বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ঈমান ও ইসলামের বিপরীত হলো কুফর-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হাল জমানায় ‘কুফর’ ও ‘কাফের’ শব্দের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে বলেই মনে হয়। কেননা, মুসলমান রাজা-বাদশাহদের দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রগুলোতে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ‘কুফর’ ও ‘কাফের’ শব্দের ব্যবহার ঢালাওভাবে করা হচ্ছে। বাছ নেই, বিচার নেই, শরয়ী প্রমাণের বালাই নেই, যত্রতত্র রাজানুগত্য প্রদর্শনের আলখাল্লাহ গায়ে দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ উল্লিখিত শব্দ দু’টির দ্বারা অন্যকে হেয়, অপাঙ্ক্তেয় ও ইসলাম থেকে খারিজ প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে অপতৎপরতায় মেতে উঠেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এটা যেন পদ্মদীঘির নৃত্য চপল তরঙ্গের অথৈ মেলা। যার কোনো এক প্রান্তে ঢেউয়ের সৃষ্টি হলেই তা নর্তন-কুর্দনসহ আশপাশ তোলপাড় করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এমনটি কোনো বিবেকবান মুসলমানের কাম্য হতে পারে না। আর পারে না বলেই কুফর এবং কাফিরের যথার্থ পরিচয় অবহিত হওয়া একান্ত দরকার।
বস্তুত যা ঈমান ও ইসলামের বিপরীত তা-ই হলো ‘কুফর’। কুফরের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঢেকে রাখা। আচ্ছাদিত করা, গোপন করা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা জানানো। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কুফর হলো, জরুরিয়াতে দ্বীন তথা ইসলামের অত্যাবশ্যকীয়, সুস্পষ্ট, সর্বজনবিদিত বিষয়াবলিকে অস্বীকার করা অথবা তন্মধ্য থেকে কোনো একটি বিষয় অস্বীকার করা।
আর ঈমানের বিপরীত কুফর হলো, যে বিষয়ে ঈমান বা আন্তরিক বিশ্বাস থাকা আবশ্যক, সেখানে ঈমান না থাকা। (শরহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃ. ৪৫৭)। আয়েম্মায়ে মুজতাহেদিন কুফরকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছেন। এতে করে কে প্রকৃতই কাফের তা শনাক্ত করা সহজতর হয়ে উঠেছে। আর এগুলো হচ্ছে প্রধান প্রধান কুফুরি। যথা:
ক. কুফরে ইনকার: যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে না, মুখেও তার স্বীকৃতি দেয় না। যেমন ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে অদ্যাবধিকালের সাধারণ কাফের-মুশরিক যারা, তারা অন্তরেও বিশ্বাস করে না। মুখেও স্বীকার করে না। তারা প্রকৃতই কাফের।
এদের সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কাফেররা ওইসব বিষয় হতে মুখ ফিরিয়ে রাখে, যেসব বিষয়ে তাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে।’ (সূরা আহকাফ: আয়াত ৩)। মোট কথা, কুফরে ইনকার হলো, ঈমান ও ইসলামের বিষয়াবলি অন্তরে ও মুখে অস্বীকার করা, সত্য বলে বিশ্বাস না করা, সত্যের নিকটবর্তী না হওয়া। (ফয়জুল বারী: খন্ড ১, পৃ.৭১)।
খ. কুফরে জুহুদ: মনে মনে জরুরিয়াতে দ্বীনকে সত্য বলে অনুধাবন করা কিন্তু অন্তর থেকে তা গ্রহণ না করা এবং মুখেও স্বীকার না করা। যেমন রাসূলুল্লাহ সা:-এর যুগের ইহুদি, নাসারা ও শয়তান ইবলিশের কুফরি।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আর যখন ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, ইবলিশ সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল। অহঙ্কার করল। সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ৩৪)। মূলত অন্তর দিয়ে সত্য জানার পরও মুখে স্বীকার না করাকে কুফরে জুহুদ বলে। যেমন ইবলিশ কুফরি করেছিল। (ফয়জুল বারী: খন্ড ৯, পৃ. ৭১)।
গ. কুফরে ইনাদ: যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে অন্তর থেকে মেনে নেয় এবং মুখেও স্বীকার করে। তারপরও বাতিল, ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীনতার প্রকাশ্য ঘোষণা প্রদান করে না। তারাও কাফের শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন কতিপয় ব্যক্তি সত্য দ্বীন ইসলামকে গ্রহণ করার পর, এর সাথে বর্তমান বিকৃত ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মকে সঠিক ধর্ম বলে মনে করে।
তাদের সম্পর্কে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের এক অংশের ওপর ঈমান আনো আর এক অংশের সাথে কুফরি করো?’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ৮৫)। মোট কথা, কুফরে ইনাদ হলো, অন্তরে সত্যটা বুঝতে পারা, মুখেও স্বীকার করা। তারপরও অন্তর থেকে বিশ্বাস ও মান্য না করা এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপন না করা। যেমন আবু তালেবের কুফরি। (ফয়জুল বারী: খন্ড ১, পৃ. ৭১)।
ঘ. কুফরে নিফাক: যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে অন্তর থেকে অস্বীকার করে, কিন্তু পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে মৌখিকভাবে দ্বীনের সত্যতা স্বীকার করে, এ শ্রেণীর লোককে ব্যবহারিক ভাষায় মুনাফিক বলা হয়। কাফের অপেক্ষা মুনাফিক ইসলামের জন্য জঘন্য শত্রু, বেশি ক্ষতিকর।
এদের সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, যখন মুনাফিকরা আপনার নিকট আসে, তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দান করি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল।’ (সূরা মুনাফিকুন : আয়াত ১)। বস্তুত কুফরে নিফাকের রূপ হলো, মুখে তো স্বীকার করে কিন্তু অন্তর থেকে অস্বীকার করে। (ফয়জুল বারী: খন্ড ১, পৃ. ৭১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Md Rasel Khan ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
শুকরিয়া। মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হতে হলে অবশ্যই ইসলাম, কুফর ও শিরকের ব্যাপারে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা জরুরি।
Total Reply(0)
মোঃ নাজীব ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
ইসলাম শব্দটির অর্থ হচ্ছে আত্মসমপর্ণ করা। মেনে নেয়া। যখনেই কোনো কাজ মেনে নেয়া হয় সেখানেই শান্তি বিরাজ করে। মেনে নেয়ার দিক থেকে ইসলামের একটি অর্থ হচ্ছে শান্তি। সুতরাং তাওহীদের (একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে) সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্য আত্মসমপর্ণ করা, ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা এবং মুশরিক ও কাফিরদের সঙ্গে সম্পূন্নভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা। অতএব, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর জন্য আত্মসমর্পণ করবে সে মুসলিম।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
বিশ্বজাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তাআলাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করাকে কুফর বলা হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য আত্মসমর্পণ করবে না সে ব্যক্তিই অহংকারী কাফের।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৭ এএম says : 0
কুফরি শিরকের চেয়ে বেশি মারাত্মক। কারণ শিরকের দ্বারা আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করা হয়। আর কুফরির দ্বারা আল্লাহকে অস্বীকার করা হয়।
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৭ এএম says : 0
শিরক এবং কুফরি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কুফরি এবং শিরক থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র পথ হলো- বিনা শর্তে আল্লাহ তাআলাকে সমস্ত ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি বলে বিশ্বাস করার পাশাপাশি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবি ও রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর বিধি-বিধানকে কর্মে বাস্তবায়ন করা।
Total Reply(0)
জিয়াউল হক ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক এবং কুফরি বিশ্বাস থেকে হিফাজত করে সঠিক পথের উপর থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
সাইফ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:১৫ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ, অত্যান্ত জরুরী ও বিষয় নিয়ে লেখার জন্যে জনাব মুন্সী সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ, এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকেও। আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। এবং আমাদের সকলকে হিদায়েত নসিব করুন।
Total Reply(0)
Al imran ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৯ এএম says : 0
ইবাদতের বিপরীত কি?
Total Reply(0)
Firdousi Sardar ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ পিএম says : 0
Can I copy and print the information?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন