কোরআন মাজীদ তাওহীদের দাওয়াত প্রসঙ্গে অনেক জায়গায় এ পন্থাও অবলম্বন করেছে যে, তাওহীদের শিক্ষার প্রতি বিদ্রোহকারী মুশরিক এবং শিরকের অতি পরিণতির ব্যাপারে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করেছে। তাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার অসন্তোষ ও বিরাগের কথা ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠ করা যায়। সূরা নিসায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এ পাপ যে, তার সাথে কাউকে শরিক করা হবে। পক্ষান্তরে তিনি ক্ষমা করবেন যাকে ইচ্ছা অন্যান্য গোনাহ।’ (সূরা নিসা: আয়াত ১১৬)।
এমনিভাবে সূরা মায়েদায় ইরশাদ করা হয়েছে, ‘এ কথা নিশ্চিত, যে কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন; আর দোজখই হলো তার স্থায়ী ঠিকানা। এসব জালেমের কোনো সাহায্যকারী ও সমর্থক নেই (যারা তাদেরকে আজাব থেকে অব্যাহতি দান করতে পারে।’ (সূরা মায়েদাহ: আয়াত ৭২)।
আর শিরক যেহেতু সম্পূর্ণ অমার্জনীয় অপরাধ এবং যেহেতু প্রত্যেক মুশরিকের জন্য জাহান্নামে জ্বলার অলঙ্ঘনীয় ফয়সালা হয়ে গেছে, তাই স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. এবং সমস্ত ঈমানদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, খবরদার, কোনো মুশরিকের জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে মাগফেরাত ও ক্ষমার দোয়াও করবে না। আল্লাহতায়ালা এসব নাপাক জালেমের পক্ষে মাগফেরাতের দোয়াও শুনতে চান না।
এই মর্মে কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘নবী রাসূল ও ঈমানদারদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফেরাত ও ক্ষমার দোয়া করা উচিত নয়, যদিও তারা তাদের নিকটবর্তী হয়।’ (সূরা তাওবাহ: আয়াত ১১৩)। একই সূরায় অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর সাথে যারা শরিক স্থির করে তারা অপবিত্র।’ (সূরা তাওবাহ: আয়াত ২৮)। এ সূরাতেই ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ মুক্ত ও অসন্তুষ্ট সমস্ত মুশরিক থেকে এবং অসন্তুষ্ট তার রাসূল নিজেও।’ (সূরা তাওবাহ: আয়াত ৩)।
কোরআন মাজীদের ‘দাওয়াতে তাওহীদ’ প্রসঙ্গে যদিও খুব বেশি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করিনি, কিন্তু তা সত্তে¡ও এ কথা সত্য যে, যা কিছু বিগত প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, তা থেকে পাঠকবর্গ যা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাকে কোরআন মাজীদের তাওহীদ সম্পর্কীয় বিবরণের সারসংক্ষেপ বলাও দুষ্কর।
আল্লাহ যাকে কোরআন বোঝার সৌভাগ্য দান করেছেন, সে লোক সরাসরি কোরআন মাজীদ সম্পর্কে গবেষণা করেই এর তাওহীদের দাওয়াতের ক্ষমতা ও শক্তি এবং এর ব্যাপকতা ও লালিত্য উপলব্ধি করতে পারে। বরং বলতে গেলে সেও যতক্ষণ এবং যে পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা করতে থাকবে, ততই অনুভব করতে থাকবে যে, এ পর্যন্ত আমি যা কিছু বুঝতে পেরেছি, কোরআনে তার চাইতে বহু বেশি রয়েছে। কবির ভাষায় বলতে হয়,
‘না আছে তার রূপমাধুরীর সীমা-পরিসীমা কোনো,
নাইবা সা’দীর কথার শেষ,
তৃষিতই মরে যায় তৃষ্ণাতুর, সাগর তবু
তেমনি থাকে, কভু হয় না নিঃশেষ।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন