কোরআন মাজীদ মানব জীবনের স্বচ্ছতা ও চরিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে তার অনুসারীবৃন্দকে যে সমস্ত হেদায়াত বা দিক-নির্দেশনা দিয়েছে, তন্মধ্যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত হলো নিজের লেন-দেনে পুরোপুরি পবিত্র হওয়া এবং নিজের জীবিকা শুধুমাত্র বৈধ ও পবিত্র উপায়ে অর্জন করা। কোনো অবৈধ পন্থায় একটি পয়সাও উপার্জন না করা।
সূরা বাকারায় মাহে রমজানের রোজার ফরজ হওয়া এবং সে সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান বর্ণনার পর বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা একে অপরের সম্পদ পারস্পরিক অবৈধ পন্থায় খেয়ো না (বা ভোগ করো না। অর্থাৎ, হারাম ও অবৈধ উপার্জন থেকে তোমরা সতত দূরে থেকো)।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৮)।
প্রায় একই রকম শব্দে সূরা নিসায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরস্পর একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে তোমাদের মাঝে বৈধ ব্যবসায়িক লেন-দেন হলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই।’ (সূরা নিসা : আয়াত ২৯)।
এ আয়াত দু’টিতে অবৈধ জীবিকা উপার্জনের নিষিদ্ধতার জন্য এমনি ব্যাপক ও সাধারণ শিরোনাম অবলম্বন করা হয়েছে, যাতে উপার্জনের সমস্ত অবৈধ ও নাজায়েজ পন্থা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এতে করে এসব আয়াতের দ্বারা সুদ, উৎকোচ, জুয়া, ছক্কা, লটারী, ধোঁকা-প্রতারণার ব্যবসায় এবং এগুলো ছাড়াও উপার্জনের সমস্ত নাজায়েজ বা অবৈধ পন্থা তা পুরনোই হোক অথবা নবাবিষ্কৃত সবই নিষিদ্ধ ও হারাম হয়ে গেছে।
তাছাড়া সুদ ও জুয়া প্রভৃতির হারাম হওয়ার ব্যাপারটি পৃথকভাবে কোরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা বাকারার ৩৮ তম রুকুতে সুদখোরদের নিন্দা এবং তাদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখের সাথে সাথে ‘হাররমার রিবা’ বাক্যে পরিষ্কারভাবে সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতঃপর ‘ইয়ামহাকুল্লাহুর রিবা’ বাক্যে সুদের অভিশাপ ও আল্লাহর দৃষ্টিরত সুদের অভিশপ্ততা ও প্রত্যাখ্যাত তাকে অধিকতর ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তারপর যারা এসব কিছু শোনার পরও সুদী কারবার পরিহার করে না, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘ফা’জানু বিহারবি মিনাল্লাহি ও রাসুলিহি’ অর্থাৎ, এখন তোমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, তোমাদের বিরুদ্ধে এখন আল্লাহ ও রাসূলের যুদ্ধ। এখন থেকে তোমরা আল্লাহ রাসূলের শত্রু আর আল্লাহ ও রাসূল তোমাদের শত্রু। (নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ)।
উপার্জন ও খাবার-দাবারের ব্যাপারে মদ ও জুয়া প্রভৃতি যেসব অপবিত্রতা আরবদের জীবনে বলতে গেলে মূল বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে সূরা মায়েদায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, এই যে মদ ও জুয়া, এই যে স্থানসমূহ (অর্থাৎ, মিথ্যা উপাস্যদের আখড়া ও তার নৈবেদ্য) এবং এই যে পাশা (অর্থাৎ, পাশার মাধ্যমে লটারী, যা জুয়ারই একটি বিশেষ রূপ) সবই অপবিত্র শয়তানী কর্মকান্ড। এসব থেকে বেঁচে থাক। তাহলেই তোমরা কল্যাণ আশা করতে পার।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৯০)।
মাপজোখ হ্রাসবৃদ্ধি বহু পুরনো ও ব্যাপক ভ্রষ্টাচার। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যখন তোমাদেরকে কোনো কিছু পরিমাপ করে দিতে হয়, তখন পাত্র পুরোপুরি ভরে দেবে। আর (যখন কাউকে মেপে কিছু দিতে হবে, তখন) সঠিক ডাটে ওজন করবে (পাল্লায় বা ডাটে কোনো রকম হেরফের করবে না)।’ (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত ৩৫)। সূরা আর রাহমানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ন্যায়সঙ্গতভাবে সঠিক ওজন করো। ওজনে কমতি করো না।’ (সুরা আর রাহমান : আয়াত ৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন