চেঙ্গিস বংশে ইসলাম প্রচার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বড় ছেলে জওজি খানের আওলাদের মধ্যে বার্কা খানের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় ছেলের নাম চাগতাই (অথবা চুগতাই) খান। এ বংশে ইসলাম প্রচারের বিবরণ নিম্নরূপ :
চাগতাই খান ইবনে চেঙ্গিস খানের ভাগে পড়েছিল মধ্য এলাকার রাজ্যগুলো এবং চাগতাই ছিলেন সেগুলোর শাসনকর্তা- তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায় না। তবে তার পৌত্রের (চেঙ্গিস খানের প্র-প্রৌত্র) সময় থেকে এ বংশে ইসলাম প্রচার হওয়ার তথ্য জ্ঞাত হওয়া যায়।
চাগতাই খানের ছেলে মুতুকুন, তার ছেলে ইয়াসুদনা এবং তার ছেলে বোরাক খান। বোরাক খানের শাসনকাল ১২৬৫-১২৭০ সাল পর্যন্ত। সিংহাসন লাভের দুই বছর পর ১২৬৮ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং বোরাক খান নাম পরিবর্তন করে গিয়াসউদ্দীন নাম ধারণ করেন। তিনি যত দিন বেঁচে ছিলেন, অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন এবং বহু মোগলকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।
তার ওফাতের পর এ ধারা অব্যাহত থাকেনি। কেননা, তার উত্তরাধিকারীরা মুসলমান ছিল না। পরিণতিতে সুলতান গিয়াসউদ্দীন (বোরাক খান), যেসব মোগলকে মুসলমান করেছিলেন তার ইন্তেকালের পর তারা আবার নিজেদের প্রাচীন ধর্ম অবলম্বন করে এবং চতুর্দশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এ অবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি।
তবে ‘তরম শিরিন খান’ যিনি ১৩২২-১৩৩০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন এ বংশের সপ্তদশ বাদশাহ। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, চাগতাই মোগলদের সবাই সাধারণভাবে ইসলাম গ্রহণ করে এবং এবার তারা ইসলামের ওপর দৃঢ়ভাবে কায়েম থাকে। কিন্তু তরম শিরিনের প্রতিনিধিগণ মুসলমানদের ওপর আবার জুলুম-অত্যাচার শুরু করে।
মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ধারা তখন পর্যন্ত শেষ হয়নি এবং সে এলাকায় ইসলামের উন্নয়নও সম্ভব হয়নি, যতক্ষণ পর্যন্ত না কাশগরের মোগল বাদশাহ যার রাজ্য চাগতাই রাষ্ট্রের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, ইসলামের সমর্থন ও সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। কাশগরের এ বাদশাহর নাম ছিল তোগলক তৈমুর। তিনি ১৩৪৭ হতে ১৩৬৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
এ বাদশাহর মুসলমান হওয়ার কারণ একটি ঘটনা; একবার শেখ জামালউদ্দীন নামক এক বুজুর্গ সাধক তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে সফর করতে করতে এমন একটি ময়দান অতিক্রম করতে থাকেন, যা তৈমুরের শিকারের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বাদশাহর কর্মচারীরা তাকে এবং তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করে এবং জিনিসপত্রসহ বাদশাহর দরবারে নিয়ে যায়। তোগলক তৈমুর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কী করে এই দুঃসাহস হলো যে, বিনা অনুমতিতে তোমরা শাহী শিকার গাহে প্রবেশ করলে?
শেখ জামালউদ্দীন জবাবে বললেন, আমরা এই দেশে অপরিচিত। আমরা মোটেই জানতাম না যে, এটি সরকারি ভূমি এবং এর ওপর দিয়ে চলাচল করা নিষিদ্ধ। যদি আমরা জানতাম তাহলে কিছুতেই সেখান দিয়ে আসতাম না। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথা থেকে এসেছ? শেখ বললেন, আমাদের দেশ ইরান, আমরা সেখান থেকে এসেছি।
বাদশাহ এতে বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমরা খুবই বোকা ও নিকৃষ্ট। এতই নিকৃষ্ট যে, একটি কুকুরও তোমাদের চেয়ে উত্তম। এ কথা শুনে শেখ তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, যদি দ্বীনে হক (সত্য ধর্ম) আমাদের নিকট না হতো, তাহলে বাস্তবিকই আমরা কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট ছিলাম। বাদশাহ এ অপ্রত্যাশিত জবাব শুনে বিস্মিত হন।
কিন্তু তিনি এ বিস্ময়কর জবাবের বিশদ বিবরণ দরবারিদের সামনে শেখের নিকট জানতে চাওয়া সমীচীন মনে করলেন না এবং বাহ্যত উপস্থিত সবার না বোঝার ভান করে নির্দেশ দিলেন, এদেরকে আটক রাখা হোক এবং আমরা যখন শিকার হতে প্রত্যাবর্তন করব তখন তাদের পুনরায় আমার দরবারে পেশ করতে হবে, যাতে তাদেরকে তাদের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন