শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রতিবেশীর অধিকার ও সদ্ব্যবহার-২

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হাদিসে কত সুন্দর করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে প্রতিবেশীর উপকার করা যায়। আহ! কতই না সরল ও দরদী শিক্ষক তিনি এই উম্মতের! গোটা মানবজাতির! সুবহানাল্লাহ।
আচ্ছা! প্রতিদিন তিন বেলা খাবার গ্রহণ করে থাকি আমরা। প্রতিদিনই নতুন নতুন পদের রান্নাও হয়, সেই রান্না থেকে একেক করে প্রতিবেশীদের জন্য যদি কিছু উপহার পাঠাই, খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে? এতটুকুতে কি আমরা গরিব হয়ে যাব?
অবশ্যই নয়। বরং এই সামান্য ও সাধারণ কাজের মাধ্যমে আমাদের চার পাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভীষণ আন্তরিকতা ও ভালোবাসাময় পরিবেশ পেতে পারি আমরা। আর আন্তরিক প্রতিবেশী পাওয়া নিজেদের শান্তি, আস্থা ও নিরাপত্তার জন্য কতই না দরকার। উম্মতের শান্তি ও নিরাপদ বসবাস কামনা করে পথ দেখান যে মহামানব, তিনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল।
আরেকটু অগ্রসর হই। আমাদের তো একাধিক বা অনেক প্রতিবেশী থাকেন, তা হলে আমরা কাকে আগে উপহার পৌঁছাব বা কার সঙ্গে আগে এবং অধিক সুসম্পর্ক বজায় রাখব? এরও নির্দেশনা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস থেকেই পেতে পারি।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো দু’জন প্রতিবেশী রয়েছে, আমি তাদের কোন জনকে হাদিয়া দেবো? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, যার ঘরের দরজা তুলনামূলক তোমার বেশি নিকটে, প্রথমে তাকে দেবে। -সহীহ বুখারী
এ হাদিসে নিকট প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার সাব্যস্ত হয়েছে। যার সামর্থ্য কম, সে নিকটতম প্রতিবেশীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। যার সামর্থ্য বেশি, সে নিকট থেকে তুলনামূলক দূরবর্তী প্রতিবেশীরও উপকার করবে। এভাবেই প্রতিবেশীদের সীমা বা তালিকা নির্ণয় করে দেয়া যাবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সেই লোক, যে তার সঙ্গীর কাছেও ভালো এবং সর্বোত্তম প্রতিবেশী সেই লোক, যে তার প্রতিবেশীর কাছেও ভালো। -জামে তিরমিযী
এ হাদিসে বোঝা যায়, প্রতিবেশীর সেবা ও উপকারে শুধু প্রতিবেশীই খুশি হন না, আল্লাহও খুশি হন। আর প্রতিবেশী যাকে ভালো মানুষ হিসেবে পায় ও স্বীকার করে, তিনি আল্লাহর বিচারেও ভালো ও উত্তম মানুষ। কাজেই শুধু সামাজিক সৌজন্যতার খাতিরে নয়, আল্লাহতায়ালার রেজামন্দির উদ্দেশ্যেই প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে মুসলিম নারীরা! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে অধম বা তুচ্ছজ্ঞান না করে; যদিও সে ছাগলের একটি খুরই উপঢৌকন হিসেবে পাঠায়। -সহীহ বুখারী ও মুসলিম
এ হাদিসটিতে আমরা বিপরীত দিকের বা অবস্থানের নির্দেশনা পাই। অর্থাৎ প্রতিবেশী হিসেবে যখন অন্যরা আমাদের কিছু উপহার দেবে, সেটি যা-ই হোক, যেমনই হোক বা যতটুকুই হোক, সে উপহারকে খুশিমনে গ্রহণ করতে হবে এবং সে প্রতিবেশীকেও সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এ নিয়ে তাচ্ছিল্য বা বিমুখতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মোটেও পছন্দ নয়। আর এতে প্রতিবেশীও যে কতটা কষ্ট পাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মাহমুদ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:২৮ এএম says : 0
প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার, তাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন এবং পরস্পরের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, আর ইবাদত করো আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। আর পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকট আত্মীয়, ইয়াতিম-মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীদের সাথেও ভালো ব্যবহার করো। (সূরা আন নিসা, আয়াত-৩৬)।
Total Reply(0)
মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:২৮ এএম says : 0
ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সকল প্রকারের প্রতিবেশীর সাথে সৌহার্দ্যপুর্ণ এবং ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা। যা ঈমানের দাবি।
Total Reply(0)
দাউদ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:২৯ এএম says : 0
কোন প্রকার বর্ণের ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানব কল্যাণের কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। একজন মুমিনকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে। জগতের সকল মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবীয় আচরণ প্রদর্শনে ইসলাম গুরুত্ব আরোপ করেছে বেশ কঠোরভাবে।
Total Reply(0)
তুষার ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩১ এএম says : 0
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ পরস্পর একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বাড়ীর পাশাপাশি বসবাসকারী আত্মীয় বা অনাত্মীয় লোকজনই প্রতিবেশী। মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে এরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে এবং সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে। কাজেই এই প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা যরূরী। প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ককে সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল করার লক্ষ্যে ইসলাম বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য পালনীয়।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩২ এএম says : 0
সমাজকে সুন্দর করার জন্য প্রতিবেশীর সাথে সম্প্রীতি-সদ্ভাব বজায় রাখা এবং তার সাথে সদাচরণ করা যরূরী। এতে সমাজে শান্তি বিরাজ করে। প্রতিবেশীর হক আদায় করলে পার্থিব জীবনে উপকারের পাশাপাশি পরকালীন জীবনেও অশেষ ছওয়াব অর্জিত হবে। আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিবেশীর হক আদায় করার তাওফীক্ব দিন-আমীন
Total Reply(0)
বাবুল ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩৩ এএম says : 0
প্রতিবেশীর হক অত্যধিক। তাদের সাথে সদাচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা রাসূলের নির্দেশ। খাদ্য আদান-প্রদান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যরূরী। প্রতিবেশীর হক আদায় না করলে এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার না করলে জান্নাত পাওয়া দুষ্কর হবে।
Total Reply(0)
মাহমুদ আহমদ সুমন ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩৪ এএম says : 0
আমরা যদি কোরআনের শিক্ষার ওপর আমল করি তাহলে একটি চমত্কার ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এমন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে কোনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হবে না, বউ-শাশুড়ির ঝগড়া হবে না, ভাই ভাইয়ের ঝগড়া হবে না। পাড়া প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া হবে না। সকলে একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসবাস করবে। একে অন্যের উপকার করার চেষ্টা করবে, প্রত্যেকের অধিকার প্রত্যেকে আদায় করতে চেষ্টা করবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন