্নাত উপসহকারী পরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পরিচালক। মাসুদুর রহমান সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক হয়েছেন। আর উপসহকারী পরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক হয়েছেন জয়নাল আবেদীন; সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক হয়েছেন রাফি মো. নাজমুস সাদাত; সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক হয়েছেন এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন, উপসহকারী পরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক হয়েছেন মো. সাইদুজ্জামান; উপসহকারী পরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন সিলভিয়া ফেরদৌস। সহকারী পরিচালক থেকে উপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। ৮ কর্মকর্তাই তাদের কাজের মুল্যয়ন সরুপ এ পদোন্নতি দেন দুদক।
তদন্ত কমিটি দুদকের: আসামি না হয়েও দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় পাটকল শ্রমিক জাহালমের ৩ বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করেছে সংস্থাটি। দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে সার্বিক দিক খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যদি কোনো গাফিলতি থেকে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি।
জড়িতদের শাস্তি দাবি টিআইবি‘র: বিনা অপরাধে তিন বছর কারাবাসের পর শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে পাটকল শ্রমিক জাহালম মুক্তি পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তবে জাহালমের জীবন থেকে মহামূল্যবান তিনটি বছর নষ্ট হওয়ায় অবিলম্বে তাকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ি কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরাপরাধ জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ এবং ভুল তদন্তে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে আদালত ন্যায়বিচারের গুরুতর বিচ্যুতির অবসান ঘটিয়েছেন। এই ঘটনার গুরুত্ব নির্ধারণ করতে হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে। গত ৩০ জানুয়ারি এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আসার পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ভুল আসামির কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে তলব করেন আদালত। শুনানি শেষে আদালত জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন