স্বপ্নজগতের রহস্য ভেদ করা সহজ নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ যাদের বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন, তারাই কেবল স্বপ্নের আসল রহস্য বলতে পারেন। যুগে যুগে রাজা-বাদশা, মনীষী এবং মহামানবসহ সাধারণ স্বপ্ন দেখা মানুষের উপস্থিতি সর্বদাই বিদ্যমান ছিল, আছে এবং থাকবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যাও হতে থাকবে। কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যার বিস্ময়কর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
এমন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন প্রথম তুর্কি সুলতান উসমান খান। তার স্বপ্নের বাস্তবতার সাথে বিশেষজ্ঞরা খুঁজে বের করেছেন তার ইসলাম গ্রহণের অপূর্ব যোগ সূত্র। আমরা এখানে তার স্বপ্ন বিবরণটি তুলে ধরছি। হিজরী ৬৮৭/১২৮৮ সালে তুর্কি বীর বাহাদুর অর তোঘরলের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র উসমান তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং উসমানই ছিলেন উসমানীয় সা¤্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং নিজের গোত্রে সর্বপ্রথম তিনিই ইসলাম গ্রহণ করেন। এ উসমানই এমন একটি সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, যার ফলে পরবর্তী ১৫০ বছর ধরে বিশ্বের জবরদস্ত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে এবং ৩০০ বছরে তা সর্ববৃহৎ এক আজিমুশশান সাম্রাজ্যে পরিণত হয়ে যায়, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকা।
উসমান খানের স্বপ্নের কথায় আশা যাক, যার সাথে তার সাম্রাজ্যের ও তার ইসলাম গ্রহণের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়ে থাকে। আর কী ছিল তার স্বপ্ন, যার ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন এক সাধকের নিকট। আসকি শহর নামক একটি স্থানের নিকট একটি ছোট্ট অবতরণী নামক গ্রামে ওবালি নামক এক সুফি সাধক বাস করতেন।
মাল খাতুন নামক তার এক কন্যা ছিল। উসমান তার যৌবনকালে প্রায়ই সেই সাধকের নিকট যাতায়াত করতেন। তিনি মাল খাতুনের অপূর্ব রূপগুণে ভীষণভাবে মুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং সাধক ওবালির নিকট মাল খাতুনের সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন এবং তাকে এক অদ্ভুত স্বপ্নের বর্ণনাও প্রদান করেন।
স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এক রজনীতে দেখি, একটি চাঁদ হেলাল আকার ধারণ করে তার বক্ষ হতে বের হয় এবং ধীরে ধীরে ‘বদর’ আঁকড়ে আমার বক্ষে অবতরণ করে। অতঃপর আমার বাহু হতে এক বিশাল বৃক্ষ বের হয় এবং তা বিস্তার লাভ করতে থাকে এমনকি তার শাখাগুলো জলে-স্থলে ছড়িয়ে পড়ে। বৃক্ষটির শাখাগুলো চারটি পর্বত বহন করে নিয়ে যায়। কিছু বলকান পর্বতে, কিছু তুর পর্বতে এবং আটলান্টিক পর্বতে।
তাছাড়া বৃক্ষটির মূল হতে চারটি বিষয় বের হয় দাজলা, ফোরাত, নীল ও দানিউব। তাছাড়া তীব্র বাতাস প্রবাহিত হয় এবং ওই বৃক্ষের তরবারির মতো পাতাগুলোর দিক এক বিশাল শহরের দিকে ফিরে যায়, যা সাগরগুলো ও দু’টি মহাদেশের মিলনক্ষেত্রে অবস্থিত এবং যা একটি আংটিসদৃশ দেখা যাচ্ছিল। আমি আংটিখানা পরিধান করতে চাইছি। হঠাৎ আমার নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে যায়।
সাধক ওবালি এ স্বপ্নে উসমানের শানদার ভবিষ্যৎ লক্ষ করে তার কন্যাকে বিয়ে দেন এবং সাধক ওবালির উপদেশ ও তাবলীগে উসমান ও তার গোত্রের সব লোক ইসলাম গ্রহণ করে এবং পরবর্তীকালে স্বপ্নের ব্যাখ্যা অত্যন্ত চমৎকারভাবে বাস্তবরূপ লাভ করেছিল।
সাতশ’ বছর ধরে উসমানীয় খেলাফতের স্থায়িত্বকাল ইসলামী ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় এবং ১৯২৩ সালে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খেলাফত উচ্ছেদের ঘটনা বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য ধ্বংসের এক করুণ অধ্যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন