আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি গুণবাচক নাম হলো ‘রাহিম’, যার অর্থ হলো করুণাময়। কোরআন পাকে ওই করুণাময়তার অনেক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন- কোরআন মাজিদে উল্লেখ আছে, ‘খায়রুর রাহিমীন’। অর্থাৎ সর্বোত্তম করুণানিধান। আরো লক্ষ করা যায় ‘আরহামুর রাহিমীন’। অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা বেশি কৃপানিধান। তাই তো দুনিয়ায় পাপী-তাপীগণ যখন তার নাফরমানি করতে থাকে, তারপরও তাদের ওপর তিনি শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেন না। বরং অবকাশ দিয়ে রেখেছেন তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের। পার্থিব জীবন শেষ হওয়ার আগে আগেই যদি তারা তাদের কৃত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজের আচরণ সংশোধন করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে সে তার আজাব থেকে অব্যাহতি পেয়ে যেতে পারে। সেজন্যই তিনি ধরপাকড় এবং প্রতিদান ও শাস্তির জন্য এ পার্থিব জীবনাবসানের পর একটি সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন।
এ বিষয়টিই সূরা আনয়ামে এভাবে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ নিজের জন্য রহমত ও করুণাকে অবধারিত করে রেখেছেন। (সেজন্য তিনি অপরাধীদেরকে এখানে অর্থাৎ, এ পার্থিব জীবনে শাস্তি দান করেন না; বরং তিনি সবাইকে গোটা এ জীবনের অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যাতে যার ইচ্ছা ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে আজাব থেকে অব্যাহতি লাভ করতে পারে।) তিনি এ-ও নির্ধারণ করে রেখেছেন, (বিচার ও প্রতিদানের জন্য) তোমাদের সবাইকে কিয়ামতের দিন সমবেত করবেন (এবং সেদিনই প্রত্যেকে প্রত্যেকের কৃতকর্মের বদলা পেয়ে যাবে। এ বিষয়টি অতি নিশ্চিত ও অটল বিষয়)। তাতে কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই।’ (সূরা আনয়াম : আয়াত ১২)।
সুবহানাল্লাহ। এ আয়াতের প্রথম ‘কাতাবা আলা নাফসিহির রাহমাহ’ (আল্লাহ তায়ালা রহমতকে নিজের ওপর আবশ্যিকভাবে নির্ধারণ করে রেখেছেন) আমাদের বান্দাদের জন্য কতই না আশ্বাস ও আশার বাণী বহন করছে। এমন রহমতের অধিকারী পালনকর্তার প্রতি নিরাশ হওয়া কুফর না হয়ে আর কী হতে পারে?
তারপর এ সূরাতেই চতুর্থ রুকুর পর মহানবী সা.কে লক্ষ্য করে কেমন মমতার সুরে বলা হয়েছে, ‘আর যখন আপনার কাছে আমার সেসব বান্দা আসে, যারা আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস পোষণ করে, তখন হে নবী, আপনি (প্রীতি ও ভালোবাসার সাথে তাদের স্বাগত জানান এবং) বলুন, তোমাদের প্রতি সালাম। (আর তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে,) তোমাদের পরওয়ারদেগার নিজের ওপর রহমত ও মেহেরবানিকে অপরিহার্য করে নিয়েছেন। (অতএব, তোমাদের আশ্বস্ত থাকা উচিত যে,) তোমাদের মধ্যে যে লোক অজ্ঞতাবশত কোনো মন্দকাজ করার পর তা থেকে তাওবা করে নেবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমাদের পালনকর্তা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, একান্ত করুণাময়।’ (সূরা আনয়াম : আয়াত ৫৪)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন