রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জান্নাত ও জাহান্নাম-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত আলোচনায় আমরা জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা শুরু করেছিলাম। সেই আলোচনায় জাহান্নামের ভয়াবহতা ও কঠিনতর শাস্তির কথা বলা হচ্ছিল। জাহান্নাম সম্পর্কে আজ আরো কিছু কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করা হলো। সূরা মুহাম্মদে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদেরকে পান করার জন্য সরবরাহ করা হবে ফুটন্ত পানি। সুতরাং তা টুকরো টুকরো করে দেবে তাদের আঁতসমূহকে।’ (সূরা মুহাম্মদ: আয়াত ১৫)।
যারা আল্লাহর কিতাবসমূহকে অস্বীকার করে এবং তার বিধানসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তাদের সম্পর্কে সূরা মু’মিনে বলা হয়েছে, ‘যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার কিতাবকে এবং আমার সেসব বিধিবিধানকে, যেগুলোর সাথে আমি আমার রাসূলদের পাঠিয়েছি, শীঘ্রই তারা (এর পরিণতি) জানতে পারবে, যখন গলবেড়ি থাকবে তাদের গলায় এবং শেকল (থাকবে সেসব গলবেড়ির সাথে জড়ানো)।
তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে এবং অতঃপর তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সূরা মু’মিন: আয়াত ৭০-৭২)। তেমনিভাবে সূরা হজ্জে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সুতরাং যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য আগুনের কাপড় কাটা হবে (অর্থাৎ, আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে) এবং তাদের মাথার ওপর থেকে অতি উত্তপ্ত পানি ছাড়া হবে। তাতে তাদের চামড়াগুলো এবং পেট ও পেটের অভ্যন্তরের (নাড়িভুঁড়িসহ) সব কিছু গলে যাবে। এবং তাদেরকে মারধর করার জন্য লোহার গদা থাকবে। সেখানকার কষ্ট ও কঠোরতার দরুন যখন তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা করবে, তখন আবারো তাতেই উৎক্ষেপণ করা হবে। বলা হবে, এখানেই দহনের শাস্তি ভোগ করতে থাকো।’ (সূরা হজ্জ: আয়াত ১৯-২২)।
সূরা দোখানে ‘যাককুম’কে দোজখের খাবার বলে অভিহিত করতে গিয়ে এর রূপ ও অবস্থা এভাবে বিবৃত করা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে যাককুম হবে বড় পাপীদের (কাফের-মুশরিকদের) খাবার, যা তার বীভৎসতা ও বিষাদে তেলের তলানির মতো হবে। (আর) তা পেটে ঢুকে এমনভাবে ফুটবে, যেমন অতি গরম পানি ফুটতে থাকে। (ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে,) একে ধরো এবং টেনেহিঁচড়ে দোজখের মাঝ পর্যন্ত নিয়ে যাও। তারপর তার মাথায় অত্যন্ত কষ্টদায়ক জ্বলন্ত পানি ঢেলে দাও।’ (সূরা দোখান: আয়াত ৪৩-৪৮)।
সূরা ইবরাহীমে উদ্ধৃত অপরাধী দোজখবাসীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘পান করার জন্য এমন পানি দেয়া হবে যা আসলে হবে (জাহান্নামীদের) রক্ত-পুঁজ, যা তারা ঢোক ঢোক করে পান করবে অথচ গলার ভেতর দিয়ে সেগুলোকে সহজে নামাতে পারবে না। সব দিক থেকে তার ওপর মৃত্যু ধেয়ে আসবে অথচ সে হতভাগ্য মরতেও পারবে না; বরং (জীবিত অবস্থায়ই) তাকে আরো (চিরস্থায়ী ও) কঠোরতর আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। (সূরা ইবরাহীম: আয়াত ১৬-১৭)।
সূরা ফাতিরে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আর যেসব লোক কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। না তাদের জীবনাবসান হবে যে, তারা মরতে পারবে, নাই বা দোজখের আজাব তাদের জন্য লঘু করা হবে। আমি প্রত্যেক কাফেরকে এমনি শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা তাতে পড়ে চিৎকার করতে থাকবে, হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের এ (দোজখ) থেকে অব্যাহতি দান করো, আমরা সৎকর্ম সম্পাদন করব তার বদলে, যা (নিজেদের কপাল দোষে) পূর্বে করেছিলাম। (তাদের এহেন আর্তচিৎকারের উত্তরে বলা হবে) আমি কি তোমাদের এতটুকু বয়স বা আয়ু দান করিনি, যাতে করে যাদের উপলব্ধি করার তারা উপলব্ধি করতে পারতে? তদুপরি তোমাদের কাছে ভীতিপ্রদর্শনকারীও পৌঁছেছিল। সুতরাং এখন মজা ভোগ করো। এমন জালেমদের কোনো সহায় নেই।’ (সূরা ফাতির: আয়াত ৩৬-৩৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Dewan Dewan ২ মার্চ, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
চির দুঃখ-কষ্ট-পেরেশানী, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, বিড়ম্বনা, দুর্ভাগ্য, লজ্জা-শরম, ক্ষুধা-পিপাসা, আগুন, অশান্তি, হতাশ-নিরাশা, চীৎকার-কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আযাব-গযব ও অসন্তোষের স্থান হলো জাহান্নাম। শান্তির লেশমাত্রই সেখানে নেই। হাত-পা ও ঘাড়-গলা শিকলে বেঁধে বেড়ি পরিয়ে দলে দলে জাহান্নামের অতল গহবরে নিক্ষেপ করা হবে। যেখানে শুধু অতিবেশি তেজ ও দাহ্য শক্তিসম্পন্ন আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। দোযখের অগ্নিশিখা তাদেরকে উপর, নীচ এবং ডান ও বাম থেকে স্পর্শ করবে, জ্বালাতে-পোড়াতে থাকবে।
Total Reply(0)
Nahid hasan ২ মার্চ, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
একবার চামড়া পুড়ে গেলে আবারো নুতন চামড়া গজাবে যেন বার বার আগুনের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। পিপাসায় প্রাণ পেটের নাড়ি-ভূঁমি গলে যাবে। এ হচ্ছে, আজাবের উপর আযাব। তাতে পিপাসা না কমে আরো তীব্র হবে। অতি দুর্গন্ধময় যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত ঘাস ও গিসলিন হবে তাদের খাদ্য। ক্ষুধার তাড়নায় জঠর জ্বালায় তা ভক্ষণ করতে গেলে পেটের ভেতরে আরো যন্ত্রণা বাড়াবে।
Total Reply(0)
M F Hossain ২ মার্চ, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বলেন: وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ #الواقعة: ٢٧، ٣٢ “আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।”(সূরা আল-ওয়াকি‘আহ্‌: ২৭ – ৩২)
Total Reply(0)
M F Hossain ২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
আল্লাহতে বিশ্বাসী মাত্রই আমরা জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও জাহান্নাম হতে ভীত। এজন্যে আমরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকি, এবং আল্লাহর হুকুম মেনে নেক আমলে ব্রতী হই। কখনো কৌতূহল হয় প্রতিশ্রুত জান্নাত ও জাহান্নাম কি পরবর্তীতে সৃষ্টি করা হবে, নাকি এখনও তা বিদ্যমান? বিদ্যমান হলে তা কোথায় আছে?
Total Reply(0)
সা মো মছিহ্ রানা ২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
এক মুমিনের আত্মা জান্নাতে পাখির মত, জান্নাতের গাছের সাথে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে। তারপর যখন কিয়ামতের দিন সমগ্র মানুষকে পুনরায় জীবন দান করা হবে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের রুহকে তাদের দেহে আবার ফেরত দেবেন”-মুসনাদে আহমাদ পৃ: ৪৫৫/৩; নাসায়ী- হা: ২০৭৩; ইবনে মাযাহ: ৪২৭১; সহিহ নাসায়ী পৃ: ৪৪৫/২; সিলসিলাতুল আহাদীস-সহীহাহ: ৭২০/২, ৯৯৫
Total Reply(0)
Jahid ২ মার্চ, ২০১৯, ১১:০১ এএম says : 0
thanks a lot for this article
Total Reply(0)
তানবীর ২ মার্চ, ২০১৯, ১১:০৩ এএম says : 0
আল্লাহ লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম পুরস্কার দান করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন