কে না শান্তি চায়? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র- সবাই শান্তি চায়। জাতিসংঘ তো শান্তির উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত, যার লক্ষ্য যুদ্ধ, বিবাদ-বিসংবাদ ও হানাহানি বন্ধ করে বিশ্বকে শান্তিময় আবাসস্থলে পরিণত করা।
অত্যন্ত পরিতাপজনক হলেও সত্য, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কোথাও শান্তি নেই। বিরোধ-বৈরিতা, হিংসা-বিদ্বেষ, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি ও যুদ্ধ বরং দিনকে দিন বাড়ছে। শান্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে। অনেকেই কথায় কথায় বলেন- দেশকে, বিশ্বকে শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য করে তুলতে চাই। কিন্তু এই চাওয়াটা সোনার হরিণই হয়ে আছে।
শান্তির সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক ওতপ্রোত। নিরাপত্তা না থাকলে শান্তি আসে না। আর শান্তি না থাকলে স্বস্তি ও সুখ আসে না। নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি ও সুখ মানুষের একান্ত প্রত্যাশা। একান্ত প্রত্যাশা হলেও মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি আসছে না কেন? না আসার জন্য মানুষই দায়ী। মানুষের কৃতকর্ম দায়ী। মানুষ যা কিছু করে, তার একাংশ শান্তি ও কল্যাণে নিবেদিত। অপরাংশ অশান্তি ও অকল্যাণ সৃষ্টি করে। শান্তি ও কল্যাণকামী কাজের সংখ্যা ও পরিধি কমে গেছে এবং অশান্তি ও অকল্যাণকামী কাজের সংখ্যা ও পরিধি বেড়েছে। যত প্রত্যাশাই করা হোক না কেন, শান্তি দূরাগত বাঁশির রাগিনী হয়েই থাকে।
আমাদের দেশের মানুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কোনো পর্যায় শান্তিতে নেই। অনাচার-দুরাচার, শোষণ-বঞ্চনা, অশান্তি, অভাব-দারিদ্র্য, মূল্যবোধের অবক্ষয়, খুন, ধর্ষণ, মাদক সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সঙ্ঘাত, অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাকার অসংখ্য নেতিবাচক দিক ছাড়াও সুশাসনের অভাব, বিচারহীনতা ও ক্ষমতার বলদর্পী আস্ফালনে শান্তি-স্বস্তি জীবন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কম বা বেশি একই অবস্থা বিরাজ করছে। শান্তির জন্য প্রয়াস-প্রচেষ্টা যা চলছে, তার ধারাও দিনকে দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
কেন এমন হচ্ছে, তার কারণ গভীরভাবে খুঁজে দেখা দরকার। আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা হিসেবে। তাকে তার খলিফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন। তার সকল সৃষ্টিকে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (মানুষের) জন্য সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৯)। আল্লাহ মানুষকে, সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও শান্তির পথে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটা জীবনবিধান (আল কোরআন) দিয়েছেন। একজন পথপ্রদর্শক (মুহাম্মদ সা.) প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এই যে, কোরআনের দেখানো পথে ও রাসূল সা.-এর নির্দেশমতো চললে দুনিয়াতে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তার বিকাশ ঘটবে এবং আখেরাতে মঙ্গল ও মুক্তি নিশ্চিত হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে তার ইবাদতের জন্যই তিনি সৃষ্টি করেছেন। মানুষের যাবতীয় কর্ম যদি মানুষ ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। মানুষ আল্লাহ-রাসূল ও কোরআনের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই সর্বত্র এত অশান্তি, দ্ব›দ্ব-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহ। মানুষ সম্পর্কে, বলা বাহুল্য, আল্লাহর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। তিনি বলেছেন, মানুষ যেভাবে ভালো চায়, সেভাবেই মন্দ চায়। মানুষ বড় তাড়াহুড়াপ্রবণ। সূরা বনি ইসরাইলের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মানুষের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।’
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। এই দেশে সঙ্গতকারণেই এত অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, অনাচার, অত্যাচার, দুষ্কৃতি, জুলুম, খুন-খারাবি ও আত্মঘাতী কর্মতৎপরতা চলার কথা নয়। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই আল্লাহ-রাসূল ও কোরআনের পথে চলতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন