বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শান্তি অধরা কেন

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কে না শান্তি চায়? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র- সবাই শান্তি চায়। জাতিসংঘ তো শান্তির উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত, যার লক্ষ্য যুদ্ধ, বিবাদ-বিসংবাদ ও হানাহানি বন্ধ করে বিশ্বকে শান্তিময় আবাসস্থলে পরিণত করা।
অত্যন্ত পরিতাপজনক হলেও সত্য, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কোথাও শান্তি নেই। বিরোধ-বৈরিতা, হিংসা-বিদ্বেষ, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি ও যুদ্ধ বরং দিনকে দিন বাড়ছে। শান্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে। অনেকেই কথায় কথায় বলেন- দেশকে, বিশ্বকে শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য করে তুলতে চাই। কিন্তু এই চাওয়াটা সোনার হরিণই হয়ে আছে।
শান্তির সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক ওতপ্রোত। নিরাপত্তা না থাকলে শান্তি আসে না। আর শান্তি না থাকলে স্বস্তি ও সুখ আসে না। নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি ও সুখ মানুষের একান্ত প্রত্যাশা। একান্ত প্রত্যাশা হলেও মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি আসছে না কেন? না আসার জন্য মানুষই দায়ী। মানুষের কৃতকর্ম দায়ী। মানুষ যা কিছু করে, তার একাংশ শান্তি ও কল্যাণে নিবেদিত। অপরাংশ অশান্তি ও অকল্যাণ সৃষ্টি করে। শান্তি ও কল্যাণকামী কাজের সংখ্যা ও পরিধি কমে গেছে এবং অশান্তি ও অকল্যাণকামী কাজের সংখ্যা ও পরিধি বেড়েছে। যত প্রত্যাশাই করা হোক না কেন, শান্তি দূরাগত বাঁশির রাগিনী হয়েই থাকে।
আমাদের দেশের মানুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কোনো পর্যায় শান্তিতে নেই। অনাচার-দুরাচার, শোষণ-বঞ্চনা, অশান্তি, অভাব-দারিদ্র্য, মূল্যবোধের অবক্ষয়, খুন, ধর্ষণ, মাদক সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সঙ্ঘাত, অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাকার অসংখ্য নেতিবাচক দিক ছাড়াও সুশাসনের অভাব, বিচারহীনতা ও ক্ষমতার বলদর্পী আস্ফালনে শান্তি-স্বস্তি জীবন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কম বা বেশি একই অবস্থা বিরাজ করছে। শান্তির জন্য প্রয়াস-প্রচেষ্টা যা চলছে, তার ধারাও দিনকে দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
কেন এমন হচ্ছে, তার কারণ গভীরভাবে খুঁজে দেখা দরকার। আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা হিসেবে। তাকে তার খলিফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন। তার সকল সৃষ্টিকে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (মানুষের) জন্য সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৯)। আল্লাহ মানুষকে, সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও শান্তির পথে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটা জীবনবিধান (আল কোরআন) দিয়েছেন। একজন পথপ্রদর্শক (মুহাম্মদ সা.) প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এই যে, কোরআনের দেখানো পথে ও রাসূল সা.-এর নির্দেশমতো চললে দুনিয়াতে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তার বিকাশ ঘটবে এবং আখেরাতে মঙ্গল ও মুক্তি নিশ্চিত হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে তার ইবাদতের জন্যই তিনি সৃষ্টি করেছেন। মানুষের যাবতীয় কর্ম যদি মানুষ ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। মানুষ আল্লাহ-রাসূল ও কোরআনের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই সর্বত্র এত অশান্তি, দ্ব›দ্ব-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহ। মানুষ সম্পর্কে, বলা বাহুল্য, আল্লাহর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। তিনি বলেছেন, মানুষ যেভাবে ভালো চায়, সেভাবেই মন্দ চায়। মানুষ বড় তাড়াহুড়াপ্রবণ। সূরা বনি ইসরাইলের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মানুষের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।’
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। এই দেশে সঙ্গতকারণেই এত অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, অনাচার, অত্যাচার, দুষ্কৃতি, জুলুম, খুন-খারাবি ও আত্মঘাতী কর্মতৎপরতা চলার কথা নয়। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই আল্লাহ-রাসূল ও কোরআনের পথে চলতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Faysal Mohammed ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৫২ এএম says : 0
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ কোনো না কোনো সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমি সুখী নই কেন, অথবা আমার কপালে সুখ লেখা নেই কেন?’। কিন্তু সত্যিকারের বিষয়টি কি জানেন? সুখ শুধুমাত্র আপনার মনের ব্যাপার। আপনার মনকে যদি আপনি বুঝ দিতে পারেন আপনি সুখী আছেন তাহলে আপনি একটি ভাঙা ঘরে আধপেটা খেয়েও সুখে থাকতে পারবেন। আপনারই বাজে চিন্তা, বাজে অভ্যাসের কারণে আপনার মনের শান্তি নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে আপনি একটি বড় বাড়ি কিংবা ভালো খেয়েপরেও সুখে নেই একেবারেই। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া ও আপনারই কিছু খারাপ অভ্যাস কেড়ে নিচ্ছে আপনার মনের শান্তি।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৫২ এএম says : 0
যখন অন্য একজনের সাথে নিজেকে তুলনা করা হয় তখন নিজের ভেতরের ভালোটা কখনোই দেখা যায় না, সব সময় নিজের অভাবটাই নজরে পড়তে থাকে। এতে করে মনের শান্তি নষ্ট হয়, যা আপনার সুখটাকেও কেড়ে নিয়ে যায়। তাই অন্যের সাঠে নিজের তুলনা নয়।
Total Reply(0)
শাখাওয়াত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৫৩ এএম says : 0
একটু চিন্তা করুন কেন আপনি অনেক টাকা আয় করার পরেও ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না ! সব সময় শুধু কাজ আর কাজ । একটু চিন্তা করুন কেন আপনার অনেক টাকা সম্পদ থাকার পরেও অন্তরে শান্তি নেই, মনে হয় কিসের যেন অভাব। মা‘কাল ইব্ন ইয়াসার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের রব বলেন: হে বনি আদম, তুমি আমার ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব, তোমার হাত রিজিক দ্বারা পূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম, তুমি আমার থেকে দূরে যেয়ো না, ফলে আমি তোমার অন্তর অভাবে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দু’ হাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব”। [হাকেম]হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি। (সহীহ হাদিসে কুদসী/২৭)
Total Reply(0)
মোঃ বেলায়েত হোসেন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৫৫ এএম says : 0
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আল্লাহ বলেছেন: আমার বান্দা যখন এক বিঘত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি তার সাথে সাক্ষাত করি একহাত এগিয়ে। যখন সে একহাত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি একবাহু এগিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে একবাহু এগিয়ে আমি তার নিকট আসি আরও দ্রুত পদক্ষেপে’।[মুসলিম] হাদিসটি সহিহ। (সহীহ হাদিসে কুদসী/২৫) তাই আসুন, অতীতের পাপ থেকে আল্লাহর নিকট তওবা করি: আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘ইবলিস তার রবকে বলেছে: আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি বনি আদমকে ভ্রষ্ট করতেই থাকব যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেন: আমারইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইস্তেগফার করে”। [আহমদ]হাদিসটি সহিহ। (সহীহ হাদিসে কুদসী/৩২)
Total Reply(0)
Shahead Ahmed ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৩৯ এএম says : 0
ইসলামের অপরিহার্য বিধানকে উপেক্ষা করায় মুসলিম মিল্লাত আজ শতধাবিভক্ত। মুসলিম উম্মাহ আজ পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নিন্দাবাদের ঘৃণ্য কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বে অশান্তি দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোরদার করা।
Total Reply(0)
ফাহিম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৪১ এএম says : 0
ইসলাম যেমনিভাবে আমাদের নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ঠিক সেভাবেই জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখাতে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা দিয়েছে, যার ওপর আমল করলে সমাজকে বেহেশেতে পরিণত করা সম্ভব।
Total Reply(0)
মিলন খন্দকার ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৪২ এএম says : 0
সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন