বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাকদির নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা উচিত নয়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিশ্ববাসী বান্দাদের তাকদির নিয়ে বেশি তর্ক-বিতর্ক করা মোটেই উচিত নয়। এ নিয়ে অধিক ঘাঁটাঘাঁটি ও অনুসন্ধানও কল্যাণকর নয়। হাদিস শরীফে এরূপ করা হতে বারবার বারণ করা হয়েছে। কেননা এ বিষয়ের অধিকাংশ কথা, আলোচনা ও পর্যালোচনা মনুষ্য জ্ঞান-গরিমা এবং বিদ্যাবুদ্ধির ঊর্ধ্বে।
হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন- ক. হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের মাঝে তাশরিফ আনয়ন করলেন, এ অবস্থায় যে আমরা তখন তাকদিরের ব্যাপারে পরস্পরে বাদানুবাদে লিপ্ত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সা. এতে রাগান্বিত হলেন, এমনকি তার জ্যোতির্ময় মুখমন্ডল ক্ষোভে রক্তিমাভ হয়ে উঠল। যেন তার দুই গন্ডদেশে আনারসের রস ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি রাগত কণ্ঠে বললেন, তোমরা কি এ ধরনের ঝগড়া করতে আদিষ্ট হয়েছ। না আমি এ জন্য তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ এ ব্যাপারে (তাকদির সংক্রান্ত) বাদানুবাদ শুরু করায় চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি তোমাদের কষ্টে ফেলছি যে, এ ব্যাপারে (তাকদির নিয়ে) কথা কাটাকাটি করো না। (জামে তিরমিজী: খন্ড ২, পৃ. ৪৮০)। খ. হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তাকদিরের ব্যাপারে বেশি কথাবার্তা বলবে তাকে কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর যে এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করবে না, সে জিজ্ঞাসিত হবে না। (সুনানু ইবনে মাজাহ: পৃ. ০৯)।
তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পর কারো এ চিন্তা করে ঈমান-আমল তরক করা সমুচিত নয় যে, আমার ব্যাপারে যা কিছু লেখা হয়েছে, তা তো হবেই। এর কোনো অন্যথা হবে না। এরপর আমার ঈমান-আমলের দ্বারা কী লাভ হবে? এ ধরনের চিন্তা অমূলক, ভিত্তিহীন ও অসার। এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তিনটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
যথা: ১. কেউ জানে না যে, তার ব্যাপারে কী লেখা হয়েছে। যখন জানা নেই, তখন তো সৎকর্ম ও নেক আমলই করা উচিত। যাতে পরিণতি উত্তম ও কল্যাণকর হয়। ২. এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, তাকদির যেখানে লেখা হয়েছে, সেখানে তার কারণ ও উপকরণও লেখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তাকদিরে যদি লেখা থাকে, অমুক ব্যক্তি জান্নাতি হবে, তাহলে অবশ্যই এ কথাও লেখা হয়েছে, ঈমান এবং সৎ আমলের জন্যই যে জান্নাতি হবে। ৩. বাস্তব জগতের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়, ‘তাকদিরে যা লেখা আছে তা-ই পাবে।’ এ চিন্তায় বিভোর হয়ে কেউ দুনিয়ার জীবনে ধন-সম্পদ, মান-ইজ্জত, রুটি-রুজি লাভের উপকরণ আহরণের চেষ্টা ও সাধনা পরিত্যাগ করবে না। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আখেরাতের পুরস্কার লাভের ব্যাপারেও চেষ্টা, সাধনা এবং উপকরণ লাভের জন্য মেহনত পরিত্যাগ করা মোটেই উচিত নয়। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ক. হযরত আলী রা. বলেন, একদা আমরা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা মাটিতে দাগ কাটছিলেন। আকস্মাৎ আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের জান্নাত বা জাহান্নামের ঠিকানা নির্ধারিত বা লিখিত হয়ে আছে।
তখন সাহাবিরা আরজ করলেন, তবে কি আমরা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকব? হে আল্লাহর রাসূল। তিনি উত্তর দিলেন, না। বরং তোমরা আমল করতে থাকো। যার জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তাই সহজ করা হয়েছে। (জামে তিরমিজি: খন্ড ২, পৃ. ৪৮০-৪৮১)। খ. আল্লাহপাকের কাযা ও কদরকে দলিল ও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহপাকের আদেশ, নিষেধ ও সৎকর্ম পরিত্যাগ করা আমাদের জন্য মোটেই বৈধ নয়। বরং আমাদের জন্য এ কথা অবগত হওয়া ও বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে, আল্লাহপাক কিতাব নাজিল করে এবং নবী-রাসূল প্রেরণ করে আমাদের ওপর তার হুজ্জত ও দলিল পরিপূর্ণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাতে করে রাসূল প্রেরণের পর আল্লাহর ওপর অপবাদ আরোপের কোনো সুযোগ মানুষের না থাকে।’ (সূরা নিসা: আয়াত ১৬৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ নাজীব ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সাধারণত তাকদির বলতে আমরা বুঝি নিয়তি, অদৃষ্ট, বিধিলিপি, ভাগ্যের লিখন, কপাল, বরাত, কিসমত ইত্যাদি। কথায় আছে, ভাগ্যের লিখন কে খন্ডাতে পারে?
Total Reply(0)
রবিউল ইসলাম রুবেল ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তার কোনো শরিক নেই। তিনি তাবৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’ -সূরা ফুরকান : ২
Total Reply(0)
সত্য হক ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
তাকদির বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। তাকদিরের ওপর ঈমান রাখা আবশ্যক। এ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া নিরাপদও নয়। বরং এ বিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে কুফরি ও নাস্তিকতা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
হাদিসে এরূপ বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) -এর অসন্তুষ্টির কথা বিবৃত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) বের হয়ে আমাদের কাছে এলেন। আমরা তখন তাকদির সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। তা দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদের ওপর এত রাগ করলেন যে, রাগে তাঁর চেহারা মুবাক লাল হয়ে গেল, যেন তার গন্ডদেশে আঙ্গারের দানা নিংড়ায়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমাদের কি এ বিষয়ে হুকুম করা হয়েছে না কি আমি এ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি তোমদেরকে কসম দিয়ে বলছি, আবার কসম দিয়ে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে কখনো বিতর্কে লিপ্ত হবে না।’ [মিশকাত শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২২]
Total Reply(0)
নাফিজ খান রেজা ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মেই খাদ্যশস্যাদি, ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিস উৎপন্ন হয়। এটাও তাকদিরের অন্তর্গত। এ ছাড়াও পৃথিবীতে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং রাত আসে দিন যায়, দিন আসে রাত যায়- এ সবই আল্লাহর নির্দিষ্ট নিয়মে হয়।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর বিধি ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই মনুষ্য মনে, নৈরাশ্যের বেদনাকে মুছে ফেলে আশার আলো জ্বালাতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন