শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক-২

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৭ মার্চ, ২০১৯

আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের মাধ্যমে গত নিবন্ধের লেখা শেষ করা হয়েছিল। সেই হাদিসটি দিয়েই আজ লেখা শুরা করা হলো। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সঙ্গে ঝুলে থেকে বলতে থাকে, যে আমাকে জুড়ে রাখল, আল্লাহ তাকে জুড়ে রাখুন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল, আল্লাহও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিন।-সহীহ মুসলিম
এখানে জুড়ে থাকা ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ, আল্লাহর দয়া, ভালোবাসা ও ক্ষমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ও না থাকা। আল্লাহ পানাহ দিন। তবে হ্যাঁ, অনেক সময় এমনও হয় বা হতে পারে যে, আমরা আমাদের দিক থেকে আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট আছি, কিন্তু হয়তো কোনো আত্মীয় এতৎসত্তে¡ও আমাদের থেকে দূরে থাকছে। অবহেলা, অবজ্ঞা করছে বা দুর্ব্যবহার করছে। এমতাবস্থায় কী করে সম্ভব তার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনকে রক্ষা করা?
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকেই বর্ণিত আরেকটি হাদীস শরীফে এ বিষয়টিও পরিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার নিকটাত্মীয়রা এমন যে, আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। আমি তাদের প্রতি দয়া-মায়া পোষণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীলতা দেখাই, কিন্তু তারা আমার সাথে মূর্খতা ও বর্বরতা দেখায়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে তুমি যেন তাদের গরম অঙ্গার খাওয়াচ্ছ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সঙ্গে সর্বদা তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবেন; যতদিন তুমি তোমার এ অবস্থায় অটল থাকবে।-সহীহ মুসলিম
এ হাদীসের প্রথম অংশে একজন লোক আত্মীয়দের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবস্থা বলতে গিয়ে যখন এ কথাই প্রমাণ করল যে, সে তার তরফ থেকে একতরফা সুসম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট থাকা সত্তে¡ও তার কিছু আত্মীয় তা চাচ্ছে না। বরং তার প্রতিটি ভালো আচরণের বিপরীতে মন্দ আচরণ ফিরিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি জটিল বটে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা শুনে জবাবে প্রথমে তার এই বর্ণনা সঠিক ও বাস্তব হওয়াকে শর্ত করেছেন।
তারপর বলেছেন, যদি এমনটিই হয়ে থাকে তবে তাদের বিরক্তি ও অনিচ্ছা সত্তে¡ও তোমার একতরফা এই ভদ্রতা ও অনুগ্রহ তাদের কাছে গরম অঙ্গারের মতোই অসহ্য লাগছে। অথবা তুমি তাদের গরম অঙ্গার খাওয়াচ্ছ- বাক্যটির দ্বারা উদ্দেশ্য এমনটিও হতে পারে যে, তোমার ভালো ব্যবহারের বিনিময়ে মন্দ ব্যবহারের কারণে তাদের জন্য পরবর্তী শাস্তিস্বরূপ গরম অঙ্গার রয়েছে, যা তাদের গিলে খেতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Imam Uddin Chowdhury ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং ঐ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার জন্য আবশ্যক। যে ব্যাপারে মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) আমাদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
ফজলুল হক ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গোনাহের কাজ। এর ফলে পারস্পরিক বন্ধন নষ্ট হয়, বংশীয় সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হয়, শত্রুতা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়, বিচ্ছিন্নতা ও একে অপরকে পরিত্যাগ করা অবধারিত হয়। এটা পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, হৃদ্যতা ও ভালোবাসা দূর করে, অভিশাপ ও শাস্তি ত্বরান্বিত করে, জান্নাতে প্রবেশের পথকে বাধাগ্রস্ত করে, হীনতা ও লাঞ্ছনা আবশ্যক করে। কেননা মানুষ যার নিকট থেকে ভালো ব্যবহার, কল্যাণ ও সুসম্পর্ক কামনা করে, তার পক্ষ থেকে কোনো বিপদ আসলে সেটা অধিক পীড়াদায়ক ও অসহনীয় হয়। এতদ্ব্যতীত পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের বর্ণনামতে জ্ঞাতি সম্পর্ক ছিন্ন করার কবিরা গুনাহ।
Total Reply(0)
মেহেদি হাসান ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আমরা অনেকেই সাধারণ বিষয় নিয়েও ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখি। এমনকি অনেকে এভাবে রাগ করে সারাজীবন দেখা-সাক্ষাৎ কথাবার্তা বন্ধ রাখে। অথচ এ ব্যাপারে (স:) স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা জায়েয নেই’। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৬২৯৫)।
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীতার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহতায়ালা অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন।’ -সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩
Total Reply(0)
খাইরুল ইসলাম ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
আজ বড়ই পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজের অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীতা-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলনের সেতুবন্ধকে ছিন্ন করে চলছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমার আত্মীয়রাই তো সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন না। আমি একাই এর জন্য দায়ী নই। কিন্তু এ বক্তব্য তাদের কোনো উপকারে আসবে না। কারণ যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে, শুধু তার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে- এই যদি নীতি হয় তাহলে তা আল্লাহর জন্য হলো না, বরং তা হলো বদলা। হজরত যুবাইর বিন মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -বুখারি ও মুসলিম
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নেক আমল। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে, আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে; আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবো।’ –সহিহ বোখারি : ৫৯৮৭
Total Reply(0)
গোলাম মোর্শেদ ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মানবিক শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন