সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘ইঁদুর ধরতে না পারলে বিড়ালের দরকার নেই’

জাহালমের কারাভোগের দায় দুদককে নিতে হবে

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের নিরপেক্ষ কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোট। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দায়দায়িত্ব স্মরণ করে দিয়ে আদালত বলেছে বিনা দোষে জাহালমের ৩ বছর কারাভোগের দায় দুদককেই নিতে হবে। রুপক অর্থে দুর্নীতিবাজদের ‘ইঁদুর’ ও দুদককে ‘বিড়াল’ এর সঙ্গে তুলনা করে আদালত বলেন, ইঁদুর ধরতে না পারলে বিড়াল থাকার দরকার নেই। কেউ চায়না দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপের দিকে যাক। তবে দুদককে পরিচ্ছন্ন (ক্লিন) হতে হবে। আদালত আরো বলেছেন, দুদক যখন জানতে পারলো জাহালম নির্দোষ, তখন তার জামিন করানো উচিত ছিল।
গতকাল বুধবার সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৩টি মামলার শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই শুনানি করেন। একইসঙ্গে এ মামলার সকল নথিপত্র আদালতে জমা দেওয়ার জন্য দুদকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। মামলার শুনানিতে দুদক আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, কেউ চায় না, দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপের দিকে যাক। তবে দুদককেও পরিচ্ছন্ন (ক্লিন) হতে হবে। এসময় দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘চ্যানেল ২৪–এ জাহালমের বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর জাহালম যে নির্দোষ সে বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। সে তদন্তে জাহালম যে নির্দোষ তা উঠে আসে। তদন্তে দেখা গেছে যে, সে অভিযুক্ত না। তাই আমরা তো বিষয়টি নিয়ে সঠিক পথেই আছি।
তখন আদালত বলেন, চ্যানেল ২৪–এ রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কী করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না, সেই বিড়াল থাকার দরকার নেই। জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আদালত বলেন, আগে অনেকেই দুর্নীতিকে ঘৃণা করতো। কিন্তু এখন এই অবস্থার অবক্ষয় হচ্ছে।
এরপর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে জাহালমকে নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। আদালত তখন বলেন, আপনারা সেসব তথ্য কী যাচাইবাছাই করবেন না? আপনারা রিপোর্টে বলছেন, জাহালম ১৮ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে। কিন্তু এখন মুখে ২টি ব্যাংককে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে চাচ্ছেন? দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে মামলার সব ফাইল আছে। একটু সময় দিন, সব আপনাদের দেবো। তখন আদালত দুদক আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ব্রাক ব্যাংকের একজনকে সাক্ষী বানালেন, কিন্তু আসামি করলেন না কেন? আপনারা জাহালমের মামলাটি তদন্ত করেছেন কিনা? দুদক আইনজীবী বলেন, করেছি। তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।
আদালত জানতে চান, জাহালমকে যে নির্দোষ তা কবে জানতে পারলেন? জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর থেকে জানার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত করার পর তার নির্দোষের বিষয়ে জানতে পারি। আদালত বলেন, তদন্ত করে যখন দেখলেন সে নির্দোষ, তখন তাকে প্রসিকিউশন ছেড়ে দিলো না কেন? তদন্তের পর আপনাদের উচিত ছিল তার জামিন দেয়া। এরপরও মামলার শুনানিকালে আদালতে ও আপনাদের কাছে সে বারবার বলেছে– আমি জাহালম, আবু সালেক না। তারপরও তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না। তাহলে তার বিরুদ্ধে কিসের ভিত্তিতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করলেন? এর দায় আপনাদের নিতে হবে।
এসময় দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদের সময় দিন। আমরা সব কাগজ-প্রমাণ আদালতে দাখিল করবো। আপনারা এখন এ মামলায় দুইটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করে নিন। তখন আদালত বলেন, আপনারা পিক অ্যান্ড চুজ করছেন। জবাবে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, কোর্ট চাইলে আমরা সবাইকে (১৮টি ব্যাংক) পক্ষভুক্ত করে নেবো। আদালত বলেন, যাকে আসামি বানানোর কথা ছিল, তাদের আপনারা সাক্ষী বানিয়েছেন। অন্য সব ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে হবে। যেখানে অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে সিন্ডিকেট করে সব নিয়ে যাচ্ছে; এটা দেখা দরকার। এরপর আদালত এ মামলার সব নথি তলব করে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Shakib Al Hasan Sharif ৭ মার্চ, ২০১৯, ২:৪২ এএম says : 0
Yes
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন