প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা রসুনে উপাদান বিদ্যমান থাকে-আর্দ্রতা: ৬২.০০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড : ২০.৮০ গ্রাম, প্রোটিন : ৬.৩০ গ্রাম, আয়রন : ১.২০ মিলিগ্রাম, কপার : ০.৬৩ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ : ০.৮৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস : ৩১০.০০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম : ৩০.০০ মিলিগ্রাম, জিংক : ১.৯৩ মিলিগ্রাম, রিবোফেবিন : ০.২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিস সি : ১৩.০০ মিলিগ্রাম। চলুন তাহলে জেনে নেই রসুনের কিছু স্বাস্থ্যকর উপকারীতা সম্পর্কে- বিভিন্ন রোগে প্রয়োগ-আঘাত এবং বাতের যন্ত্রণায় : এ দুই অবস্থায় রসুনের তেল মালিশ এবং প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অনেক সময় বাতও সম্পূর্ণ সেরে যায়।
রক্তের চাপ কম হলে : ভাতের পাতে ২/৩টি রসুনের কোয়া চিবিয়ে সাত দিন মাত্র খেলে রক্তের চাপ স্বাভাবিক হয়। তবে সাত দিন পর রক্তের চাপ পরীক্ষা করা দরকার। এরপর একদিন পরপর দু’টি রসুনের কোয়া ভাত অথবা মুড়ির সঙ্গে চিবিয়ে খেতে হবে, এরপরও উপকার না হলে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।
সর্দি-কাশি : হঠাৎ ঠান্ডা লেগে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি-কাশি হলে রসুনের সিরাপ একটি অতি মূল্যবান ঔষুধ। রসুনের সিরাপ তৈরির নিয়ম : রসুনের সিরাপ তৈরি করা খুবই সহজ। একটি স্টীলের কড়াইতে ৫০০ গ্রাম চিনি এবং তার সঙ্গে এক লিটার পানি মিশিয়ে চিনির রস তৈরি করতে হবে। রস কিছুটা গাঢ় হলে তাতে ৫৫ মিলিলিটার অ্যাসেটিক অ্যাসিড এবং শেষে ৫৫ মিলিলিটার রসুনের রস মেশাতে হবে। এর পর ৪/৫ মিনিট পাত্রটি উনানে রেখে তারপর আঁচ থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। দিনে ৩ বার ২ চামচ করে ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের রোগীকে খাওয়ানো চলবে । দশ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এ সিরাপ না দেয়াই ভালো।
ফোঁড়ায় : কোন অঙ্গে ফোঁড়া উঠলে কাঁচা রসুনের ক্বাথ দিয়ে গরম সেকের পর যেখানটায় মুখ হবে সেটুকু খোলা রেখে রসুন রসে ভেজানো তুলো চারদিকে লাগিয়ে কাপড় টুকরো দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। সকাল-সন্ধ্যায় কাপড় টুকরো পাল্টে দিতে হবে। দ্বিতীয় কাজ হলো চায়ের চামচের আধা চামচ রসুনের রসে ৮/১০ ফোঁড়া মধু মিশিয়ে দিনে একবার করে খেতে হবে। ৩/৪ দিনের মধ্যে হয় ফোঁড়া ফেটে যাবে অথবা বসে যাবে। ফোঁড়া ফেটে গেলে রসুনের ক্বাথে ধুয়ে দিয়ে কমপ্রেস দেয়া দরকার। যে পর্যন্ত না ঘা শুকিয়ে যায় ততদিন পর্যন্ত ক্ষতস্থানে দিনে দু’বার করে সামান্য গরম অবস্থায় রসুন তেল দিয়ে যেতে হবে। এতেই ঘা শুকিয়ে যাবে।
ক্রিমি হলে : চা চামচের এক চামচ রসুনের রস, সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে সকালে খালিপেটে তিন দিন খেলে ক্রিমির উৎপাত কমে যাবে।
শরীরের পুষ্টি ও হজমশক্তি : রসুনের ট্যাবলেট এ দুই ক্ষেত্রে ভাল কাজ দেয়। তিনটি রসুনের কোয়াকে খোসা ছাড়িয়ে পানি ছাড়া শিলে বেটে নিতে হবে। এরপর পাতিলেবুর রস মিশিয়ে গুলি বানিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। দিনে একটি মাত্র ট্যাবলেট বা গুলি খেতে হবে।
গলার ব্যথা, ঘা এবং টনসিলে : যে ক’টি রোগের নাম এখানে বলা হলো তার সবগুলো রসুন পানির ভাপ নিয়ে সেরে যায়। চায়ের কেটলীতে রসুন থেঁতো করে ৫০ গ্রাম পরিমাণ রস ১ লিটার পানি দিয়ে চুলায় বসাতে হবে। পানি ফুটতে শুরু করলে কেটলীর নল দিয়ে যে বাষ্প বের হবে, তা গলার মধ্যে নিলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়। তবে খুব সাবধানে এ বাষ্প নেয়া দরকার। কারণ বেশি গরম বাষ্প চোখে অথবা মুখে লেগে গেলে পুড়ে যাবার ভয় থাকে। রসুন কাটার সময়, থেঁতো করার সময় এবং রান্নার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এতে কিছু নতুন উপকারী পদার্থের সৃষ্টি হয়। প্রফেসর এরিক ব্লক মনে করেন, রসুন থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায় রসুনকে তেলের সাথে কুচি করে কেটে খেলে। বাজারে ক্যাপসুল আকারে রসুনের নির্যাস পাওয়া যায় তাও বেশ উপকারী।
সতর্কতা : স্বাস্থ্য সহায়ক হিসেবে কি পরিমাণ রসুন খাওয়া উচিত তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদগণ মনে করেন যে, দৈনিক রসুনের ৩/৪ টি কোয়া খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। এর বেশি খাওয়া ঠিক নয়। প্রখ্যাত সালফার রসায়ন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এরিক ব্লকের মতে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া ঠিক নয়। কারণ খালি পেটে কাঁচা রসুন অন্ত্রে জ্বালাপোড়ার উদ্রেক করতে পারে। অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না যা সার্জারীর জন্য বিপদজনক, গর্ভাবস্থায় ও দুগ্ধদানকারী মাতা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কাঁচা রসুন খাবেন না।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন