শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মিরপুরে নারাইন শো

চিটাগংকে বিদায় করে ফাইনালের পথে ঢাকা

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এলিমিনেটর ম্যাচ, হারলেই বাদ। দুই দলের জন্যই কঠিন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় লেটার মার্ক নিয়ে পাস করল সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। রাউন্ড রবিন লিগে একটা সময় একক দাপট দেখানো চিটাগং ভাইকিংস নকআউট পর্বে এসে পাত্তাই পেল না। দুই দলের আগের দুটি ম্যাচেই জিতেছিল চিটাগং। কিন্তু নকআউটে ছবিটা বদলে দিল ঢাকা। চিটাগংকে বিদায় করে ফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকল ঢাকা। মিরপুরে গতকাল নারাইনের দারুণ বোলিংয়ে ১৩৫ রানে আটকে যায় চিটাগং। পরে ওপেনিংয়ে নেমে এই ক্যারিবীয় খেলেন ১৬ বলে ৩১ রানের ক্যামিও। সঙ্গে উপুল থারাঙ্গার ফিফটিতে ঢাকা জিতে যায় ২০ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই। একই দিন সন্ধ্যায় হওয়া প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচে হেরে যাওয়া দলটির বিপক্ষে আগামীকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে সাকিবের দল।
এই হারে শেষ হলো চিটাগংয়ের চমকগ্রদ অগ্রযাত্রা। এবারের বিপিএলে তাদের অংশ নেওয়াই একসময় ছিল সংশয়ে। শেষ পর্যন্ত দল গড়লেও রসদ ছিল না সমৃদ্ধ। কিন্তু শুরু থেকেই দারুণ খেলে তারা জায়গা করে নিয়েছিল শীর্ষ চারে। গতকাল চিটাগংয়ে ভুগতে হয়েছে আগ্রাসী ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ না থাকায়। দলের টানে দেশে ফিরে গেছেন এই আফগান উইকেটরক্ষক বাটসম্যান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলে ক্যামেরন ডেলপোর্টের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন টুর্নামেন্টে দলের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি।
শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এদিন সত্যিই হয়েছে ‘ওয়ান ম্যান শো’। বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ চারটি উইকেটের পর ব্যাটিংয়েও শুরুতে ঝড় তুললেন সুনিল নারাইন। মামুলি কিন্তু মিরপুরের উইকেটের হিসেবে ‘কঠিন চালেঞ্জ’ এক লহমায় উড়িয়ে দিলেন নারাইন। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন থারাঙ্গাকে। এই দুইয়ের সৌজন্যে লড়াই জমতেই দেয়নি ঢাকা। চোট কাটিয়ে ফেরা চিটাগংয়ের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র রবি ফ্রাইলিঙ্কের প্রথম ওভারেই তিনটি চার মারেন দুজন মিলে। পরের ওভারে নাঈম হাসানকে দুটি চার ও এক ছক্কা মারেন নারাইন। দুজনের ব্যাটিংয়ে ৪ ওভারেই ৪৪ তুলে ফেলে ঢাকা। চিটাগংয়ের সম্ভাবনারও একরকম শেষ প্রায় ওখানেই।
চিটাগংয়ের পেসার খালেদ হোসেন পরে চেষ্টা করেছেন দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ করা নারাইনকে ফিরিয়েছেন মেডেন ওভারে। তিনে নেমে ১৩ বলে ২০ রান করেছেন রনি তালুকদার। তাকে ও সাকিবকে পরপর দুই বলে ফেরান খালেদ। কিন্তু লক্ষ্য ছোটো ছিল বলে ঢাকা চাপেই পড়েনি সেভাবে। আগের ম্যাচে ৪২ রান করা থারাঙ্গা এবার পেরিয়ে যান ফিফটি। ৪৩ বলে ৫১ রান করা ওপেনারকে থামান নাঈম। তবে ঢাকাকে থামানোর উপায় ছিল না। কাইরন পোলার্ডকে নিয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন নুরুল হাসান সোহান। ঢাকা এগোয় ফাইনালের পথে আরেক ধাপ।
এর আগে ৩ উইকেট নিয়ে চিটাগং লাইনআপ একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন নারাইন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে (৮) দিয়ে শুরু, এরপর ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ফিরিয়েছেন থিতু হয়ে যাওয়া সাদমান ইসলামকে (১৯ বলে ২৪), দাঁড়াতেই দেননি ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা দলের বিপদের কান্ডারী রবি ফ্রাইলিঙ্ককে (৪ বলে ১), নিজের শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকান হার্ডাস ভিজনকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেছেন কোটা। ৪ ওভার শেষে নারাইনের বোলিং ফিগার ৪-০-১৫-৪।
একদিকে যখন উইকেট উৎসবে মেতেছেন নারাইন অপরপ্রান্তে চিটাগংয়ের রানে রাশ টেনেছেন সাকিব। ৪ ওভার বল করে কোন উইকেট না পেলেও ডায়নামাইটস অধিনায়ক দিয়েছেন মাত্র ১১ রান!
এর মাঝে অবশ্য স্রোতের বীপরিতে ব্যাট চালিয়ে চিটাগংকে দিশা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। রানআউটে কাটা পড়ার আগে ২৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস সাজিয়েছেন ৫টি চার ও একটি ছক্কায়। তার সঙ্গে সাদমানের কার্যকরী জুটিও চিটাগংকে দেয় একশ রানের ভিত। তবে মোসাদ্দেক বাদে মিডল অর্ডারের বাকিদের ব্যর্থতায় ঢাকাকে দিতে পারেনি শক্ত চ্যালেঞ্জ। রান আউট হবার আগে ৩৫ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৪০ রানের লড়াকু ইনিংস। নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে থামে ১৩৫ রানে। একটি করে শিকার গেছে রুবেল হোসেন আর কাজী অনিকের ঝুলিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চিটাগং ভাইকিংস : ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (ইয়াসির ৮, ডেলপোর্ট ৩৬, সাদমান ২৪, মুশফিক ৮, মোসাদ্দেক ৪০, শানাকা ৭, ফ্রাইলিঙ্ক ১, ভিলিওন ১, নাঈম ৬*, আবু জায়েদ ১*; রাসেল ২-০-২১-০ সাকিব ৪-০-১১-০, রুবেল ৩-০-২৭-১, শুভাগত ২-০-১৩-০, নারাইন ৪-০-১৫-৪, মাহমুদুল ১-০-১০-০, অনিক ৪-০-৩৬-১)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৬.৪ ওভারে ১৩৬/৪ (থারাঙ্গা ৫১, নারাইন ৩১, রনি ২০, সাকিব ০, সোহান ২০*, পোলার্ড ৭*; ফ্রাইলিঙ্ক ১-০-১৩-০, নাঈম ৩-০-২৮-১, আবু জায়েদ ৩-০-২২-০, ভিজন ৪-০-৩৩-০, খালেদ ৪-১-২০-৩, ডেলপোর্ট ১-০-১১-০, শানাকা ০.৪-০-৬-০)।
ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : সুনিল নারাইন (ঢাকা)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন