শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনবল সঙ্কটে রেল

নতুন ট্রেন পরিচালনা ও সেবার মান নিয়ে জটিলতা , পর্যায়ক্রমে সব শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হবে : রেলমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জনবল সঙ্কটে ভুগছে রেল। জনবলের অভাবে রেলের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেবার মানও রক্ষা করতে পারছে না সংস্থাটি। তার উপর এ মাসেই আসছে নতুন কোচ। সেগুলো দিয়ে নতুন ট্রেন পরিচালনা করতে গেলেও জনবল দরকার। সব মিলে জনবল সঙ্কট না কাটানো পর্যন্ত কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে জনবল সঙ্কটে রেলের চার অঞ্চলে বিভক্তি মাঝপথে আটকে গেছে। রেলওয়ের দুটি অঞ্চল ও চারটি পরিচালন বিভাগকে ভেঙে চারটি অঞ্চল ও আটটি পরিচালন বিভাগ করা হবে। এগুলো পরিচালনার জন্য বিদ্যমান শূন্য পদ পূরণ করার পরও আরও ১৭ হাজার ৩১২ জন জনবল দরকার। এমতবস্থায় রেলওয়েকে চার অঞ্চলে বিভক্ত করা নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রেলের পরিচালন বিভাগ উন্নীতকরণ নির্ভর করছে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন রেলপথ চালুর উপর। পদ্মা সেতুর সাথে রেল সংযোগ চালুর পর রেলের পরিসর বাড়বে। তখন কাজের সুবিধার্থে রেলের আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস বাড়ানো হবে। জনবল সঙ্কট প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নতুন জনবল চেয়েছি। নতুন কোচ আসছে। সেগুলো দিয়ে নতুন ট্রেন চালাতে গেলে জনবল লাগবে। জনবল নিয়োগ সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, ৯৮টি পদের বিপরীতে এক লাখের উপর দরখাস্ত জমা পড়েছে। এগুলো বাছাই করার জন্য অনেক সময় দরকার। নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, পর্যায়ক্রমে সব শুন্যপদে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। উচ্চ আদালতে মামলাজনিত সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা ওয়েম্যান পদে শিগগিরি নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়েতে সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। যা জনবলের প্রায় ৩৯ শতাংশ। উচ্চ আদালতে মামলার কারণে গত কয়েক বছরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমনকি লিখিত-মৌখিক পরীক্ষার পরেও বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দিতে পারেনি সংস্থাটি। এর মধ্যে অবসরে গেছেন অনেক কর্মী। বেড়েছে ট্রেন, স্টেশনের সংখ্যা এবং রেলপথের দৈর্ঘ্য। জনবল সংকটে সেবার মান নিয়ে জটিলতার মুখে পড়েছে রেলওয়ে।
জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৪০ হাজার ২৭৫টি। এর বিপরীতে কর্মরত আছে ২৪ হাজার ৬২২ জন। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৬৫৩টি পদ শূন্য। তবে শূন্যপদ পূরণে মাত্র দুই হাজার ৪৯৩ জনের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে দেয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পদ ধরলে শূন্যপদ পূরণে এই সংখ্যা আরও ৫-৬শ বাড়তে পারে।
বর্তমানে রেলওয়েতে প্রথম শ্রেণির পদ রয়েছে ৫৬৩টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৪০৮ জন। অর্থাৎ ১৫৫টি পদ শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ৬৯৮টি বা ৪৪ শতাংশ। বর্তমানে এক হাজার ৫৮৭টি দ্বিতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৮৯ জন।
বর্তমানে রেলে সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ রয়েছে তৃতীয় শ্রেণিতে। এ শ্রেণির অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১ হাজার ৬৪৪টি। এর বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১২ হাজার ৬০৩ জন। শূন্য রয়েছে ৯ হাজার ৪১টি পদ। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৯টি। চতুর্থ শ্রেণিতে পদ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৮১টি। কর্মরত রয়েছেন ১০ হাজার ৭২২ জন।
জনবল সংকটের কারণে সারা দেশে রেলের ৪৩৭টি স্টেশনের মধ্যে ১৩৯টি এখনও বন্ধ। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ৫৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৮৩টি। এছাড়া সারা দেশে রেলের এক হাজার ৪০২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯৪৬টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে গেটকিপারবিহীন অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে ৪৩৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯৬৮টি।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলাজনিত জটিলতায় দীর্ঘদিন রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এর মধ্যে অনেক কর্মী অবসরে গেছেন। দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় রেলে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যদিও ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ১১ হাজার ৭৯০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ট্রেন পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে যেত।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করার নির্দেশ দেন। এজন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়েকে চার অঞ্চলে ভাগ করে পরিচালনার জন্য ওই পরামর্শক ৫৭ হাজার ৫৮৭ জনের সাংগঠনিক কাঠামোর প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে।
অন্যদিকে, রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের বিদ্যমান জনবলকে ৫০ হাজার ২৭৫ জনে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে বেশকিছু স্টেশন বন্ধ করে দেয়া। ছাঁটাই করা হয় জনবল। ওই ছাঁটাইয়ের পর থেকেই গেটকিপার ছাড়াই লেভেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে ট্রেন।
জানা গেছে, রেলওয়ের চার অঞ্চলের মধ্যে বর্তমান পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের হেড কোয়ার্টার চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেই থাকবে। তবে পূর্বাঞ্চলের অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ হবে। পশ্চিমাঞ্চলের অধীনে থাকবে পাকশী ও লালমনিরহাট। এর বাইরে ময়মনসিংহ ও ঢাকা পরিচালন বিভাগকে নিয়ে গঠন করা হবে উত্তরাঞ্চল, যার হেডকোয়ার্টার হবে ময়মনসিংহ। রাজবাড়ী ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠন করা হবে দক্ষিণাঞ্চল, যার হেডকোয়ার্টার হবে ফরিদপুরে।
রেলের অপারেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক বিভাগে বর্তমানে লোকবলের চরম সংকট রয়েছে। নতুন ট্রেন পরিচালনার জন্য তা অপারেশন বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা হয়। জনবল সংকটে তখন অপারেশন বিভাগকে অনেক কষ্ট করে কাজ করতে হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, অপারেশনাল কাজ চালাতে গিয়ে কোনো কোনো স্টেশনে তিন শিফটে কাজ করতে হচ্ছে। তাই জনবল বৃদ্ধি করা জরুরি। এর মধ্যে নতুন অঞ্চল যুক্ত হলে এ চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে, রেলওয়েকে চার অঞ্চলে বিভক্ত হলে ভূসম্পত্তি বিভাগ, স্টোর বিভাগ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগে ব্যাপক চাপ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ক্ষেত্রেও নতুন জনবল ছাড়া চার অঞ্চলের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন