বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আলমে আখিরাতের দ্বিতীয় মঞ্জিল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কিয়ামত কায়েম হওয়ার চল্লিশ বছর পর দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার ধ্বনিত হবে। প্রথম ফুৎকারের পর সকল সৃষ্টিজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। ফেরেশতাকুল মৃত্যুবরণ করবে। এমনকি ইস্রাফিল ও ইন্তেকাল করবেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাকে জীবিত করবেন এবং আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ দেবেন। ফলে সকল সৃষ্টিজীব পুনরায় জীবন লাভ করবে। ভূমন্ডলের এ ভূমি অন্য এক ভূমিতে রূপান্তরিত হবে। মৃত ব্যক্তিরা কবর হতে নির্গত হয়ে হাশরের ময়দানে সমবেত হতে থাকবে। কেউ দৌড়ে, কেউ ধীরগতিতে কেউবা পা হ্যাচড়াতে হ্যাচড়াতে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। সকলে নগ্ন অবস্থায় আল্লাহপাকের সমীপে হাজির হবে। সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকলেই সমবেত হবে। সে দিনের হাজিরা হতে কেউ বাদ পড়বে না। তার পরেও সকলেই হবে একা, অর্থাৎ প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। হাশর ময়দানের একদিন পৃথিবীর হিসাবে ৫০ হাজার বছরের সমপরিমাণ হবে। সূর্য অতি নিকটবর্তী হবে, যার উত্তাপে ও উষ্ণতায় মানুষের মাথার মগজ গলে যাবে। প্রত্যেক গোনাহগার নিজের গোনাহের পরিমাণে ঘামের সাগরে ডুবে থাকবে। সেদিন সকলেই ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দন্ডায়মান হবে। এই দিনের বিভীষিকাময় চিত্র আল কোরআন ও হাদিসে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে :
ক. সেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার ধ্বনিত হবে। আসমান ও জমিনের সকল প্রাণী বেহুশ হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সে নয়। অতঃপর দ্বিতীয়বার ধ্বনিত হলে সকলেই এদিক-সেদিক তাকাতে তাকাতে দাঁড়িয়ে যাবে। (সূর আয-যুমার: আয়াত ৬৮)। খ. দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হলে সকল মানব কবরদেশ হতে উঠে তাদের প্রতিপালকের পানে দ্রুত গমন করবে। (সূরা ইয়াসীন: আয়াত ৫১)। গ. এটা সংঘটিত হবে সেদিন, যেদিনের পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছর। (সূরা আল মাআ’রিজ: আয়াত ০৪)। ঘ. যখন কবরসমূহ উন্মোচিত করা হবে, তখন প্রত্যেকে জানবে সে অগ্রে কি প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে কি রেখে এসেছে। (সূরা ইনফিতার: আয়াত ০৪-০৫)। ঙ. এটাই ফায়সালার দিন। আমি তাদেরকে ও পূর্ববর্তী সকলকে সমবেত করলাম। (সূরা মুরসালাত: আয়াত ৩৮) চ. তাদেরকে তোমার প্রভুর সমীপে সারিবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা হবে। (সূরা আল কাহফ: আয়াত ৪৮)। ঞ. হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, হাশরের দিন সকল মানুষকে উলঙ্গ, নগ্নপদ অবস্থায় সমবেত করা হবে। (সহীহ মুসলিম: খন্ড ২, পৃ. ৩৮৪)। ট. হযরত বাহাজ তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে রেওয়ায়েত করেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, সকল লোক কিয়ামতের দিন সমবেত হবে। হাশরের ময়দানে কেউ আসবে বাহনে চড়ে, কেউ আসবে পদব্রজে, কেউ আসবে মুখ-বক্ষে ভর করে।
সেদিন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। সকলেই নিজের চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু অত্যন্ত রাগ-ক্ষোভের অবস্থায় থাকবেন। হিসাব-কিতাব শুরু হতে দীর্ঘ বিলম্ব হবে। হাশরের ময়দানের তীব্র পরম ক্ষুধা, পিপাসা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু পালানোর কোনো স্থান পাবে না। তবে কিছু কিছু লোকের মুখমন্ডলে সজীবতা ও উজ্জ্বলতা বিরাজ করবে। তাদের ওপর আল্লাহর রহম বর্ষিত হবে। কিছু লোকের চেহারা ঝিমিয়ে পড়া ও কৃষ্ণকায় দেখা যাবে। তাদের ওপর পতিত হবে আল্লাহপাকের গজব ও অসন্তুষ্টি। সেদিন সকলের ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব বিদায় নেবে। অবশ্য নেককার লোকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট থাকবে। সে দিনের ভয়াবহতা শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে। (সূরা আবাসা: আয়াত ৩৪-৪১; সূরা আল ইমরান: আয়াত ১০৬; সূরা সাবা: আয়াত ৫১; সূরা হাজ্জ: আয়াত ০১-০২; সূরা আন নাযিয়াত: আয়াত ৮-৯; সূরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৩; সূরা আর রাহমান: আয়াত ৩৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Yasin ৬ মার্চ, ২০১৯, ২:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে সহজে হিসাব প্রদান করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান পালনের তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হিসাব প্রদানের কঠিন দিনে আল্লাহর রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
আবুল কালাম আযাদ ৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:০০ এএম says : 0
পৃথিবী মানবজাতির ‘পরীক্ষার হল’। পরীক্ষার খাতায় যেমন যা ইচ্ছা লেখা যায় ঠিক তেমনি পৃথিবীতেও মানুষ যা ইচ্ছা করতে পারে। আল্লাহ এ ক্ষমতা সবাইকে দিয়েছেন। কেউ ইচ্ছে করলে সৃষ্টিকর্তার হুকুম পালন করবে, ইচ্ছে করলে করবে না। তবে সব পরীক্ষারই একটা ফলাফল থাকে। দুনিয়া নামক পরীক্ষারও ফলাফল থাকবে। গোলাম মালিকের কাজ করলে মালিক তাকে পুরস্কার দেন, কাজ না করলে দেন শাস্তি। আল্লাহও তার বান্দাদের পুরস্কার এবং শাস্তি দিবেন। দুনিয়াতে তার হুকুম-আহকাম পালন করলে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত দিবেন। না করলে শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম দিবেন। আর সেই পুরস্কার এবং শাস্তি নির্ধারণের জন্য একটি আদালত কায়েম করা হবে। সেদিন মানুষের আমলের সুষ্ঠু বিচার করা হবে। প্রত্যেককে নিজেদের কৃত কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে। সেই বিচারিক আদালতকে বলা হয় ‘হাশরের ময়দান’। যার একমাত্র এবং চূড়ান্ত বিচারপতি ও অধিপতি হবেন মহান আল্লাহ।
Total Reply(0)
Nasir Uddin ৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:০১ এএম says : 0
হাশরের মাঠের চিত্র হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সেদিন পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে জমায়েত করা হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমান সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সুরা ইবরাহিম : ৪৮)। রাসুল সা. বলেন- ‘কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মতো চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোনো নিশানা থাকবে না। (বুখারি : কিতাবুত রিকাক)
Total Reply(0)
Howladar Nayem Islam ৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:০১ এএম says : 0
হাশরের ময়দানে মানুষ তার আপনজনদের ভুলে যাবে। সবাই নিজের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে।
Total Reply(0)
সাইফ ৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ্‌ এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন