মুসলিম মিল্লাতের জন্য জুমার দিন ও জুমার নামাজ এক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের ফজিলত এবং মর্তবা অপরিসীম।
কেননা, যুগ, কাল, বছর ও মাসের আবর্তনে আল্লাহপাকের অসীম রহমত ও কুদরতের ঝর্ণাধারা জুমার দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এর শেষ কোথায় তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন। মহান রাব্বুল আলামীন সৃষ্ট জগতের নিয়মশৃঙ্খলা সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার জন্য বছর, মাস, সপ্তাহ এবং দিনের ব্যবস্থা করেছেন। বছরে বারটি মাসের সংযোজন করেছেন। মাসকে ত্রিশটি দিন ও সপ্তাহকে সাত দিনে বিন্যস্ত করেছেন। দিন ও রাতকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। এটা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের অমোঘ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মাঝে কোনোরকম ব্যত্যয় সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই, হবেও না।
সপ্তাহের দিনগুলোর মাঝে জুমার দিনটির ফজিলত ও মর্তবা সবচেয়ে বেশি। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, নবী করিম সা. বলেছেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন। এ জুমার দিনেই আদম আ.-কে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন, এ জুমার দিনেই তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে, এ জুমার দিনেই তাকে জান্নাত হতে বের করে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যেখানে তার হতে মানব বংশের ধারা সূচিত হয়েছে এবং কিয়ামতও এ জুমার দিনেই অনুষ্ঠিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
এই বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ দিনটিতে আল্লাহপাক উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার ওপর জুমার নামাজকে ফরজ করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের (জুমার নামাজের) দিকে দৌড়ে এসো।’ এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছেন, আমরা সর্বশেষ আর কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রবর্তী।
পার্থক্য শুধু এই যে, অন্যান্যকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে। পরে এই দিনের সম্মান করা তাদের ওপর ফরজ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা পরস্পর এ বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয়। তারপর আল্লাহপাক আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন। অতএব এ ব্যাপারে অন্য লোকেরা অনুগমনকারী। ‘ইহুদিদের দিন আগামীকাল এবং খ্রিষ্টানদের দিন আগামীকালের পরের দিন পরশু।’ (সহীহ বুখারী ও সুনানে নাসাঈ)
জুমার দিন জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। হযরত তারেক ইবনে শিহাব রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, জুমার নামাজ সঠিক, সত্য বিধান। এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জামাতে আদায় করা ফরজ। তবে চার শ্রেণীর মানুষ এ বাধ্যবাধকতা হতে মুক্ত। তারা হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (সুনানে আবু দাউদ)। জুমার নামাজ না পড়া বড়ই অপরাধের কাজ।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবু জায়েদ যামরী হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও উপেক্ষাবশত ছেড়ে দেবে, পড়বে না, আল্লাহপাক তার দিলে মোহর লাগিয়ে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে দারেমী, মোয়াত্তা ইমাম মালেক।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তারা দু’জনেই বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-কে তার মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি যে, জুমা ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক নতুবা আল্লাহতায়ালা তাদের এই গুনাহের শাস্তিতে তাদের দিলের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। আর সংশোধন লাভের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম)।
জুমার নামাজ পাপ মোচনকারী। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, এক জুমা হতে অপর জুমা পর্যন্ত (মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোর) কাফফারা হয়ে যাবে, যে ব্যক্তি এ সময়ে কবীরা গুনাহ হতে বিমুক্ত থাকে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন