শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুখ প্রসঙ্গে কী বলে ইসলাম

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মানুষ প্রকৃতগতভাবে সুখান্বেষী। সুখী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই তার পথচলা। সুখ কোনো দ্রষ্টব্য বস্তু নয়। এটা নিতান্তই ইন্দ্রিয়ানুভূতির বিষয়। মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, উচিত-অনুচিত, আনন্দ-নিরানন্দ পরিমাপ করার একটা মানদন্ড আছে। এই মানদন্ড ইন্দিয়ানুভূতি সৃষ্টি করে। এই ইন্দিয়ানুভূতিতে যা কিছুই ইতিবাচক হিসেবে প্রতিফলিত হয় এবং যা উপকারী ও আনন্দদায়ক, তাই সুখের উৎস। যেমন- ভালো কাজ বা পুণ্যকর্ম মানুষের মধ্যে সুখানুভূতি সৃষ্টি করে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। এই মানসিক প্রশান্তিই সুখ।
সুখের উৎস অসংখ্য। ঘর বাঁধায় সুখ, উত্তম স্ত্রীতে সুখ, ভালো সন্তানে সুখ, বিত্তবৈভবে সুখ, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যে সুখ, কারো কল্যাণে বা সেবায় সুখ, সৎ জীবনযাপনে সুখ, ক্ষমতায় সুখ, কারো আনুগত্যে সুখ, নিরাপত্তায় সুখ, শান্তিতে সুখ- এ রকম আরো নানা বিষয়ে সুখ বিদ্যমান। পবিত্র কোরআনে আছে, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। এটাই সুখ। পবিত্র হাদিসে আছে, সকল পুণ্যকর্ম শান্তি এনে দেয়। এই অনুভবই সুখ।
প্রশ্ন হলো, সুখ কি সবাই পায়? সুখের উৎস ও উপাদানগুলো কি সবাইকে সমান সুখী করতে পারে? এর উত্তর নিশ্চিত নয়। একজন মানুষ হয়তো বিত্ত-সম্পত্তিতে সন্তুষ্ট। অন্যরা তা নয়। অন্য কেউ হয়তো কষ্টের সঙ্গে জীবনযাপনে সন্তুষ্ট। কেউ বা আবার দারিদ্র্যেও সন্তুষ্ট। যেমন- কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছো মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান।’
সুখী হওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্তে¡ও কেউ সুখী হয়, কেউ বা হয় না। অন্য এক কবির ভাষায়- ‘সদায় সুখ সুখ করি আমি, সুখতো আমার হলো না।’ মধ্যযুগীয় এক কবি বলেছেন, ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল, অমিয়া সাগরে সিনন করিতে সকলি গরল ভেল।’
সুখসন্ধানী অনেকের ভাগ্যেই সুখের দেখা মেলে না। সুখের ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার কিংবা সুখসাগর গরলে পরিণত হওয়ার নজিরও আমাদের সামনে ভূরি ভূরি। এই তো ক’দিন আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের একজন ডাক্তারের ঘরই শুধু পুড়ে ছাই হয়ে যায়নি, তার জীবনও চলে গেছে। তিনি আত্মহত্যা করে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। দীর্ঘ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিয়ে করা স্ত্রীর প্রতি তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। পরকীয়ার অভিযোগ ছিল তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
সেই স্ত্রী এখন জেলে। তার জীবনও বিষময়। সমাজে এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, সন্তান পিতা বা মাতাকে, পিতামাতা সন্তানকে এবং ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। ধর্ষণের রীতিমতো উৎসব চলছে। মাদকের তান্ডব ও আগ্রাসন সর্বত্র। জানমালের নিরাপত্তা কোথাও নেই। এ অবস্থায় কোথায় সুখের সন্ধান মিলবে? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এক গভীর অসুখে আক্রান্ত।
দেশে সুখ যে দিনে দিনে উঠে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-১৮তে তার প্রমাণ রয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫। ২০১৭ সালে ছিল ১১০। অর্থাৎ এক বছরে ৫ ধাপ অবনমন ঘটেছে।
রিপোর্টে সুখের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়েছে- জিডিপি, সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দাতব্য সেবা ও দুর্নীতিহীনতাকে। রিপোর্টে দেখা গেছে, যেসব দেশে বৈষম্য ও ভেদাভেদ কম ও সহায়তা বেশি, সেসব দেশের মানুষই সুখী।
ইসলাম বলে, সুখের ভিত্তি বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, কৃতজ্ঞতা, ব্যাপক রিজিক ও ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্টি, তৃপ্তি ও আশাবাদিতা। জীবনে যা পাওয়া গেছে তা নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা, যা পাওয়া যায়নি তা নিয়ে না ভাবা। সব সময় নিজের চেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীকে দেখা, বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পরিবার ও শ্রেণীকে না দেখা। এভাবে চললে মন বিচলিত ও নিক্ষিপ্ত হওয়ার বদলে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত হবে।
সেজন্যই বলা হয়, ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘আমি তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি ও তার মধ্যে রিজিকের ব্যবস্থাও করেছি। তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ সূরা আরাফ : আয়াত ১০। রাসূল সা: বলেছেন, প্রকৃত সুখ ও ঐশ্বর্য হচ্ছে অন্তরের সুখ ও ঐশ্বর্য।
তিনি আরো বলেন, মানুষকে যত নেয়ামত দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে কৃতজ্ঞ অন্তর। তিনি এও বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে আল্লাহকে রব, ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা এবং মুহাম্মদ সা:-কে নবী হিসেবে কবুল করে নিয়েছে, সেই ব্যক্তি প্রকৃত ঈমানের সম্পদ লাভ করেছে। বস্তুত ঈমানই সুখের চাবিকাঠি। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈমানদার হওয়ার সুযোগ দিয়ে সুখী হওয়ার তৌফিক দান করুন, এই কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সাদ বিন জাফর ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
বলে দাও, 'আল্লাহ নিজ বান্দাদের জন্য যেসব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, তা কে হারাম করেছে?' বলো, 'পার্থিব জীবনে বিশেষ করে কেয়ামতের দিন এসব নিয়ামত তাদের জন্য, যারা ইমান আনে।' এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য (আমার) আয়াতগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করি। (সুরা আরাফ : ৩২) তাফসির : এ আয়াতে সেসব লোককে হুঁশিয়ার করা হয়েছে, যারা ইবাদতে বাড়াবাড়ি করে এবং নিজ কল্পনা অনুসারে ধর্মে সংকীর্ণতা সৃৃষ্টি করে। যারা আল্লাহর বিধিবিধান ছাড়াই নিজেরা কোনো খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম করে নেয়, তাদের শাসানোর জন্য আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, "বান্দাদের জন্য সৃজিত 'ঝিনত' তথা উত্তম পোশাক এবং আল্লাহ প্রদত্ত সুস্বাদু ও উপাদেয় খাদ্য কে হারাম করেছে?"
Total Reply(0)
মোঃ নাজীব ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
সুস্থ ও সুখী সামাজিক জীবনের জন্য বিবাহ একটি প্রয়োজনীয় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। পবিত্র কোরানে বিবাহ ও পারিবারিক জীবনকে পারস্পরিক সহমর্মিতা, অন্তরের অনাবিল সুখ ও শান্তির উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে। পরিবারের জন্য তারা পরস্পর সম্পূরক।
Total Reply(0)
মিয়া সরোয়ার ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
কোনো বস্তু হালাল কিংবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ, যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জীর্ণ ও সংকীর্ণ অবস্থায় জীবন যাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়; যেমনটা অনেক অজ্ঞ লোক মনে করে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে, ইসলাম কেবলই পারলৌকিক ধর্ম নয়, ইসলামে ইহজাগতিকতা ও পারলৌকিকতার মধ্যে ভারসাম্য দাঁড় করানো হয়েছে। ইসলামে দুনিয়াকে প্রয়োজনমতো গ্রহণ করে পরকালের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ইসলাম দুনিয়া ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়নি, দুনিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে নিষেধ করেছে। পূর্ববর্তী মনীষীদের অনেককেই আল্লাহ তায়ালা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দান করেছিলেন। তাঁরা প্রায়ই উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান পোশাক পরিধান করতেন।
Total Reply(0)
মোঃ বেলায়েত হোসেন ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
রিজিক অন্বেষণে আমরা অনেকেই আশানুরূপ সফলতা পাই না। অনেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেও কাঙ্খিত সুখ-প্রশান্তি বা মানসিক পরিতৃপ্তি অর্জন করতে পারি না। অর্থাৎ বহু পরিশ্রম করে, দু’হাতে উপার্জন করেও অভাব দূর হয় না, টানাটানি লেগেই থাকে! এর কারণ বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিন্মোক্ত হাদিসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি (উপার্জনের উপায় অবলম্বনের পাশাপাশি) আমার ইবাদতের জন্য নিবিড়ভাবে নিজেকে নিবিষ্ট কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। আর যদি তা না কর, আমি তোমার দু’হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব অথচ তোমার অভাব-অনটন দূর করব না।’ –সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং- ২৪৬৬
Total Reply(0)
00000000 ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহ মানুষের জীবনকে বিষাদময় এবং উদ্বেগপূর্ণ করে তোলে। আল্লাহর প্রতি শক্তিশালী বিশ্বাস হচ্ছে একজন ভালো, সুস্থ হৃদয় ও বিবেকবান মানুষের পরিচয়। আর যারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী তারা দূর্বল হৃদয়য়ের মানুষ।
Total Reply(0)
নাজমুস সাকিব ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
মুমিন-মুসলমানকে আল্লাহতায়ালা প্রকৃত স্বচ্ছলতা, মানসিক সুখ এবং অনাবীল প্রশান্তি তখনই দান করবেন যখন সে ইবাদতে নিবিড়ভাবে নিবদ্ধ থেকে উপার্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
Total Reply(0)
হাসানুর রহমান এজাজী ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:১৭ পিএম says : 0
সুখী হতে চাইলে দুঃখীদের হালহকিকত রপ্ত করা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন