আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াবলিকে ৫টি স্তর, ধাপ বা সিঁড়িতে বিন্যস্ত করে আলোচনা করেছেন। যথা- (১) ওই সকল বিষয়, যেগুলো সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আদিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। ওই সকল বিষয়ের তাকদীরকে তাকদীরে আজালী বা আদি তাকদীর বলে।
(২) ওই সকল বিষয় যেগুলো সম্পর্কে আল্লাহপাক আরশে আজীম সৃষ্টির পরে আসমান জমীন সৃষ্টির পূর্বে সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে রেখেছেন। (৩) হযরত আদম আ.-এর পৃষ্ঠদেশ হতে আদম সন্তানদের বের করার সময় ‘আলাসতু বি রাব্বিকুম’-এর অঙ্গীকারের দিন সে সকল বিষয়ের সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত হয়ে আছে। (৪) সন্তান মাতৃউদরে অবস্থানকালে তার সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। (৫) ওই সমস্ত বিষয়ের তাকদীর যার বাস্তবায়ন অন্য কিছুর ওপর স্থাপিত থাকে। তাকদীরের উক্ত ৫টি স্তরের মধ্যে প্রথম চার স্তর তাকদীরে মুবরামের অন্তর্ভুক্ত, যা চ‚ড়ান্ত ও অপরিবর্তনযোগ্য। আর পঞ্চম বা শেষ স্তরটি তাকদীরে মুয়াল্লাক। এতে কার্য-কারণ সম্পর্কের দরুন পরিবর্তন হতে পারে।
ইমাম আবু হানীফাহ রহ.-এর ফিকহে আকবার গ্রন্থের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাকদীর ৫ প্রকার। যথা- (১) আল্লাহপাক সকল কিছুর পরিমাণ নির্ধারণ করেন। (২) লাওহে মাহফুজে তা অঙ্কিত করেন। (৩) সৃষ্টিজগতে তা প্রকাশ করেন। (৪) আখেরাতের জগতের জন্য পরিপূর্ণ প্রতিফল প্রদান নির্ধারণ করেন ও বিনিময় দান করেন। (শরহু ফিকহে আকবর, পৃ ৫৩; আল আকীদাতুল ওয়াদিতিয়্যাহ ময়াস শরহে, পৃ. ২৭৮-২৭৯)। হুজ্জাতুল ইসলাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. উল্লিখিত তাকদীরের ৫টি প্রকারকে এভাবে বিন্যাস করেছেন।
যথা- (১) আল্লাহপাক আজালী ইলমে এটা স্থিরিকৃত যে, বিশ্বজগতকে বান্দাহর কল্যাণকর ও উপযোগী বিবেচনা করে সুন্দরতমরূপে সৃষ্টি করা হবে। (২) আল্লাহপাক তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। অন্য কথায় তিনি সকল সৃষ্টির তাকদীর লিখে রেখেছেন আসমান ও জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে। এই উভয় রাজ্যের মূল অর্থ এক ও অভিন্ন। (৩) আল্লাহপাক যখন হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তখন নির্ধারণ করেছেন যে, তিনি সর্বপ্রথম মানুষ তথা আদি মানব হবেন। তার থেকে মানব জাতির সূচনা হবে। তিনি মিছালী জগতে আদম সন্তানের আকৃতিসমূহ উদ্ভাবন করেছেন। তাদের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্যকে আলো ও আঁধারের সাথে উপমা দিয়েছেন। তাদেরকে মুবাল্লাক বা শরয়ী বিধানের প্রয়োগস্থল নির্ধারণ করেছেন। তাদের মাঝে আল্লাহর মারিফাত ও তার সামনে বিনত হওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করেছেন। (৪) ওই সময়ের তাকদীর যখন মাতৃউদরে সন্তানের দেহে আত্মা ঝুঁকে দিয়েছেন এবং (৫) কোনো ঘটনা বাস্তবায়িত হবার পূর্বক্ষণে নির্ধারিত তাকদীর। যখন ঊর্ধ্বজগত হতে নির্দেশ পৃথিবীতে আসে। তা একটি মিছালী বস্তুতে পরিবর্তিত হয়। অতঃপর তার বিধান পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ: খন্ড ১, পৃ. ১৫৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন