আমরা প্রতিদিন রান্নায় অনেক জাতের মসলা ব্যবহার করি। রান্নায় খাবারকে সুস্বাদু, সুঘ্রাণ, দৃষ্টি নন্দন করতে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। রসুন শুধু মসলাই নয় এর ঔষধী গুনও অনেক। প্রাচীন কাল থেকেই রসুন মসলা এবং ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ভারত সহ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে রসুনের চাষ হয়।
রস ছয় প্রকার। এই ছয় প্রকার রসের মধ্যে রসুনে পাঁচটিই বিদ্যমান তাই এর নামকরন করা হয়েছে রস+উণ=রসুন। রসুনের কন্দে কটু, পাতায় তিতা, কলিতে কষা, তার আগায় লবণ এবং বীজে মধু স্বাদ যুক্ত রস রয়েছে। রসুনে অ¤ল স্বাদ যুক্ত রস নেই। গাছের মধ্যে নিম গাছের সব অংশ যেমন ঔষধী গুন সম্পন্ন তেমনি মসলার মধ্যে রসুন গাছের সব অংশই ঔষধী এবং আহার্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। রসুন সূক্ষ¯্রােতগামী তাই পারদের মত সারা শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে বলেই গায়ে গন্ধ বের হয়। রসুন পুরুষের পক্ষে শুক্র বর্ধক, পৌরুষ প্রকৃতির ধারক, নারীর ক্ষেত্রে সন্তানপ্রদ ও আয়ুকর, যুবতীর অঙ্গসৌষ্টবের সমতা রক্ষক এবং কিশোরের পক্ষে শরীর ও মনের সার্বিক উন্নতি সাধক।
প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে শক্তি ১৪৯ কিঃক্যালরি, শর্করা ৩৩.০৬ গ্রাম, চিনি ১ গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ২.১০ গ্রাম, ¯েœহ পদার্থ ০.৫০ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৩৬ গ্রাম, থায়ামিন (বি১) ০.২০ মিঃ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.১১ মিঃ গ্রাম, নায়াসেন (বি৪) ০.৭০ মিঃ গ্রাম, প্যানটোথেনিক এ্যাসিড (বি৫) ০.৫৯ মিঃ গ্রাম, ভিটামিন বি৬ ১.২৩ মিঃ গ্রাম, ফোলেট (বি৯) ৩ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৩১.২০ মিঃ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮১ মিঃ গ্রাম, লোহা ১.৭০ মিঃ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৫ মিঃ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ১.৬৭ মিঃ গ্রাম, ফসফরাস ১৫৩ মিঃ গ্রাম, পটাাশিয়াম ৪০১ মিঃ গ্রাম, সোডিয়াম ১৭ মিঃ গ্রাম, দ¯তা ১.১৬ মিঃ গ্রাম এবং সেলিনিয়াম ১৪.২০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে।
আমরা এক নজরে রসুনের ভেষজ ব্যবহার জেনে নেই এবং মহান রবের প্রশংসা করি:
১। ঘর জীবানুমুক্ত রাখতে: একটি রসুন থেতো করে ঘরে রেখে দিলে ঘর জীবানুমুক্ত থাকে।
২। স্বল্প মেধায়, ভুলে যাওয়া রোগে, কৃমি হলে, রাতকানা রোগে, শুক্র তারল্যে, পাথুরী রোগে, শরীরে জড়তা দেখা দিলে: এক বা দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে একটু গরম দুধ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। পুরনো জ¦র: জ¦র কোন ভাবেই সারে না। বাড়ে ও কমে একটু থেকেই যায়। ৫-৭ ফোঁটা রসুনের রসের সাথে আধা কাপ ঘাওয়া ঘি মিশিয়ে খেলে
২-৪ দিনের মধ্যেই জ¦র চলে যাবে।
৪। দাঁদ: আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন গোসলের আগে ও রাতে ঘুমানোর আগে ৫ মিনিট ঘষলে দাঁদ ভাল হয়ে যায়।
৫। চুলকানি: দুপুরে গোসলের আগে রসুন ও হলুদ বেটে মিশ্রণ করে শরীরে মাখলে চুলকানি ভাল হয়ে যায়।
৬। হৃদরোগে: রসুন আকৃতি ও প্রকৃতিগতভাবে আমাদের হৃদপিন্ডের মত। বর্তমান কালে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগন রসুনকে হার্টের মহৌষধ বলে থাকেন। রসুনে বিদ্যমান এলিসিন নামক সালফার যুক্ত জৈব যৌগ হৃদপিন্ড ও রক্তনালীর প্রতিবন্ধকতা অপসারণ ও প্রতিহত করে এবং হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে। হৃদরোগ প্রতিরোধে ১-৩ কোয়া রসুন ২৫০ মিঃলিঃ পানিতে রেখে সেই পানি ৮ ঘন্টা পর পর খেতে হবে।
৭। চুল পাকা: রসুনের রস নারকেল, সরিষা বা তিল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় মাখলে চুল পাকা বন্ধ হয়।
৮। টাক পড়া: রসুন বেটে মাথায় মাখলে টাক পড়া বন্ধ হয়।
৯। আমাশয়: আমাশয় হলে সকাল বিকাল এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১০। যৌবন রক্ষায়: রসুন যৌবন রক্ষায় এমনকি ঢলেপড়া যৌবনেও খুব উপকারী। ১-২ চামচ কাঁচা আমলকির রসের সাথে ৩-৪ কোয়া রসুন বাটা খেলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। ঘাওয়া ঘিয়ে রসুনের কোয়া ভেজে মাখন মাখিয়ে খেলে ঢলেপড়া যৌবন ফিরে পাওয়া যায়। এটি খাওয়ার পর গরম পানি খাওয়া উত্তম।
১১। গ্যাস্ট্রাইটিস ও আলসার: গ্যাস্ট্রাইটিস ও আলসার নিরাময়ে রসুন কার্যকর। যারা প্রতিদিন দেড় থেকে ২ কোয়া রসুন খান তাদের পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৪৭% কমে যায়। তাছাড়া রসুন ক্যান্সার কোষ সমূহের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি রোধ করে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রনেও সহায়তা করে।
১২। অন্ডকোষের রোগে: অন্ডকোষের অবস্থা ও প্রজনন স্বাস্থ্য ভাল রাখতে রসুনের ভূমিকা অনেক। প্রতিদিন ১-৩ কোয়া রসুন সেব্য।
১৩। হাত পায়ে খিল ধরা: হঠাৎ কারো হাত পায়ে খিল ধরলে সরিষার তেলে রসুন সিদ্ধ করে সেই তেল মালিশ করলে খিল ধরা ছেড়ে দেয়।
১৪। বাতের যন্ত্রণা: সরিষার তেলে রসুন সিদ্ধ করে সেই তেল মালিশ করলে বাতের যন্ত্রণা কমে যায়।
১৫। ডায়াবেটিস: রসুনের রস গ্লুকোজ সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করে এবং সেরাম ইনসুলিন বৃদ্ধি করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে রসুন খাওয়ালে উপকার হয়।
১৬। বিষম জ¦র: তিল তেল সহ রসুন বাটা খাওয়ার আগে খাওয়ালে বিষম জ¦র ভাল হয় এবং মেধা বৃদ্ধি পায়। আবার ঘি সহ রসুন বাটা খাওয়ালেও বিষম জ¦র ভাল হয়।
রসুন উপকারী হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে রসুন না খাওয়াও ভাল। যাদের লিভারের রোগ রয়েছে। রসুন লিভারের রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা হোমিও প্যাথিক ঔষধ সেবন করেন তাদের রসুন না খাওয়াই ভাল। কারন রসুন হোমিও ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। নি¤œ রক্তচাপে রসুন খেলে আরো রক্তচাপ নি¤œ হয়ে যেতে পারে। যাদের রক্ত শূন্যতা রোগ রয়েছে তাদেরও রসুন এড়িয়ে চলা উচিত। রসুন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। বদহজমেও রসুন খাওয়া বাদ দিন। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রসুন না খাওয়া উত্তম।
ম্যানেজার অপারেশন্স
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ,
বড়লেখা শাখা, মৌলভীবাজার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন