বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খোদায়ী হেদায়েতের আনুগত্য ও অনুসরণ-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

যদিও এ কথা সত্য যে, আল্লাহ তায়ালার সত্তাকে অনুধাবন করার এবং বান্দাদের হেদায়েতের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত রেসালত পরম্পরাকে মেনে নিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে নেয়ার পর বান্দার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে নিজেদের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া যে, এ জগৎ-সংসারে আমাকে আল্লাহর হুকুম-আহকাম তথা বিধিবিধান এবং তৎকর্তৃক অবতীর্ণ হেদায়েতের অনুগত থেকেই জীবন যাপন করতে হবে।
তথাপি কোরআন মাজীদ শুধু এই অপরিহার্যতার ওপরই ক্ষান্ত হয় না, বরং বিশেষভাবেও মানুষকে (নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আগত) আল্লাহ তায়ালার হেদায়েত ও হুকুম-আহকামের আনুগত্যকে জীবনের আদর্শে পরিণত করে নেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। পরিপূর্ণ গুরুত্বসহকারে বিভিন্ন জায়গায় তাদের কাছে তা দাবি করে।
বস্তুত এটিই হলো মুক্তির পথ। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত পথ ধ্বংসের পথ। সূরা আন’আমে বলা হয়েছে, ‘বলে দিন হে নবী, আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হেদায়েতই জীবনের সঠিক পথ। আর আমাদের সবার প্রতি পালনকর্তার হুকুম পালনের নির্দেশ করা হয়েছে।’ (সূরা আন’আম : আয়াত ৭১)।
সূরা আ’রাফের একেবারে শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘সে হেদায়েতেরই অনুসরণ করো, যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এবং তাকে ছাড়া অন্য মালিকদের আনুগত্য করো না। (কারণ, প্রকৃত মালিক ও পালনকর্তা শুধু তিনিই।)’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩)।
সূরা যুমারে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং প্রত্যাবর্তন করো নিজের প্রভুর দিকে, তার হুকুম পালন করো তোমাদের ওপর তার আজাব নেমে আসার পূর্বে। অথচ তখন কেউ তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না। আর অনুসরণ করো সেই উৎকৃষ্টতর হেদায়েতের, যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, তোমাদের ওপর আকস্মিক আজাব নেমে আবার পূর্বে অথচ তোমরা জানতেও পারবে না।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৫৪-৫৫)।
এ তো ছিল খোদায়ী হেদায়েতের আনুগত্যের ব্যাপারে তাকিদ। তদুপরি কোরআন মাজীদে এসমস্ত আয়াত ছাড়াও ‘আতীউল্লাহ’ ও ‘ওয়া আতীউর রাসূল’ কিংবা এর সমার্থক বহু শব্দে একই দাবি জানানো হয়েছে। তারপর মান্যকারী ও অমান্যকারীদের পরিণতি সম্পর্কেও কোরআনের ভাষাতেই শুনুন।
সূরা ফাতহে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে এবং তাদের নির্দেশিত পথে চলবে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এমন জান্নাতে পৌঁছাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। পক্ষান্তরে যারা অমান্য করবে এবং সত্য পথ থেকে ঘুরে দাঁড়াবে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এ অপরাধের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি দেবেন।’ (সূরা ফাতহ : আয়াত ১৭)। অন্যত্র মান্যকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর যারা আনুগত্য করে আল্লাহ এবং তার রাসূলের, তারা অর্জন করল মহা সাফল্য। (সূরা আহযাব : আয়াত ৭১)।
সূরা নিসায় এই ‘মহা সাফল্য’-এর তফসির ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে- ‘আর যে বান্দা আনুগত্য করবে আল্লাহ ও তার রাসূলের, সে আল্লাহ তায়ালার সেসব বান্দার সাথে থাকবে, যাদের প্রতি তার বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে। অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মীগণ। বস্তুত কতই না চমৎকার এসব সঙ্গী! আর এটা হবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাদের জন্য করুণা বিশেষ। আর আল্লাহ সর্বোত্তম জাননেওয়ালা।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯-৭০)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সাদ বিন জাফর ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
উচ্চমর্যাদা ও যথার্থ সম্মান পেতে হলে অবশ্যই পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ডাকে সাড়া দেয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে। এ উচ্চতা ও মহত্ত্বের সঙ্গে যদি সমর্পণ, শ্রদ্ধা ও মহানুভবতা যুক্ত হয় তাহলে অনুগ্রহকারীর প্রতি আনুগত্য হবে আরও পূর্ণাঙ্গ। তার আদেশ-নিষেধের সাড়াদান হবে আরও সুন্দর, শক্তিশালী ও পরিপূর্ণ।
Total Reply(0)
তরিক মাসুদ ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎ পথে পরিচালিত করতে পারতেন। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯)
Total Reply(0)
Wahid Ahmed ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মোমিনরা, রাসুল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে আহ্বান করেন, যা তোমাদের প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসুলের আহ্বানে সাড়া দেবে এবং জেনে রাখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যে অন্তরায় হয়ে থাকেন (তিনি অন্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন) এবং তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে।' (সূরা আনফাল : ২৪)।
Total Reply(0)
Mhr Habibur Rahman ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
আল্লাহ ও রাসুলের সবচেয়ে মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাকর আনুুগত্য হচ্ছে তৌহিদ বা আল্লাহর একত্ব স্বীকার ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর হক আদায় করা, যা দ্বীনের সবচেয়ে বড় নির্দেশ। সব আমলের ভিত্তি। ইবাদতের প্রাণ। আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মূল খুঁটি ও স্তম্ভ।
Total Reply(0)
Nahid hasan ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
তৌহিদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, বান্দার সব বাহ্যিক ও আত্মিক আমল, কর্মকান্ড, কথাবার্তার ওপরই নির্ভরশীল ও এর দিকেই প্রত্যাবর্তনশীল। আল্লাহর কিতাবে তাই আমল বিনষ্টকারী শিরক সম্পর্কে সতর্কবাণী এসেছে।
Total Reply(0)
Md Mostak ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
ইসলাম এমন এক সর্বজনীন জীবন বিধান, যেখানে নেই কোনো সংকীর্ণতা বা সংঘাত। এতে রয়েছে উদারতা, বিশালত্ব ও গোটা সৃষ্টির প্রতি মমত্ববোধ।
Total Reply(0)
younus ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি, ধর্ম-নির্বিশেষে সব নাগরিকের যথাযথ অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন